somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উত্থান

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক

ফোনটা বাজতেই কুতুব ধড়ফড় করে উঠে পড়ে। দরজা খুলে বারান্দায় চলে যায়। আধঘন্টার বেশি হলো তবু তার কথা শেষ হয় না। প্রথমে আস্তে আস্তে বললেও ধীরে ধীরে স্কেল বাড়ছে। মরিয়ম এখন বিছানা থেকে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। কিন্তু তার এসব ভাল লাগে না। সে অবাক হয়ে ভাবে কি লোকটা কি হয়ে যাচ্ছে। দিনে দিনে তার পরিবর্তন মরিয়মের কাছে তাকে অপরিচিত করে তুলছে। অথচ কি নিরীহ স্বভাবেরই না ছিল মানুষটা। মরিয়মের চোখে এখন ও স্পষ্ট ভাসে সেই কান্তিময় মুখমন্ডল। কুতুব তখন সবেমাত্র মাওলানা পাশ করে বেরিয়েছে। আর তার সবেমাত্র কৈশোর পার হয়েছে। বিয়ের আগে শুনেছে খুব ভাল বংশের খুবই ভাল ছেলে। আর কিছুই সে জানতো না। বিয়ের রাতেই প্রথম দেখা। মরিয়ম সত্যিই তার চেহারা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু লোকটা তার চোখের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই পারলো না। কিছুক্ষন ঘরে পায়চারি করলো। তারপর হঠাৎ বাতি নিভিয়ে মরিয়মের পাশে এসে শুয়ে পড়লো। মরিয়ম দাদী নানীদের কাছে বিয়ে বিষয়ক অনেক কিছুই শুনেছে। তাই সে একটা অজানা শিহরণ- একটা আশংকা নিয়ে অপেক্ষা করছিলো। কিন্তু অপর পক্ষ থেকে সেরকম কিছু না দেখে সে নিশ্চিন্ত হয়ে চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করে। হঠাৎ পাশে থেকে গলা খাকরানি শুনে। কিন্তু আর কিছু না। তারপর আবার সব চুপচাপ। সে আবার চোখ বন্ধ করে। হয়তো বা সে ঘুমিয়ে ই পড়েছিলো। হঠাৎ তার শরীরে দানবীয় থাবা টের পায়। মনে হয় কোন দানব চেটেপুটে খাচ্ছে তার শরীর। তারপর কিছু বুঝে উঠার আগেই তার শরীর ছিন্নবিন্ন করে দেয় কোন এক দানব। সে মুহূর্তেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আর এদিকে সদ্য কৈশোর পার হওয়া অনাঘ্রাতা শরীর পেয়ে কুতুব পুরোপুরি পাগল হয়ে যায়। প্রতিদিনই চলে তার এমন তান্ডব। মরিয়ম ধাতস্থ হতে কিছুটা সময় নেয়। তারপর থেকে তার কাছে এটা ই জীবন মনে হয়। আর কুতুব সারাদিন সকল কাজের ফাঁকে যেন রাতের সেই মোক্ষম সময়টার অপেক্ষাতেই থাকে। মরিয়ম ও সেটাকে তার সৌভাগ্য ভাবে। এভাবে তাদের দিন বেশ ভালই কাটছিলো। কুতুব পড়াশুনা শেষ করে পারিবারিক ব্যবসা দেখাশুনা করছে। তেমন একটা ব্যস্ততা নেই। সময়মত খাওয়া- সময়মত শোওয়া। সবই ঠিক ছিল। হঠাৎ করেই সব কেমন যেন বদলে গেলো। সেই নিরীহ চুপচাপ লোকটাই কেমন ব্যস্ত হয়ে পড়লো। মরিয়ম সারাদিন ঘরেই থাকে। তাই সে হয়তো অনেক কিছুই বোঝে না। কিন্তু কিছু একটা টের পায়। তার শরীর ও এখন আর আগের মত কুতুবকে টানে না। আগে যেটা প্রতিদিন কয়েকবার ছিল সেটা এখন মাসে দুই মাসে একবার। তা ও মরিয়মের আগ্রহেই। এই আজকেই যেমন কোনমতে একবার চড়েই নেমে গেলো। তারপর ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েলো। ভাবতেই মরিয়মের বুক ভেঙ্গে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। ইদানিং তাদের দু'একজন মহিলা আত্মীয় স্বজনেরা তাকে বলছে যে কুতুব নাকি ইদানিং কোন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ের দিকে ঝুকে পড়েছে। সময়ে অনেক কিছুই বদলায়। কিন্তু কিছুতেই তা বিশ্বাস করতে পারে না। কেননা এই লোকটাই তো তাকে চুপি চুপি কত মাসলাহ শুনেয়েছে। সেই তো বলেছে- ব্যাভিচারিনির শেষ বিচারের দিন কি পরিণতি হবে কিংবা ব্যাভিচারীর। বিবাহিতা স্ত্রী পর পুরুষের দিকে তাকালে কি হবে কিংবা বিবাহিত পুরুষ পরস্ত্রীর দিকে তাকালে। তাই সে কুতুব সম্পর্কে খারাপ কিছু ভাবতে পারে না। চায় ও না। এবং এসব নিয়ে সে তেমন একটা ভাবে ও না। সে কান খাড়া করে কুতুবের কথা শোনার চেষ্টা করছে। হঠাৎ পাশে থাকা দেড় বছরের ছেলে সাঈদ এর ঘুম ভেঙ্গে যায়। সে শব্দ শুনে কান্না করে উঠে। মরিয়ম পাশ ফিরে তার মুখে দুধ দেয়।
কথা শেষ করে কুতুব রূমে ঢুকে। রূমের বাতি জ্বালায়। গ্লাস পানি ঢালে। ঢকঢক করে পানি খায়। বসে ও না। দাঁড়িয়ে পানি খায়। মরিয়ম শব্দ করে- পানিটা বসেতো খাও। কিন্তু কুতুব শোনে না। সে দাঁড়িয়েই পানি পুরোটা শেষ করে। ভুল যায় শৈশবে বাপের দেয়া শিক্ষা যে, শয়তান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পানি খায়। সে ঘরের বাতি নিভিয়ে দেয়। ঘরজুড়ে পায়চারি করে। একবার এসে উঁকি দেয়। বুঝতে চেষ্টা করে সাঈদ ঘুমিয়েছে কিনা। তারপর আবার ঘরজুড়ে পায়চারি করে। ভাবে সবকিছু তো ঠিক ঠাক মতই চলছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই সব গোলমাল লাগছে। ভাবে আর কিছুদিন যদি সময় পায় তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু মাঝপথে এখন সব ভন্ডুল হলে তাকে এই ক্লুগার গাড়ি, লাক্সারী অ্যাপার্টমেন্টের সুখ ছেড়ে আবার গ্রামে গিয়ে সেই বাপের ব্যবসায় বসতে হবে। অথবা মসজিদে ইমামতি করতে হবে। কিন্তু এখন সবকিছু যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত সে সুযোগটাও হয়তো সে পাবে না। সে ভাবে আর অস্থিরভাবে ঘরময় পায়চারি করে। আবার এসে বিছানার পাশে বসে। দেখে ছেলে ঘুমিয়ে পড়েছে। মরিয়মেরও চোখ বন্ধ। ঘুমিয়ে পড়েছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। তার আর ভাবতে ইচ্ছে করছে না। সে মরিয়মের পাশে শুয়ে পড়ে। তাকে টেনে বুকের কাছে নিয়ে আসে। তার শরীর আবার জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু মরিয়মের মোটেই ভাল লাগে না। তার মনটা আজ ভীষণ ভাবে বিষিয়ে উঠেছে। বিয়ের পরে সে একবার শুনেছিলো তার ভাসুর কি একটা অপকর্ম করে দেশ থেকে পালিয়েছে। কিন্তু তার শ্বশুড়বাড়ির কেউ তা স্বীকার না করাতে সে ব্যাপারটা ভুলেই গেছে। আজ আবার মনে পড়েছে। তার এখন কুতুবকে সে কথা জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে। তার জানতে ইচ্ছে করছে কুতুবের বড় ভাই আসলে কি করেছিলো। তবু সে ভয়ে চেপে যায়। এখন তার মনে হয় কুতুবও বোধ হয় সেরকম কিছুতে জড়িয়ে পড়েছে। তাই তার এমন অস্থিরতা। এসব ভাবতে ভাবতেই সে চরম বিরক্ত হয়। তাই সে বিয়ের পরে এই ছয় বছরে যা করেনি সেটাই করে বসলো। কুতুবের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ছেলেক মাঝখানে রেখে অন্যপাশে শুয়ে পড়ে। চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ঘুম আসে না। আর এদিকে কুতুবের অস্থিরতার সাথে নতুন করে এখন রাগ যোগ হয়। সে দাঁতে দাঁত কাটে। ছাদের দিকে তাকিয়ে পা নাড়াতে থাকে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×