somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুধু গ্রেপ্তার নয়, আসুন অন্তত: একটা ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করি

০৩ রা জুন, ২০১৩ রাত ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গত ডিসেম্বার মাসের ১৬ তারিখে ভারতের দিল্লীতে এক মেডিকেল ছাত্রী কয়েকটি নরপশুর হাতে চলন্ত বাসে নির্মমভাবে ধর্ষিত হয়ে প্রায় দু’সপ্তাহ পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এ ঘটনায় যখন ভারতে তোলপাড় চলছে, তখন আমাদেরই অনেককে বলতে শুনে ছিলাম যে, – ‘ভারত সবচেয়ে বেশি ধর্ষণ হয়’, ‘ভারতেই এমনটা হয়, বাংলাদেশে হয় না’, ‘ভারত বলেই এই রকম ঘটনা ঘটছে’ ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের সেই আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর গলা দিয়ে বেরোনোর আগেই খবর পাওয়া গেল টাঙ্গাইলে একটি স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে আটকে রেখে কয়েকটি নরপশু ৩ দিন ধরে ধষর্ণ করে এবং মেয়েটিকে ১০ই ডিসেম্বর অজ্ঞান অবস্থায় রেলাইনের ওপর পাওয়া যায় । খবরটি হয়তো আমাদের সবারই নজর এড়িয়ে যেতো যদি না তখন ভারতে দিল্লীর ধর্ষণ ঘটনায় এমন তোলপাড় না চলতো!

তবে যথারীতি আমরা বাংলাদেশের সেই মেয়েটির কথাও এখন ভুলে গেছি, জানি না সে সুস্থ হয়েছি কিনা, জানি না সে ন্যায় বিচার পাবে কিনা? অবশ্য আমরা তেমনভাবে কোন দাবীও করিনি সে জন্য! সে খবরের জাবর কাটা শেষ হতে না হতেই জানুয়রি মাসে মানিকগঞ্জে একজন গার্মেন্টস কর্মী বাসের ড্রাইভার ও হেলপার কর্তৃক চলন্ত বাসে ধর্ষিত হল। খবর ব্যাস এই টুকুই। অপরাধী গ্রেপ্তার হয়েছে এটুকু যদি খোজ নেই সেটাই আমাদের ব্যাস্ত জীবনের জন্য ঢের বেশি! আমরা আমাদের তৃপ্তির ঢেঁকুর গিলে ফেলে যার যার কাজে আবার ব্যাস্ত হয়ে পড়ি। এর মধ্যে আরো কত ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে তা আমাদের জানার ফুরসোতই হবে না। এর মধ্যেই আবার ঘটে গেল টঙ্গীর স্কুল পড়ুয়া আরেকটি মেয়ের ৫৫ দিন ধরে ধর্ষিত হবার ঘটনা!!

ধর্ষণ চলছেই – এবং আমরাও নির্বিকার ভাবে খবরের পাতা উল্টিয়ে আরো ধর্ষণের খবর দেখি। সকালের চায়ের সাথে মনোযোগ দিয়ে পড়ি সংবাদপত্রে ছাপানো ধষর্ণের রগরগে ডিটেইল – কিভাবে ধর্ষিত হলো, কতটা বিভৎস্যতা ছিল, কয়জন মিলে ধর্ষণ করলো ইত্যাদি ইত্যাদি! অনেকে মনে মনে আফসোস করি, ‘আহারে, মেয়েটা নষ্ট হয়ে গেল’, অনেকে ভাবি ‘নিশ্চই মেয়েটির কোন দোষ ছিল’, অনেকে বসুন্ধরার সামনে দেখা আ্টোসাটো পোষাক পরা মেয়েটিকে ভেবে (যার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে অনেকেই তাকিয়েছিল) চিন্তা করে: ‘মেয়েরা যে রকম বেহায়া হয়ে গেছে, তাতে ঠিকই হয়েছে’! আবার অনেক শিশ্নব্যাধীগ্রস্থ পশু এই খবরে তার শিশ্নপীড়ার তাঁড়ন নুতনভাবে অনুভব করে...

এ কোন সমাজে আমরা বাস করছি?? আমরা কি একবারও ভাববো না যে আমাদের সবার ঘরে অর্ধেকই নারী! আমাদের কন্যা, মা, বোন, স্ত্রীদের কথা কি আমরা ভুলে যাই সে সময়? ‘ধষর্ণের ঘটনা আজ নতুন নয়, সেই প্রাচীনকাল থেকেই এটা ঘটে আসছে’ – এই ধারণা নিয়ে আমরা যারা বসে আছি তারা কি একবারো ভেবেছি যে এটা একটা মধ্যযুগীয় ধারণা?

অনেকেই জানতে চায় এই সমস্যার সমাধান কোথায়? পন্ডিতেরা ভাবতে ভাবতে মাথার চুল পাতলা করে ফেলছেন, সরকার ভিকটিমদের জন্য সাপোর্ট সেন্টার/শেল্টার খুলে দেখাতে চাইছে তাদের দায়িত্বশীলতা। এনজিওরা পুনর্বাসনের নামে প্রশিক্ষণ আর সেলাই মেশিন দিয়ে বাহবা নিতে চাইছে ডোনারদের কাছে। এভাবেই গরিব মেয়েটির একটা রফা হয়ে গেল! আর যদি ধনীর মেয়ে হয়, তবে বিত্ত আর সামাজিক মর্যাদার ভারে ধর্ষণের মতো চরম অপরাধটি শেষমেষ ধামাচাপা পড়ে যায়। মেয়েটির কথা কেউ ভাবে না।
আসলে এই সমস্যার সূত্রপাত মাথায়, – কিছু শিশ্নপীড়াগ্রস্থ নরপশু আমাদের সমাজে আছে। এরা ভালমানুষের ছাল পড়ে আমাদেরই আশেপাশে ঘুরঘুর করে, ঘাপটি মেরে থাকে। আর সুযোগ পেলেই তাদের কামার্ত লোলুপতায় একটি নারীর জীবন তছনছ করে দেয়, - হোক সে শিশু বা বৃদ্ধা।

এদের ওষুধ একটাই – ভয়। এদের ভয় দেখাতে হবে – যদি এ কান্ড করো তবে চরম শাস্তি পাবে। এবং সেই শাস্তির উদাহরণ থাকতে হবে – ভুরি ভুরি। ধর্ষণ ঘটনাগুলো বার বার ঘটবার একটাই করান – এর কোনটাতেই কখনো কারও শাস্তি হয় না। আমি আমার জীবনে অজস্রবার দেখেছি ধর্ষণের ঘটনা পত্রিকার খবর হতে। প্রায় প্রতিদিনই পত্রিকা এক আধটা ধর্ষণের রিপোর্ট থাকবেই এবং ধর্ষণ কিভাবে হলো তার রগরগে বর্ণনা দিতেই যেন পত্রিকাওয়ালাদের আগ্রহ বেশি। ধর্ষণের বর্ণনা দিয়ে যতটা রিপোর্ট হয় তার অর্ধেকও ফলোআপ রিপোর্ট আসেনা – আমরা জানিই না অপরাধীরা ধরা পড়লো কিনা। যদিও বা কখনো কিছু অপরাধী ধরা পড়ার খবর আসে, তার একশ ভাগের একভাগ খবরও পাই না এসব অপরাধের বিচার বা বিচারের রায় হলো কিনা।

আর বিচারের রায় কার্যকর হবার খবর, এখনো আমি কোন পত্রিকার পাতায় কখনো দেখিনি!!!!!!!!!!!!

তাই আসুন, এবার আহা উহু বাদ দেই। সবাই প্রতিজ্ঞা করি অন্তত:পক্ষে একটা হলেও ধর্ষণ ঘটনার বিচারের রায় কার্যকর করতে যা যা করা লাগে আমরা করবো, – যদি রাস্তায় নামতে হয় তাও নামবো। তবু বিচারের রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত থামবো না।

এবং সেই ধর্ষকের কতটা নির্মম ভাবে ফাঁসি হলো তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেব। দেখি না ঠিক হয় কিনা...
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৩ রাত ১১:৫৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×