somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্ধকারস ( গল্প )

০২ রা অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার জন্ম আজ থেকে ১৬ বছর আগে। এটা শুধু বছর ভিত্তিক বয়সের হিসাব। একেবারে নিখুঁত ভাবে বলতে গেলে এটা হবে ১৫ বছর ০৯ মাস ২৯ দিন। প্রথম লাইনে কিছুটা বাড়িয়ে বলছি বলে কেউ কিছু মনে করেন নাই তো? মনে করলে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

তিন তলার সুন্দর বাড়ীতে আমার বেড়ে উঠা। বাবা অনেক রুচিশীল এবং শৌখিন। বিশাল বাড়ী। এত সুন্দর করে বাড়ী বানালেও বাবার এ বাড়ীতে ঠিক থাকা হয় না বেশি সময় ধরে। বেশির ভাগ সময়ই বিদেশে থাকেন তিনি। দেশে থাকলেও মাসে একবারের বেশি এ বাসায় আসেন না।

বাবা অর্থ উপার্জনের পিছনে ব্যস্ত। আমার মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় কঠিন কঠিন কথা শুনাতে। অনেক কঠিন কথা। কিন্তু পারি না। কেননা বাবা আমাকে দেখতে পারেন না। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আমাকে এড়িয়ে চলতেই বাবা এই ঘরমুখো হন না। আগে খুব খারাপ লাগত। বাবারা সন্তানদের কত আদর করে। অথচ আমার বাবা দেখি আমার থেকে দূরে থাকতে পারলেই বাঁচে। কিন্তু যেদিন কারণটা সম্পর্কে অল্প একটু জানতে পারলাম সেদিন থেকে বাবার প্রতি আমার আর কোন ক্ষোভ নেই। এখন আমিই উল্টা নিজেকে আড়াল করে রাখি বাবার কাছ থেকে। বাবা যেদিন বাসায় আসে সেদিন আমি রুম থেকে একবারের জন্যও বের হই না। যদি বাবার সাথে দেখা হয়ে যায় এই ভয়ে।

আমার মা মৌমিতা চৌধুরী। অনেক সুন্দর এক মহিলা। তার সুন্দরের কিছু আমি পেয়েছি। কিছু না বলে অনেক বেশিই পেয়েছি বলতে হয়। অন্যরা আমাকে দেখে যে মুগ্ধ হয় তা দেখে বুঝি সেসব। তবে আমার একটি গোপন ইচ্ছা আছে। অনেক গোপন ইচ্ছা। কাউকে বলি নাই। আপনাদের প্রথম বলছি। আমি আমার মুখ এসিড দিয়ে ঝলসে দিবো। যে মেয়ের মনে এত দুঃখ সে মেয়ের এত সুন্দর মুখ থাকার কোন অর্থ হয় না। আপনারা কি অবাক হয়েছেন। অবাক হবেন না। এত সাহস আমার নেই। এত সাহস থাকলে অনেক আগেই নিজ থেকে পৃথিবীটাকে বিদায় জানিয়ে দিতাম।

মা আরো বেশি ব্যস্ত। বাবা ব্যস্ত টাকা আয়ে। আর মা ব্যস্ত টাকা গুলো খরচের জন্য। সারাদিন ঘুরেন। তার বন্ধুর অভাব নেই। অনেকেই বাসায় আসে। কতজনকে যে অ্যাঙ্কেল ডেকেছি ঠিক নেই। মাঝে মাঝে মনে হয় পৃথিবীতে বোধ হয় সবচেয়ে বেশি অ্যাঙ্কেল আমারোই।

বেশির ভাগ শিশুই নাকি কথা শিখে মার কাছ থেকে। আমার সে সৌভাগ্য হয় নাই। নিলুফা নামে এক আয়া ছিল আমাদের বাসায়। আমার দেখাশুনার ভার ছিল তার উপর । নিলুফার গ্রামের বাড়ি ছিল জামালপুর। সে আমাকে কথা শিখিয়েছে। তার কাছ থেকে অনেক আঞ্চলিক ভাষা শিখেছি। নিলুফা এখন আর আমাদের সাথে নেই। শুধু আমাদের সাথে না কারো সাথেই নাই। এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে সে চলে গিয়েছে নিজে নিজে। কারণ কি জানি না। অনেক ভেবেছি। কিন্তু পাই নি। শক্ত হয়ে যাওয়া আমি নিলুফার মৃত্যুকে স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছি। যদিও সমস্যা হয় মাঝে মাঝে ঘুমে। স্বপ্নে নিলুফার সাথে আমার কথা হয়।

ওকে প্রতিবারই জিজ্ঞেস করি, কিজন্য তুমি এরকম করলে?
উত্তরে সে শুধু হাসে। এ ব্যাপারে কিছুই বলে না।

আমি বলি, বললে তোমার সমস্যা কি? হাসছো কেন? বলো, প্লিজ বলো।

আমার কথা শুনে নিলুফা গম্ভীর হয়। বলে, বলব সব বলব। তবে তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে একটু।

: অপেক্ষা করতে পারবো না। এখুনি বলো।
: নীরা তুমি কি জানো তুমি আমার অনেক প্রিয়, শুধু তোমার জন্য হলেও আমি বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম। তারপরও পারলাম না। শেষ চেষ্টা করেও পারলাম না।

: আশ্চর্য, আরে বলো না, কি হয়েছিল। কেন চলে গেলে আমাদের ছেড়ে?

: আরো বড় হও। বিয়ে হোক তোমার। তোমার বিয়ের পর তোমাকে সব খুলে বলব আমি।
এই কথা বলে সেদিন চলে গিয়েছিল নিলুফা।
অথচ আমি যে কারণটা খুব জানতে চাই। চারদিকে এত আলো, তারপরও নিজেকে খুব অন্ধকার মনে হয়।

( ২৯ সেপ্টম্বার সমকালের সুহৃদ সমাবেশে পাতায় প্রকাশিত হয়েছে।)
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×