স্বপ্ন শুরু ঃ
ফুলগুলোর গন্ধ ঠিক চকোলেটের মতো।
বাগানে অনেকদিন পর আবার ফুলগুলো ফুটেছে। ফুলের গন্ধ নেয়ার জন্য আরিফের ফুলগুলো ছিড়তে ইচ্ছে হলো না। এই ঘাসফুলগুলো ছোট বেলা থেকেই আরিফের খুব প্রিয়। আরিফ মাটিতে ঝুকে ঘাসফুগুলোর গন্ধ নিচ্ছিল।
এইযে শুনুন।
আরিফ ফিরে তাঁকায়। জ্বী আমাকে বলছেন? সদ্য স্নাত মায়াময় মুখায়ববের একটি মেয়ে।
আপনাকেই বলছি।
আরিফ ঘামতে শুরু করে। জ্বী বলুন।
আপনার নাম কি আরিফ?
জ্বী আমি আরিফ। আপনি?!
আমি জেবু। আপনার লেখা আমি পড়েছি ইন্টারনেট এ।
অহহ কিন্তু আমিতো আহামরি কিছু লিখিনাই।
প্লিজ আপনি উদ্দিগ্ন হবেন না।
আরিফ দেখলো সে আসলেই উদ্দিগ্ন হয়ে পড়েছে। নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করে আরিফ।
জেবু আপনি বসুন। আরিফ জেবুকে ঘরে নিয়ে বসায়।
সেকি আপনিতো দেখি একদম ঘেমে গেছেন! আর ইউ ওকে?
জ্বী জ্বী আমি ঠিক আছি। আসলে আমার কাছে কোন মেয়ে কোনদিন আসেনিতো তাই আমি কিছুটা অপ্রস্তত বোধ করছি। আরিফের সরল স্বীকারোক্তি।
কেন আপনার স্কুল কলেজ জীবনের কোন মেয়ে বন্ধু নেই?!
জ্বী? জ্বী না। আপনি বসুন। আমি একটু ভেতর থেকে আসি। আরিফ তার নিজের রুমে যায়। ঘাম মুছে জামা চেঞ্জ করে। তারপর রান্নাঘরে মায়ের কাছে যায়।
ইয়ে আম্মা, একটু এদিকে আসোতো,
মা ঃ কি হয়েছে?
তেমন কিছু হয়নি, তুমি একটু এদিকে আসোনা। মা আসে,
মা ঃ কি হয়েছে?
আম্মা, ইয়ে একটা মেয়ে এসেছে আমার কাছে, ড্রয়িং রুমে বসে আছে। আমি চিনি না, আমাকে নাকি চেঁনে, আমার লেখা পড়েছে ইন্টারনেটে।
মা ঃ অ...
তুমি গিয়ে একটু মেয়েটার সাথে কথা বলো। আমি কি কথা বলব?!
মা হাসেন। বলেন ' আচ্ছা ঠিকাছে তুই যা আমি চুলোর তরকারীটা নামিয়ে আসছি।
আরিফ ঃ ওকে, তাড়াতাড়ি আস।
মা ঃ আসছি, আসছি, তুই যা।
আরিফ ড্রইং রুমে গিয়ে জেবু থেকে বেশ দূরবতর্ী সোফাটায় বসে। বলে 'ইয়ে দুঃখিত আপনাকে একা বসিয়ে রেখেছি। আসলে মাকে বলতে গিয়েছিলাম আপনার কথা, মা আসছেন।
জেবু ঃ আমি কিন্তু আসলে আপনার কাছে এসেছিলাম। আমি ঢাকায় থাকি। চট্টগ্রামে আমার খালার বাসা। অন্য তেমন কোন আত্নীয় নেই এখানে। ঢাকা থাকতেই প্লান ছিল চট্টগ্রাম খালার বাসায় এলে আপনার সাথে দেখা করে যাব। সে কারনেই আসা। আমি মনে হয় এসে আপনাকে বিব্রত করলাম।
আরিফ ঃ না না তা মনে করবেন না প্লিজ। আসলে আমি মানুষটা খুব আনসোশ্যাল, ঘরকুনো। বোন, বান্ধবী না থাকাতে মেয়েদের সাথে সহজ হতে পারিনা । আপনি কিছু মনে করবেন না।
জেবু ঃ না ঠিকাছে।
এমন সময় মা এসে ঢুকেন ড্রইংরুমে। আরিফ মা'র সামনে কেমন জানি লজ্জা পায় আজ। দাড়িয়ে পরিচয় করে দেয়
মা, ইনি হচ্ছেন জেবু। জেবু, আমার আম্মা।
জেবু দাড়িয়ে মা কে সালাম করে, স্লাামালাইকুম খালাম্মা।
মাঃ ওয়ালাইকুম সালাম, বসো।
মা জেবুকে মনোযোগ দিয়ে দেখেন। আরিফ বিব্রত হয়। মনে মনে রাগ হয় মা'র উপর। মেয়েটিকে এত খুঁটিয়ে দেখার কি আছে! মেয়েটি কি মনে করছে! এ তো আমার পছন্দকরা কোন মেয়ে না যাকে মা'কে দেখাতে নিয়ে এসেছি।
আম্মা..., আরিফ মায়ের মনোযোগ আর্কষন করে। আম্মা, উনাকে একটু চা-নাস্তা দাওনা।
মা বলেন, সবেতো এলো এখনও তো ওর সাথে কথাও বললাম না। শুনে আরিফ চুপসে যায়। জেবুও বলে উঠে না না ব্যস্ত হবেন না। আপনাদের সাথে পরিচয় হতেই এলাম।
মা জেবুকে বোল্ড করে দিয়ে বলেন, আমার সাথে তো না, আরিফের সাথে পরিচয় হতে এসেছ। জেবু লজ্ঝা পেয়ে মাথা নিচু করে নখ খুটাতে থাকে আর আরিফ মা'র দিকে চোখ কটমট করে তাকায়, বুঝায় আম্মা' তুমি এত কাঠখোট্টা কেন! যদিও মা'র আরিফের দিকে কোন ভ্রক্ষেপ নাই। জেবুকে খুটিয়ে দেখতেই ব্যস্ত।
হঠাৎ বিকট কড়কড় শব্দে একটা বাজ পড়ে। আরিফের ঘুমটা ভেঙ্গে যায়। খুব রাগ হয়...শালার বাজ, পড়ার আর সময় পেলি না। শুয়ে শুয়ে জেবুর চেহারাটা মনে করার চেষ্টা করে। কিন্তু স্পষ্ট মনে পড়ে না । ভাসা ভাসা ভাললাগা চেহারাটা মনে পড়ে। ইশ্ মা ঠিক কাজটাই করিেছলেন। আমারও জেবুকে খুঁটিয়ে দেখা দরকার ছিল। স্বপ্নের মধ্যেও এত লজ্জা পাইতে হয়! নিজেকে ভৎসনা করে আরিফ। নাহ্ আরেকদিন স্বপ্নের বাকিটা দেখতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০০৭ রাত ২:০৩