ব্লগে লেখালেখি হয় না অনেকদিন, আসলে প্রবাসের দিনগুলো এমনই একঘেয়ে আর পানসে যে এখানে বৈচিত্রের উঠানামা হয় না বললেই চলে। ঠিক যেন দিগন্ত ভেদ করা যতদূর চোখ যায় চলে যাওয়া সোজা সরল রেল লাইন। জীবন গাড়ীটা এখানে ঝিক ঝিক, ঝিক ঝিক করে এক তালে চলছেতো চলছেই। তার উপর লেখকতো নই যে ইচ্ছে হলেই গড়গড়িয়ে একটা উপন্যাস বা গল্প লিখে ফেললাম, ঘরে বসে পাঠককে দারজিলিং বা তাসখন্দ ঘুরিয়ে আনলাম। তাই অগত্যা নিরুপায় হয়ে উদ্দেশ্যহীন লেখার এই অপপ্রয়াস।
দেখতে দেখতে সময় কিভাবে যেন পার হয়ে যায়, কালো চুলে কাশ ফুলের সাদা ধূসর রং জায়গা করে নেয় একটু একটু করে। আমাদের গড় আয়ু নাকি ৬৩ বছর, উইকিপিডিয়া তাই বলে। সে হিসেবে জীবন রেখার মাঝখানটায় দাড়িয়ে এখন আমি দু প্রান্তের দুই বিন্দুর কথা ভাবি। স্কুল কলেজ ভার্সিটির পাট চুকেছে অনেকদিন হতে চললো। জীবন সংগ্রামের মাঝ দরিয়ায় নৌকোটা আমার এখন বড়ই শান্ত, নির্লিপ্ত হয়ে পড়েছে। পালে তার হাওয়া নেই, কম্পাসটা আজকার তেমন কাজ করছে না, চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। একটা গাংচিলের ও দেখা নেই আজ অনেক দিন! এমনি অবস্থায় কি কথা শোনাতে পারি আপনাদের?! রাজনীতির হাউকাউ, ধর্মের অন্তহীন তর্ক, মুক্তিযুদ্ধ-রাজাকার, দূর্নীতিবাজ-সুশীল সমাজ কোনটাই আজকাল মনের জলে কোনো ঢেউ তুলে না। দ্রব্যমূল্যের আগুনে মধ্যবিত্তের যখন চামড়া-মাংস পুড়ে হাড় বেড়িয়ে পড়েছে তখন এসব তর্ক বড়ই তুচ্ছ, বড়ই পানসে, বড়ই অর্থহীন। জীবন এখন কাটে ঘোরের মধ্যে। প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা অফিস করে মাসের মাইনেটা হাতে এলে দেশে পাঠিয়ে দায়িত্ব পালনের মধ্যেই জীবনটা এখন সীমাবদ্ধ। দায়িত্ববোধের দাসত্বে আটকে পড়া এ জীবন যেন এখন জেনেভা ক্যাম্পের আটকে পড়া মানুষগুলোর মতো। আপন দেশ যাদের চায় না, তাও নিজ দেশে ফেরার আমৃত্যূ আকুলতা। আমার মতো মধ্যবিত্ত প্রবাসীরা শুধু ঘুমের ঘোরে স্বপ্নেই দেশের মাঠে প্রান্তরে ঘুরে বেড়াই, কিন্তু বাস্তবে আমাদের দেশ, আমাদের পরিবার, আমাদের আপনজন কেউ চায় না আমরা দেশে গিয়ে স্থায়ী হই। দেশে গিয়ে যদি মাঠ প্রান্তর চষে বেড়াই, খোলা মাঠে শুয়ে মেঘেদের ভেলায় ভাসি আর উদোমপিঠে দীঘির জলে সাতরে বেড়াই তবে সংসারের ঘানি টানার বলদ তারা কোথায় পাবে?! দেশ কিভাবে বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ নিয়ে গর্ব করবে?! তাই আমরা খুশি মনে চোখে পট্টি বেধে ঘানির জোয়াল কাধে তুলে নেই। এই পট্টি বাধা চোখে আমাদের দিবা রাত্র, মাস, বছর কেটে যায়। পাঠক, কি লিখতে পারি বলুনতো আপনাদের জন্য?!