somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সোনালি যুগের পাবলিক পরিক্ষা

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি যখন এস.এস.সি পাস করি তখন হঠাৎ করেই দেশে নকল বন্ধ হয়ে যায় । আমাদের স্কুল ছিল একটি অখ্যাত গ্রামের স্কুল।আমরা সে বছর ৭৪ জনেরই বেশি এস এস সি পরীক্ষা দেই তার মধ্য থেকে ৪ জন পাশ করি । তার মধ্যে আমি একজন। ক্লাসে তেমন ভালো ছাত্র ছিলাম এটা বলার মতো নয় । গ্রেডিং সিস্টেমের দ্বিতীয় বছর। আমরা যে কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতাম সেটা ছিলো আমাদের বাড়ি থেকে খানিক দূরে। এস এস সি পরীক্ষার সময় আসলে দেখতাম অত্র অঞ্চলে উৎসবের আমেজ হতো ।
পরিক্ষা না বলে নকলের মহৎসব বলা যেতে পারে। এটা শুধু আমাদের উপজেলার কাহিনী নয় আমার মনে সমগ্র দেশের চিত্র ঘুরেফিড়ে এই রকম ই ছিলো।
এমন একদিন বৃহস্পতিবার সকালে আমাদের পরীক্ষা শুরু হলো । একজন পরীক্ষার্থীর সাথে ৫ ,৬ জন করে দর্শানার্থী। শত শত মানুষের ভীরে আমি একজন । একা একজন। নির্জনের দ্বিপের একটি গাছের মতো একা। আমার বাবা নেই ।মা বাড়িতে । বুক টিপ টিপ করে কেন্দ্রে ঢুকলাম। কেন্দ্রে প্রথম সারির মধ্যে দ্বিতীয় বেঞ্চে বসলাম। প্রস্তুতি কেমন সেটা না হয় পরে বলি। এই কেন্দ্র আমি আগে থেকেই চিনি । দেয়াল গেসে বসলাম । আমার পাশে এসে একটি ছেলে বসলো । তারপর আরেকটি ছেলে এসে বললো ।।আমি উনার বড় ভাই । পরিক্ষা দাও ভালো করে । আর রেজাল্ট তো দিবে বোর্ড। এমন আর্শিবার্দ শুনে নিজের মনে বল পেলাম। তার বড় ভাই মানে আমার বড় ভাই। আমার ভাইও হয়ত এই রকম কথা বলতো!তার বললো ছোট ভাই একটু পাটা সড়াও তো ? আমি সুবোধ ছেলের মতোা পা সড়ালাম। বড় ভাই আর ছোট ভাই মিলে দেখলাম হাই বেঞ্চটা উলটিয়ে হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে তারকাটা বসাচ্ছে।তারকাটার একমাথায় ইলাস্টিক। এভাবে জাল বোনার মতো করে বেঞ্চের নীচে মাচা বানিয়ে পপি গাইড,মিজান গাইড,আব্দুল্লাহ গাইড দিয়ে নিজের পড়ার টেবিলের মতো পরীক্ষার বেঞ্চটা সাজালেন। তারপর যেমন টেবিল টেবিল তেমন রেখে দিলেন। আর হাতে রাখলেন সিলেবাসের মতো আরেকটি বই । বড় ভাই বাকী তারকাটা ও হাতুরী নিয়ে বের হয়ে গেলেন।বড় ভাই বের হওয়ার পর আমি আমার পাশের জনের হাত থেকে সিলেবাস সাদৃশ্য বইটা হাতে নিলাম। পৃষ্টা উল্টিয়ে দেখলাম বাংলা প্রথম পত্রে গদ্য পদ্যের সব গুলো প্রশ্নের লিস্ট। এখনো আমার চোখে ভাসে ।
ছুটি গল্পের মূলভাব লিখ?পপি গাইডের ২৫ পৃষ্ঠা,মিজান গাইডের ৩০ পৃষ্ঠা।
এভাবে আছে সব গুলো প্রশ্ন। কষ্ট করে প্রশ্ন পড়তেও আমাদের প্রযন্মের ছেলেদের এই হাল। নকল ছাড়া পাশ যেত এক মহাকালের ইতিহাস।
আমার পাশের জনের পরীক্ষার প্রস্তুতি এই ।অপর দিকে আমার দিকে একটু নজর না দিলে কেমন হয় বলুন .।।
তার টেবিল ভর্তি বই আর আমার পকেট ভর্তি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লিখার চিরকুট। এতোক্ষণ এই চিরকুট নিয়েও আমার হাড় কাউপনি ছিলো ।বুক টিপ টিপ করছিল।।আর তার তো সাহসের তারিফ না করে পারিনা। ।।
একটু পর স্যার আসলেন ।এসে বললেন ।।আমরা জানি তোমাদের কাছে নকল আছে ।।যার কাছে যা আছে দিয়ে দাও। সকার চেন্স হয়েছে।নতুন শিক্ষা মন্ত্রী । তোমরা তোমাদের কাছে যা আছে সবাই এইযে বস্তা আছে তার মধ্যে রেখে দাও ।কাউকে কিছু বলা হবে না।।স্যার বলো আমরা ১০ মিনিট পরে আসবো যার যা আছে দিয়েও দাও .।পরে চেক করে পাওয়া গেলে ডাইরেক্ট এক্সপেল। এই কথা বলে স্যারেরা বের হয়ে গেলো ।।সবাই যার যার জায়গায় থেকে উঠে সামনে গিয়ে বস্তার মধ্যে বইগুলো রেখে আসলো ।১০ মিনিটে দেখলাম এই ৪ বস্তা ভরে গেলো।আমিও আমার চিরকুট ফেলে দিয়ে আসলাম । দেখলাম আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে নকল লিখে নিয়ে এসেছে।।বাকী সবাই সি পপি গাইড আর মিজান গাইড

আমি মেধাবী নই ।কিন্তু এই রকম নকলের নামে ডাকাতি করে পাস করার ইচ্ছে ছিলো না। মন সায় দেয় নি । তার থেকে ২ বছর আগে আমি যখন ক্লাস ৮ম শ্রেনীতে পড়তাম ।আমার রোল ছিলো ২৫। ক্লাসের বৃত্তি পরীক্ষা। বোর্ড থেকে নিয়ম ছিলো প্রতি স্কুল থেকে নুন্যতম ২০% ছাত্রকে বৃত্তি দিতে হবে । দেখলাম ক্লাসের ২ থেকে ৩ জন ছাড়া আর কেউ রাজী হচ্ছেনা । আমি হাত তোলে দাড়ালাম। স্যারের ভ্রু কুচকে বললো তুই বৃত্তি দিবি? আমি বললাম হ্যা স্যার দিবো। স্যারের খুশি হওয়ার বদলে রাগ করলো । ভাবলো আমার অবস্থা জকালকার ইনু মেনন দের মতো অবস্থা । জামানত টিকানোই মুশকিল । অনেক অনুবিনয় করে রব্বানি স্যারকে রাজী কড়ালাম। স্যার মনির স্যারকে বুঝালো আমাদের পার্সেন্টিজ পুরুন হচ্ছে।দেউক। বাংল সিনেমার মত নায়ক হয়ে আমি বৃত্তি পাইনি । আমি বৃত্তি পাওয়ার জন্যেও পরীক্ষা দেইওনি । আমার উদ্দেশ্য ছিলো এখানে আমি কয়েক বছর পরে এস এস সি পরীক্ষা দিবো । সেটা দেখতে কেমন তা দেখবো । আসলাম পরিক্ষা দিলাম । মাঠের মধ্যকানে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে বল্ললাম হে ভগবান স্কুলের মাঠ ,বিল্ডিং ,চেয়ার টেবিল,চক ডাস্টার , আর এই নারকেল গাছ তোমার সবাই সাক্ষী ।।২০০২ সালে আমি যখন এস এস সি পরীক্ষা দিবো ।।আমি যেন অন্তত ৫০% নকল ছাড়া পরীক্ষা দিতে পারি ।এটাই আমার শপথ। এটাই আমার প্রতিজ্ঞা.।আমি এই প্রতিজ্ঞা রাখবোই রাখবো.।
যদি আমাকে ফেল করতে হয় আমি করবো ।।আমার মতো গ্রামের এক অখ্যাত স্কুলের রোল ২৫ পাশ না করলে কিছু হবেনা কিন্তু আমি ৫০ % এর বেশি নকল করা আমার পক্ষ্যে সম্ভব নয়.।সেই দিনের প্রতিজ্ঞা রাখতে গিয়ে আজ এস এস সি পরীক্ষার কেন্দ্রে আমার নকল সব লিখিত চিরকুট.।
১০ মিনিট পর স্যারের আসলেন । ২ জন দপ্তরি বস্তা গুলো বাহিরে নিয়ে গেলন । এবার আসলেন কেন্দ্র সচীচ নামের এক স্যার ।।তোমাদেরকে আবার সাবধান করে দিচ্ছি।।কারর কাছে কিছু রেখোনা।। ফেল করলে আগামি বছর পরীক্ষা দিতে পারবে কিন্তু এক্সপেলড হলে জীবন শেষ। আমার পাশের জনের বেঞ্চের নীচে তখনো বই । আমার আবার বুক টিপ টিপ করছে।।স্যার বললেন যে ধড়া খাবে ।।তার আশে পাশের জনকেও ধরা হবে.।আমার আর বুক টিপ টিপ বেরে গেলো .।
সামনের সীতের একজন মুটকো টাইপের ছেলে উঠতে গিয়ে বেঞ্চ উলটে পরে গেলো।।স্যারদের সামনে ।।বেঞ্চ থেকে বের হয়ে আসলো সেই মাচা টাইপের বইয়ের তাক।।স্যারেরা ত মাথায় হাত।।তখন স্যারের আমাদের সবার সাথে অনেক রাগারাগি করলেন । তোময়াদের জন্যে আজ আমাদের চাকুরি যেতো ।।এই সেই নয় ছয় ।। তারপর একযোগে সকলের বেঞ্চ চেক করা হলো ।। উঠিয়ে ঊথিয়ে সবার পকেটো চেক করা হলো ।। এভাবে দ্বিতিয়বার চেক শেষে আর ৫ বস্তার বেশি বই বের হলো ।। ঘড়িতে ১০টা বাচতে আরো ১০ মিনিট ।।সবাই বসলাম। পরীক্ষা খাতা দিল.।খাতায় নাম রল লিখছি.।এভাবে পরিক্ষা শুরু হলো ।।৫ মিনিট পরে বাতাসের মতো করে দপতরি খবর নিয়ে আসলো .।এক ছেলে এক্সপেল্ড তার পায়ের নীচে ইলাস্টিকে বই পাওয়া গেছে.।
চলবে.।।

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:২৫
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:০৭




মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…
১. প্রথমে বলেছেন মৃতদের পেটে কাটাছেড়ার ডাহা মিথ্যা। পরে স্বীকার করেছেন দাগ থাকে।
২. আশ্রমে বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেয়া হয় না। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×