অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র কেনাবেচার সময় গ্রেফতার লালবাগ থানার ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাগর ও তার সহযোগী আনোয়ার হোসেনকে রিমান্ডে না দিয়ে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল রোববার বিকেলে সিএমএম কোর্টের বিচারক রেজাউল করিম এ আদেশ দেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক শহীদুল ইসলাম আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন।
শনিবার রাত সোয়া নয়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে সাগর (২৮) ও আনোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করে ডিবি। ডিবি পুলিশ দক্ষিণ শাখার এসি সানোয়ার হোসেন জানান, অস্ত্র কেনার ফাঁদ পেতে ক্রেতা সেজে ওই দুই যুবককে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১৪ জনের একটি টিম ঢামেক জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টারের সামনে আগেই অবস্থান নিয়েছিল। তাদের কাছে পাওয়া একটি ইনটেক প্যাকেটে জার্মানীর তৈরি তাওরাস পিস্তল ও দুটি ম্যাগাজিন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি ম্যাগাজিন পিস্তলে ভরা ছিল এবং অপরটি খালি। এ সময় তাদের ব্যবহৃত একটি জিপগাড়িও (ঢাকা মেট্রো ঘ-০২-২১৯০) জব্দ করে ডিবি। গ্রেফতারের পরই রাতভর তাদেরকে ছাড়িয়ে নেয়া এবং ঘটনা ধামা চাপার জন্য প্রভাব বিস্তারের ঘটনা ঘটে যা মিডিয়ার জানাজানির কারণে মহলটি সফল হতে পারেনি।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ছাত্রলীগ নেতা সাগর ও তার সহযোগী আনোয়ার হোসেন গ্রেফতার হওয়ার পর প্রভাবশালী মহল থেকে তাদেরকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য প্রভাব বিস্তার করা হয় ডিবি পুলিশের ওপর। এক পর্যায়ে মিডিয়ায় জানাজানি হওয়ার পর গ্রেফতারের ঘটনাটিকে নাটকীয় মোড় দেয়ার চেষ্টা চালানো হয়। পরে উপায় না দেখে আদালতকে ম্যানেজ করা হয় এক প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে। যার কারণে আদালতের রিমান্ডের আবেদন জানানোর পরও আদালত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেনি। এমনকি সরকার পক্ষ থেকেও রিমান্ডের পক্ষে জোর আবেদন জানানো হয়নি। আসামীদের পক্ষে রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা ছিল আদালতে লক্ষণীয় বিষয়।
সূত্র জানায়, ছাত্রলীগ নেতা সাগর ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করার পর বখাটে জীবন যাপন শুরু করে। এক পর্যায়ে লালবাগ ছাত্রলীগের সাথে জড়িত হয়ে অস্ত্রবাজি, দখলবাজি, মারামারি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুরু করলে এলাকায় তার পরিচিতি বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের পদ দখল করার পথ প্রশস্ত হয়ে যায়।
বর্তমান সরকার ক্ষতায় আসার পর এক প্রতিমন্ত্রীর সাথে তার ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি এলাকাজুড়ে প্রভাব বিস্তারে সহায়ক হয়ে দাঁড়ায়। এতে তার প্রভাবও বেড়ে যায়। প্রতিমন্ত্রীর আশীর্বাদে সাগর এলাকার বড় নেতা উপাধি লাভ করেন। জড়িয়ে পড়েন টেন্ডার বাণিজ্যে। এই টেন্ডার বাণিজ্যের কারণে তার জন্য অন্য কোনো ঠিকাদার বা প্রতিষ্ঠান ঢামেকের কোনো ঠিকাদারী কাজই করতে পারতো না। সর্বপ্রকার সরবরাহ, কেনাকাটার টেন্ডার তার হাতেই থাকতো। ঢামেকের অন্যান্য বিষয়গুলোর নিয়ন্ত্রণও ছিল সাগরের হাতে। সর্বশেষ গত ক'দিন পূর্বে ঢামেকের যানবাহনের ঠিকাদারী কাজও কয়েকগুণ বেশি দরে সাগর নিয়ে নেয়। আর এসব কাজে প্রভাব খাটানো হতো এক প্রতিমন্ত্রীর নামে। এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও প্রতিমন্ত্রীর পাশে সাগরকে দেখা যেতো।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ শাখা থেকে দু'ছাত্রলীগ ক্যাডারকে অবৈধ অস্ত্র কেনা বেচার সময় হাতে নাতে গ্রেফতারের বিষয়ে কোনো প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিতে দেখা যায়নি যেখানে ছোট খাটো যেকোনো ঘটনায়ই প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়ে থাকে মিডিয়ায়। এমনকি কর্মরত ক্রাইম রিপোর্টারদের মোবাইল ফোনে ডিএমপির মিডিয়া থেকে সকল ঘটনার ম্যাসেজ দেয়া হলেও উল্লেখিত ঘটনার ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটে।