সদ্য ঘোষিত ছাত্রলীগের ১০টি ইউনিটের নতুন কমিটিতে নেতৃত্বে এসেছেন ইয়াবা ব্যবসায়ী ও অছাত্ররা। এছাড়াও আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা তার এলাকার ১০ ছাত্রনেতাকে রাজধানীর কলেজগুলোর বিভিন্ন পদে বসিয়েছেন নির্বাচনে তার পক্ষে কাজ করানোর শর্তে।
বুধবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম নয়টি ইউনিটে এক বছর মেয়াদী কমিটি ও একটি ইউনিটে তিন মাস মেয়াদী আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দিয়েছে।
জগনাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সভাপতি শরিফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক এস এম সিরাজুল ইসলাম। এ ইউনিটে নির্বাচিত হওয়া সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের বাড়ি শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এনামুল হক শামীমের নির্বাচনী এলাকায়। এজন্য রাজনীতিতে সক্রিয় না থেকেও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। আর শরিফুল ইসলাম সভাপতি হয়েছেন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে।
ঢাকা কলেজে ফুয়াদ হাসান পল্লব সভাপতি ও সাকিব হাসান সুইন সাধারণ সম্পাদক। ঢাকা কলেজের নবনির্বাচিত সভাপতি পল্লব রাজধানীর কুখ্যাত ইয়াবা বিক্রেতা বলে পরিচিত। ধানমন্ডি থানায় তাকে একাধিকবার ইয়াবাসহ আটক করলেও মহানগর উত্তরের ছাত্রলীগের সাবেক নেতা তাসভীরুল হক অনু তাকে ছাড়িয়ে আনেন। ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জানান, পল্লব ২০ লাখ টাকায় তার পদ কিনে নেন। তার গ্রামের বাড়ি বরিশালে। পুরান ঢাকায় বোনের বাড়িতে থাকত সে। ঢাকা কলেজের রাজনীতিতে জোরালো কোনো ভূমিকা তার ছিলনা। কলেজের নতুন সাধারণ সম্পাদক সুইনের বাড়ি চুয়াডাঙ্গায়। সেও টাকার বিনিময়ে পদ বাগিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সুইন আগে ঢাকা কলেজের ক্যাডার টিটুর লোক হিসেবে আশপাশ এলাকায় চাঁদাবাজি করতে।
সরকারি তিতুমীর কলেজের তিন মাস মেয়াদী আহ্বায়ক কমিটির নেতার হলেন- আহ্বায়ক কাজী মিরাজুল ইসলাম ডলার, ১৭ জন যুগ্ম আহ্বায়ক ও আরো ১৯ জনকে করা হয়েছে ওই কমিটির সদস্য। এই ইউনিটের আহ্বায়ক ডলার অনেক টাকার বিনিময়ে আহ্বায়ক পদ বাগিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ তিতুমীর কলেজের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের। আর যুগ্ম আহ্বায়করা হলেন শীর্ষ নেতাদের এলাকার।
মিরপুরের সরকারি বাংলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সাঈদুল ইসলাম খান রায়হান, সাধারণ সম্পাদক মো.রুবেল হাওলাদার। বাংলা কলেজের দুই নেতাই স্থানীয় এমপি আসলামের কাছের লোক। আসলাম অনেক টাকায় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ম্যানেজ করে তাদের পদে বসিয়েছেন বলে জানা গেছে।
পুরান ঢাকার কবি নজরুল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মামুন, সাধারণ সম্পাদক রাকিব হাসান সোহেল। অভিযোগ রয়েছে সোহেল সদরঘাটে তার বাবার ব্যবসা বাণিজ্য দেখাশোনা করত। এর আগে কলেজ থেকে সে বিতাড়িতও হয়েছে। যুবলীগ নেতা নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের এলাকার বলে শাওনের মাধ্যমে সে এ পদটি বাগিয়ে নেয়। সোহেল শাওনের ভোলা লালমোহনের নির্বাচনী এলাকার।
হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজে সভাপতি মো. ইউনুস আলী ইমন, সাধারণ সম্পাদক উদয় সংকর দে জিতু। সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগের এলাকার। তার বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। এর আগে ইয়াবা ও অস্ত্রসহ জিতু র্যাবের হাতে ধরাও পড়েছিল।
সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি করা হয়েছে কামরুজ্জামন হিমুকে ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে কাওসার হককে। হিমু কলেজের ছাত্র নয় বলে অভিযোগ রয়েছে। কলেজের আরেক পদপ্রত্যাশী আমিনুলকে গুলি করে ক্যাম্পাস ছাড়া করেছিল। তাদের দু’জনই টাকার বিনিময়ে পদ বাগিয়ে নিয়েছেন।
আবুজরগিফারী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছর মেয়াদী কমিটির সভাপতি নাহিদ শিশির, সাধারণ সম্পাদক শরিফুল আলম। তারা দুইজন ছাত্রলীগের সাবেক এক সভাপতির আর্শিবাদ পুষ্ট হয়ে পদ পেয়েছেন। তারাও কয়েক লাখ টাকা বিনিময়ে পদ বাগিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ছাত্রলীগের এসব ইউনিটগুলোর নেতা নির্বাচনে বেশি ভূমিকা রেখেছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এনামুল হক শামীম। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদারের মাধ্যমে তিনি নিজের নির্বাচনী এলাকার দশজনকে বিভিন্ন ইউনিটে পদে বসিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে তার পক্ষে কাজ করার শর্তে তাদের বিভিন্ন পদে বসান বলে অভিযোগ করেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা। রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের পদপ্রত্যাশীরাও নিয়মিত তাদের বাসায় যাতায়াত করছে বলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা অভিযোগ করেছেন।
রফিকুল ইসলাম রনি
বার্তা২৪ ডটনেট
ঢাকা, ৫ অক্টোবর