দেশ গঠনে ছাত্রলীগ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
(ওপর থেকে) আক্রান্ত ছাত্রকে বাঁচাতে গিয়ে এই ছাত্রী বাধার মুখে পড়েন প্রক্টর ড. এম এ সালামের। ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুলতান উদ্দিন ভুইয়ার (গোল চিহ্নিত) সামনেই চলছে ছাত্রলীগের হামলা। ছাত্রলীগের হামলার সময় রাম দা হাতে এক সন্ত্রাসী
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতা-কর্মীদের ওপর গত মঙ্গলবার দুপুরে ছাত্রলীগের হামলার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন একাধিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা। হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে তাঁদের কেউই ভূমিকা নেননি। বরং আন্দোলনকারীদের 'শিক্ষা দিতে' হামলার ব্যাপারে তাঁদের কারো কারো উৎসাহ ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমনকি হামলার সময় কর্মকর্তাদেরও কেউ কেউ শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলেন বলে আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ধিত বিভিন্ন ফি বাতিলের দাবিতে মাসাধিককাল ধরে জোরালো আন্দোলন চললেও কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেয়। একই সঙ্গে আন্দোলনকারীরাও কঠিন আন্দোলনের পথে এগোতে থাকেন। ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্টের সমন্বয়ে গঠিত প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাঁদের লাগাতার আন্দোলনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবারের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মঙ্গলবারের অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে কয়েক দিন ধরেই ক্যাম্পাসে উত্তেজনা চলছিল। আন্দোলন বন্ধ করতে সোমবার থেকে প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদীয় করিডর ও প্রশাসন ভবনের সামনে সব ধরনের সমাবেশ, মিছিল ও মিটিং নিষিদ্ধ করে। এ কারণে গুঞ্জন ছিল এই কর্মসূচি চলাকালে বড় ধরনের কোনো অঘটন ঘটতে পারে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী অবরোধস্থল অর্থ্যাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে এসে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় সেখানে প্রক্টর ড. এম এ সালাম, ছাত্রবিষয়ক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. এ কে এম জাকির হোসেনসহ একাধিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের কেউ কেউ ছিলেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। এ সময় অবরোধস্থলে উভয় পক্ষে চলে বাদানুবাদ, একই সঙ্গে ঘটে কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা।
সূত্রগুলো জানায়, অনভিপ্রেত ঘটনার খবর মুহূর্তেই পেঁৗছে যায় ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কাছে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দলবেঁধে হামলা চালান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর। লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে, কিল-ঘুষি-লাথি মেরে ও ইট দিয়ে আঘাত করে গুরুতর আহত করা হয় প্রায় অর্ধশত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে। আন্দোলনকারীদের টেনেহিঁচড়ে করিডরে ফেলে বেদম প্রহার করা হয়। এ হামলা থেকে রেহাই পাননি উপস্থিত ছাত্রীরাও। অনেকে চরমভাবে লাঞ্ছিত হন হামলাকারীদের হাতে। হামলাকারীদের কেউ কেউ অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ ছাত্রীদের জামা-ওড়না ধরে টানাটানি করে মাটিতে ফেলে মারতে থাকেন। হামলায় আন্দোলনকারীদের মধ্যে ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সেঁজুতি, সাধারণ সম্পাদক কিশোরসহ বিপ্লব, ফরিদ, মিল্টন, মাহফুজ, শুভ, অজিত, জয়া, জ্যোতি, অর্পিতা, নাসিমা, রয়া, রানু, অ্যামি, মিলন, পার্থ, জাকিয়া, মাজহার, হিমেল, রয়া, জেরিন, আইভি, প্রিতুলা, গৌতম, ওবায়দুর, আরিফা, শোভন, সুমি, অন্যন্য, আসিফ, পল্লব প্রমুখ আহত হন বলে জানা গেছে। তাঁরা ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ার সেন্টারে চিকিৎসা নেন। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে প্রকাশ্যে এমন তাণ্ডবলীলা চললেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপর্যায়ের শিক্ষকরা ছিলেন নির্বিকার। আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন, হামলাকারীদের নিবৃত্ত করা তো দূরের কথা, কর্মকর্তাদেরই কেউ কেউ আন্দোলনকারীদের অনেকের গায়ে হাত তোলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েক কর্মকর্তা ও শিক্ষক ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালাতে তাঁদেরই কেউ কেউ ছাত্রলীগকে উৎসাহ দেন বলে অভিযোগ আহতদের অনেকের। প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ছাত্রলীগ মুহূর্তে হামলা চালায় আন্দোলনকারীদের ওপর। হামলার সময় কারো কারো আচরণ ছিল চরম উগ্র। কারো কারো হাতে ছিল রামদা।
এ ব্যাপারে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বাকৃবি শাখার সাধারণ সম্পাদক কিশোর আহমেদ বলেন, 'আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে প্রক্টর, পুলিশ ও ছাত্রলীগের বহু নেতা-কর্মী অতর্কিত হামলা করে প্রায় ৪০ জনকে আহত করেছেন। স্বয়ং প্রক্টর ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ছাত্রীদের লাথি মেরে আহত করেছেন। তাঁদের কাপড় ছিঁড়ে ফেলেছেন। এ ঘৃণ্য ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।'
আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ব্যাপারে বাকৃবি ছাত্রলীগের সভাপতি সামছুদ্দিন আল আজাদ বলেন, আন্দোলনকারীরা কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক এবং ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের সঙ্গে চরম অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এ ঘটনায় সাধারণ ছাত্ররা উত্তেজিত হন এবং এমন হামলার ঘটনা ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এম এ সালাম জানান, আন্দোলনকারীরা শুরু থেকেই ছিল আক্রমণাত্মক। তাঁরা কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও শিক্ষককে শারীরিকভাবে আঘাত করে। প্রক্টর আরো জানান, ঘটনার সময় তাঁর নিজের ক্যামেরাও ভেঙে ফেলে আন্দোলনকারীরা। স্যারদের ওপর হামলা হয়েছে_এমন খবর পাওয়ার পরই ছাত্ররা ঘটনাস্থলে ছুটে আসে এবং অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।
নিয়ামুল কবীর সজল
কালেরকণ্ঠ
১১/১০/২০১২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম
আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা
২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন
যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!
এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন
নিউ ইয়র্কের পথে.... ২
Almost at half distance, on flight CX830.
পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১
হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন
সামুতে আপনার হিট কত?
প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন