ছাত্রলীগ নেতার নামে টিকিট না পেয়ে রেলস্টেশনে ভাঙচুর
ট্রেন ছাড়ার আধা ঘণ্টা আগে ছাত্রলীগ নেতার নামে টিকিট চেয়েছিল একদল যুবক। টিকিট না দেওয়ায় তারা টিকিট কাউন্টারসহ আশপাশ এলাকায় ব্যাপক ভাঙচুর করে চলে যায়। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে রেলস্টেশন এলাকা অনেকটা যাত্রীশূন্য হয়ে পড়ে। নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা পর ট্রেন ঢাকার উদ্দেশে সিলেট ছাড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রাত নয়টায় দুজন যুবক টিকিট কাউন্টারে এসে উপবন এক্সপ্রেসের দুটি স্লিপিং টিকিট চান। ট্রেন ছাড়ার আধাঘণ্টা আগে স্লিপিং আসনের কোনো টিকিট থাকে না—জানান কাউন্টারে কর্তব্যরত ব্যক্তিরা। এ সময় তাঁরা জানান, মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি সুহেল আহমদ তাঁদের পাঠিয়েছেন এবং যেকোনোভাবে টিকিট জোগাড় করে দিতে বলেন। কাউন্টারে কর্তব্যরত ব্যক্তিরা তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়ায় রাত সাড়ে নয়টায় ৩০ থেকে ৪০ জনের একদল যুবক লাঠিসোঁটা নিয়ে টিকিট কাউন্টারে হামলা চালান। হামলাকারীরা ‘ছাত্রলীগকে টিকিট না দেওয়ার শিক্ষা দিচ্ছি...’ বলে দূর থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। এ সময় কাউন্টারে কর্তব্যরত ব্যক্তিরা দৌড়ে কাউন্টার ছেড়ে পালান। হামলাকারীরা প্রথমে টিকিট কাউন্টারের কাচের বেড়া ভেঙে দরজা, জানালা ও কম্পিউটার ভাঙচুর করেন। এ সময় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলাকারীরা রেলস্টেশনের ভেতরে প্রবেশ করে অভ্যর্থনা ও অতিথি কক্ষের দরজা ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে রেলওয়ে পুলিশ ও মহানগর পুলিশের দক্ষিণ সুরমা থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা চলে যান।
স্টেশনে অবস্থানরত যাত্রীরা জানান, ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ছাত্রলীগের হামলা ও ভাঙচুর চলে। এ সময় রেলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আত্মরক্ষার্থে দোতলার বিশ্রামাগারে গিয়ে আশ্রয় নেন। ইটপাটকেলের আঘাতে ও নিরাপদে আশ্রয় নিতে গিয়ে তিনজন যাত্রী আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিচে নেমে আসেন।
টিকিট কাউন্টার সূত্র জানায়, সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি সুহেল আহমদ দক্ষিণ সুরমা এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই তাঁর নামে বুকিং দিয়ে টিকিট নেওয়া হয়। গতকাল ট্রেন ছাড়ার আধা ঘণ্টা আগে স্লিপিং টিকিট চেয়ে না পেয়ে হামলা করা হয়।
গতকাল বুধবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ছাত্রলীগের নেতা সুহেলের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রাহাত তরফদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি অবশ্যই নিন্দনীয়। হামলায় সুহেলের নাম আসায় আমরা সুহেলের সঙ্গে রাতেই যোগাযোগ করেছিলাম। সুহেল আমাদের জানিয়েছেন, টিকিটের জন্য কাউকে তিনি কাউন্টারে পাঠাননি এবং হামলার সময় অন্য একটি কাজে তিনি নগরের রিকাবিবাজারে অবস্থান করছিলেন।’ তা হলে হামলাকারী কারা—এমন প্রশ্নে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি জানান, ‘যেহেতু ছাত্রলীগের নাম এসেছে, তাতে মনে হয়েছে ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে হামলা করা হয়েছে। সাংগঠনিকভাবে খোঁজ নিয়ে তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।
হামলা-ভাঙচুরের কারণে উপবন আধা ঘণ্টা পর যাত্রা করেছে জানিয়ে সিলেট রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ রাত সোয়া ১০টায় তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। তিনি কারও নাম উল্লেখ না করে জানান, একজন লোকের নামে টিকিট নিয়মিতই বুকিং দেওয়া হয়। গতকাল বুকিং না দিয়েই টিকিট চাওয়ায় তর্ক হয়। এর জের ধরে হামলা হয়েছে। রেলস্টেশন সূত্র জানায়, টিকিট কাউন্টারের কম্পিউটার, দরজা-জানালা, অভ্যর্থনা ও অতিথি কক্ষ ভাঙচুর হয়েছে। এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক রেলওয়ে পুলিশকে অবহিত করা হয়।
দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমেদ নাসির উদ্দিন জানান, হামলাকারীদের শনাক্ত করতে রাতেই পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। হামলাকারী যেই হোক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রথম আলো
১৮/১০/২০১২