somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গ একজন খেয়ানতকারী এবং ইমাম হুসাইন (আ.) এর বিচারকার্য

১৪ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাফেলা রওনা হওয়ার জন্য প্রস্তুত। উটদের চিৎকার এরই জানান দিচ্ছিল। শহরের অধিবাসীরা এই শব্দের অর্থ জানে। মদিনার আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল হতেও অনেক সফরের প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে কাফেলার উদ্দেশ্য রওনা হল। কেউ ঘোড়ার চড়ে, কেউ উটের পিঠে, আবার কেউ পায়ে হেটে। যার যেটা ছিল সেটা নিয়েই তারা বেরিয়ে পড়লো, উদ্দেশ্য একটাই; কাফেলার সাথী হওয়া। তাদের সবারই জানা যে, একটি লম্বা সফর
তাদের সামনে রয়েছে।

নতুন যাত্রিরা সংযুক্ত হওয়ার সাথে সাথে কাফেলার রূপ বৃহদাকার ধারণ করতে লাগলো এবং মদিনাকে পিছনে ফেলে কাফেলা প্রাণহীন মরুর বুক
চিরে গন্তব্যের দিকে এগুতে থাকলো।


হুসাইন (আঃ)ও উক্ত কাফেলায় যোগ দিয়েছিলেন।
তাঁর সাথে একটি ঘোড়া থাকা সত্ত্বেও তিনি ঘোড়ার লাগাম ধরে পায়ে হাটছিলেন।


কাফেলা আল্লাহর ঘর যেয়ারত করার উদ্দেশ্যে
শহর ত্যাগ করেছিল। কয়েকদিন আরবের মরু রাস্তা অতিক্রম করার পর অবশেষে মক্কার নিকটাবর্তী
হল। কোনরকম দুর্ঘটনা ছাড়াই এই রাস্তা অতিক্রম করায় যাত্রিরা খুবই খুশি।


কাফেলার যাত্রিরা কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর যেয়ারাতের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করলেন। তার একই রঙের “ইহরামের” পোশাক পরিধান করলেন যাতে করে সাতবার আল্লাহর
ঘরের তাওয়াফ করতে পারেন।


কা’বা মাসজিদুল হারামের উঠানে অবস্থিত এবং মসজিদুল
হারামের চতুর্দিক ছোট ছোট টিলা দ্বারা ঘেরা।


বেশ কিছু আশ্চার্য জনক জিনিষ সেখানে ছিল।
“যমযম”
কূপ যা ঐ লবনাক্ত মরুর মাঝেও বছর বছর ধরে যেয়ারতকারীদের মিষ্টি পানি দান করে আসছে এবং
একটি পাথর যার উপর ইব্রাহীমের (আঃ) পায়ের ছাপ এখনো পরিলক্ষিত হয়। পুরুষেরা একদিকে এবং
মহিলারা অপরদিকে, প্রজাপতিদের মত কা’বার চারপাশে তাওয়াফ করছিলেন।
এমন সময় এক মহিলা অনুভব করলো যে, একজন অপরিচিত পুরুষ তার
হাতে চাপ প্রয়োগ করছে। সে
আল্লাহর ঘরের নিকট এই ধরণের নোংরা কাজে খুবই রাগান্বিত হল এবং সেই খেয়ানতকারী ব্যক্তিটিকে
বলল:


-কেন আল্লাহর ঘরের সন্মান নষ্ট করেছো এবং
একজন মুসলমানের সম্ভ্রমে খেয়ানত করেছো।


লোকটি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে চাইল নিজের হাতটি
টেনে নিতে কিন্তু কোন লাভ হল না কেননা লোকটির হাত মহিলার হাতের সাথে জোড়া লেগে গিয়েছিল।
তারা উভয়েই হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু কোন লাভ হল না।


যেসব যেয়রতকারীদের তাওয়াফ শেষ হয়েগিয়েছিল
তার এই ঘটনার সাক্ষি ছিলেন। ঐ খেয়ানতকারী লোকটিকে গ্রেফতার করে তৎকালীন শাসকের নিকট যাওয়া হল। কেউ কেউ বলছিল লোকটিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া উচিৎ। আবার কেউ কেউ বলছিল তার হাত কেটে ফেলা হোক। সবাই কিছু না কিছু বলছিল। শাসক সকল বিচারকদেরকে রাজ প্রাসাদে
এসে সমবেত হওয়ার নির্দেশ দিলেন।


ঘোষণাকারী সমস্ত অঞ্চলে শাসনকর্তার নির্দেশ ঘোষণা করে দিল। কিছুক্ষন পরেই শাসনকর্তার
প্রাসাদে সবাই প্রবেশ করল।
শাসনকর্তা বিচারকদের উদ্দেশ্যে বলল ঐ খেয়ানতকারী ব্যক্তিটির বিরুদ্ধে হুকুম
জারী করতে।


শহরের বিচারকগণ অনেক চিন্ত-ভাবনা শলা-পরামর্শের
পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হল যে, খেয়ানতকারী লোকটির হাত
কেটে ফেলা হোক।


বিচারকদের রায়ে শাসনকর্তা তুষ্ট হল না এবং
গভীর চিন্তায় মগ্ন হল। হঠাৎ কিছু একটা তার মাথায় আসল এবং রক্ষীদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন:


- হুসাইন কি এই শহরেই আছে?


- রক্ষীগণ বলল: জ্বি! তিনি গতরাতে শহরে প্রবেশ করেছেন।


- শাসনকর্তা বললেন: সেই সর্বোত্তম ব্যক্তি যে এই বিষয়ের বিচার করতে সমাধান দিতে পারবে। সাথে সাথে এ বিষয়ে তাঁর মতামত জানার জন্য একজন লোককে প্রেরণ করা হল।


হুসাইন (আঃ) যখন ঘটনা সম্পর্কে অবগত হলেন, আল্লাহর ঘরে গেলেন এবং আল্লাহর নিকট দোয়া করলেন তারপর শাসকের প্রাসাদে গেলেন। তিনি কি বিচার করেন এটা দেখার জন্য তখনও সবাই অপেক্ষা
করছিল?
হুসাইন (আ.) উক্ত পুরুষ এবং মহিলার দিকে একবার দৃষ্টি দিলেব এবং অতি নিম্নস্বরে ঠোঁটের কোণে কিছু একটা বললেন এবং হঠাৎ করে লোকটির হাত মহিলার হাত হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।


শাসনকর্তা খুশি হয়ে হুসাইন (আ.) কে ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন:


এখন যে শাস্তিই আপনি এই লোকটির জন্য ধার্য্য
করবেন আমি নির্দেশ দেব সেটা পালন করার জন্য? তিনি বললেন : কোন শাস্তি দেবার প্রয়োজন
নেই! তাকে ছেড়ে দাও সে যেখানে খুশি চলে যাক। তার জন্য শাস্তি এটাই যথেষ্ট যে তার সন্মান
মানুষের সামনে নষ্ট হয়েছে।





হ্যাঁ যে ব্যক্তি পায়ে হেটে যেয়ারতে আসে
আল্লাহও তার দোয়া এভাবেই কবুল করেন।



০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×