somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধোঁয়া ধোঁয়া ভালোবাসা...................... পর্ব- ৩

০৭ ই নভেম্বর, ২০১২ ভোর ৪:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব- ১
পর্ব- ২

আজকের দিনটা যেন কেমন কেমন। সকালটা শুরু হলো প্রখর রোদ দিয়ে। কিছুক্ষন পর আবার মেঘলা মেঘলা।

আজকে শুক্রবার। ক্লাস নেই। তিতলির কেন যেন বাসায় থাকতে ভালো লাগছে না। বাবা সেই ৮টায় বাজারে গেছে, সাড়ে ১০টা বাজে এখনো আসছে না।
হঠাৎ করে বাবার ওপর ভীষন মেজাজ খারাপ হলো তিতলির।
"এই লোকটার যত বয়স বাড়ছে ততই যেন দিন দিন তার মাথা খারাপ হচ্ছে। কোনো কমনসেন্স নাই একদম। সেই কোন সকালে বাজারে গিয়েছে, এখন পর্যন্ত আসার নাম-গন্ধ নাই...!!! বাসায় কি হাজার হাজার মানুষ, যে পুরো কাঁচাবাজার কিনে আনতে হবে....!!!"

তিতলি মনে মনে বাবাকে ভীষন বকা দিচ্ছিল। এমনিতেই এখন বাসায় থাকতে ইচ্ছা করছে না, তার ওপর বাসায় বাবা নেই দেখে সে বের হতেও পারছে না। বাবাকে না বলে বাইরে গেলে বাবা খুব টেনশন করে।

বাবার কিছু কিছু ব্যাপারে তিতলি ভীষন বিরক্ত। এই যেমন মোবাইল ফোনের ব্যাপার। বাবার ভাষায়, 'মোবাইল রাখা মানে, স্বেচ্ছায় সারাক্ষন পকেটে যন্ত্রনা নিয়ে থাকা।'
তিতলি বাবাকে অনেকবার মোবাইল কেনার কথা বলেছে। তখন বাবা বলেছে, "আমার তো এসব যন্ত্রের কোন দরকার নেই। আমি কাউকে ফোন করি না আর আমাকে ফোন করার মত তেমন কেউ নেই। তাছাড়া বাসায় একটা টিএনটি ফোন তো আছেই। আর আমি তো বাইরে ঘুরঘুর করি না যে সারাক্ষন খোঁজ করা লাগবে।"

এখন তার সাথে একটা মোবাইল থাকলে তো অন্তত জানা যেত সে কোথায় আছে। আজকালকার প্রযুক্তি নির্ভর যুগে এমন একজন নামী, দামী লোকের হাতে একটা মোবাইল ফোন নাই.....!!! একথা ভাবলেই বাবার ওপর তিতলির ভীষন মেজাজ খারাপ হয়।

কিছুক্ষন পর বারান্দায় এসে তিতলি দারোয়ানকে ডাকতে থাকলো---
> ইদ্রিস চাচা, এই ইদ্রিস চাচা.......
> আম্মাজি আমারে ডাকছেন? কিছু লাগবে?
> বাবা কোন বাজারে গিয়েছে জানো?
> স্যার তো কিছু বইল্লা যায় নাই।
> ঠিক আছে। তুমি খেয়াল রাখো বাবা আসে কিনা।

তিতলি ড্রইং রুমে গিয়ে দেখে ফুলির মা ঘর মুছছে.......
> আম্মাজি কিছু লাগবে?
> হুম। চা খাবো। চার পানি বসাও। কড়া লিকার যেন হয়।
> কিছু খাইয়া লন। সকাল থেইক্কা তো কিছুই মুখে দেন নাই। টেবিলে নাস্তা দিছি, খাইয়া লন।
> এত বেশি কথা বলবা না। চা দাও তাড়াতাড়ি।

নিজের রুমে গিয়ে কম্পিউটার ওন করে বসলো সে। ইন্টারনেট মডেমটা কান্কেট করলো। ফেসবুকে লগইন করে দেখে ৩৬টা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট। এগুলো এখন তার দেখার ইচ্ছা হলো না। হোম পেজে গিয়ে দেখে, সবাই শুধু প্রেমময় স্ট্যাটাস দিয়ে রেখেছে। তিতলির ভাল লাগছিল না। সে ফেসবুক থেকে বের হলো।
পিসিতে ভলিউম বাড়িয়ে দিয়ে গান ছেড়ে দিলো। রুমের মাঝখানে রাখা রকিং চেয়ারটাতে বসে চোখ বন্ধ করে দুলতে দুলতে গান শুনছিলো সে।
বাপ্পা মজুমদারের গান হচ্ছিল, "একটু যদি তাঁকাও তুমি, মেঘ গুলো হয় সোনা। আকাশ খুলে বসে আছি, তাও কেন দেখছো না......."

তিতলি ধীরে ধীরে কোথায় যেন এক ভাবনার দেশে হারিয়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎ করে ফুলির মা বুয়া এসে ডাক দিলো---
> আম্মা চা লন।
> দাও। বাবা এসেছে?
> জে আইছে।
> ঠিক আছে, যাও।


তিতলি চায়ের মগ হাতে নিয়ে বাবার ঘরের দিকে গেল।
> কিরে মা, ইদ্রিস বললো তুই নাকি আমাকে খুঁজছিলি?
> হুম। আমি একটু বাইরে যাবো। তোমার আসতে এত দেরী হলো কেন?
> আর বলিস নারে মা। বাজার করতে করতে জান শেষ।
> এত কি বাজার আনলে?
> এনেছি অনেক কিছু। অনেকদিন তো বাড়িতে ভালো রান্না হয় না। আজ খুব শখ করে বাজার করলাম। তোর হাতের রান্নাও অনেক দিন খাওয়া হয় না। আজকে তুই রাঁধিস।
> বাবা আমি যে একটু বাইরে যেতে চেয়েছিলাম...........
> ঠিক আছে যাবি। রান্না করে, খাওয়া-দাওয়া সেরে তারপর যাস।
> আচ্ছা...
> শোন মা, বড় দেখে গলদা চিংড়ি এনেছি। চিংড়ির দোপেঁয়াজা করিস। টমেটো দিয়ে টেংরা মাছের ঝোল, খাশির মাংস ভুনা, কাতলা মাছের ঝোল, ইলিশ মাছের আল্লাভাঁজি করিস।
> এতকিছু একবারে খেতে পারবে?
> পারবো পারবো। তুই গিয়ে রান্না শুরু কর।
> আচ্ছা....

তিতলি তার ঘরে গিয়ে কম্পিউটার ওফ করে রান্নাঘরে গেল। রান্নাঘরের অবস্থা দেখে তার চোখ কপালে উঠে গেল! দুনিয়ার বাজার দিয়ে রান্নাঘর ভর্তি। ফুলির মা বেকুবের মত বসে আছে।
তিতলি কোমড়ে ওড়না পেঁচিয়ে কাজ শুরু করে দিল। ফুলির মাকে দিয়ে ফুট-ফরমাস করাতে লাগলো.............


রান্না শেষ করে গোসল সেরে তিতলি সুন্দর করে ডাইনিং টেবিলে খাবার সাঁজালো। এরপর বাবাকে নিয়ে খেতে বসলো।
বাবা খুব তৃপ্তি সহকারে খেতে লাগলো।
"তোর মেঝোফুপুর রান্না ছিল এক্সিলেন্ট। এরপর তোর মার রান্না। তোর মা অবশ্য তোর মেঝোফুপুর মত অত ভালো রাঁধতে পারতো না, তবে তার রান্নাও খুব স্বাদের হতো। তবে তোর রান্না ঐ দুজনের চেয়েও অসাধারন। আজকের রান্নার তো কোন তুলনাই চলে না, একেবারে ১০০ তে সাড়ে ৫০০!"
তিতলি কিছু বলছিল না। চুপচাপ খাচ্ছিল আর বাবার তৃপ্তি করে খাওয়া দেখছিল।


খাওয়া-দাওয়া শেষ করে তিতলি বাইরে যাওয়ার জন্য রেডি হতে থাকলো। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে সবসময় সে হালকা সেজেগুজে বের হয়। আজকে আরেকটু যত্ন করে সাজলো। প্রতিবার বাইরে যাবার সময় তার মনে হয়, যদি বর্ষনের সাথে একটু দেখা হয়..............


(চলবে...........)
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×