somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাবাসী বাবা।

১৪ ই মে, ২০১৭ রাত ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসা থেকে ফোন পেয়েই আবীর এর পাগল প্রায় অবস্থা।

বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়েছেন। কতটা মারাত্মক আবীর তা অনুমান করতে পারছেনা। তাকে শুধু বলা হয়েছে যে এক্সিডেন্ট হয়েছে এবং সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

বিকেল ৬ টায় বাসে চেপেছে। রাত ১২-১ টা বাজবে কুষ্টিয়া পৌঁছাতে। আবীরের ভালো লাগছে না, বাবার কথা মনে হচ্ছে খুব। না জানি বাবার কি হয়েছে, কতটুকু ক্ষতি হয়েছে। বাবাকে সে কখনোই সেভাবে কাছে পাইনি। ২২ বছর যাবত তার বাবা প্রবাসী। যখন তার বাবা আনোয়ার হোসেন যখন সৌদি আরব যান তখন আবীরের বয়স মাত্র ৪। প্রথমবার বাবা এসেছিলো ৫ বছর পর, তখন আবীর বাবাকেই চিনতেই পারেনি। সবসময় দূরে দূরেই থাকতো। তখন বাবা বলতো আয়রে আবীর, আমার বাবা আবীর কাছে আয় একটু। আবীর তবুও বাবার কাছে আসতো না, দূরে দুরেই থাকতো। মায়ের আচলে মুখ লুকাতো।

এবার বাবা একেবারেই এসেছেন, আর যাবেনা। জীবনের বাঁকি সময়টুকু ছেলে মেয়েদের সাথেই কাটাবে, সময় দেবে পরিবার কে।

আবীর বাবা মায়ের প্রথম সন্তান। মাস্টার্স শেষ করে চাকুরীর জন্য বসে আছ। বাবা যখন আসলেন, এয়ারপোর্ট থেকে আবীর গিয়েছিলো আনতে। সেখান থেকে সোজা কুষ্টিয়া। আবীর বাসায় বাবাকে রেখে ৩ দিন পরে ঢাকা চলে এসেছিলো। চাকুরীর কি যেন পরীক্ষা আছে এই জন্য দ্রুতই সে চলে এসেছিলো। এইতো সেদিনের কথা। গত সপ্তাহেই তো সে বাবা কে রেখে আসলো। একটু অভিমান করেই বাসা থেকে এসেছিলো সে। মাস্টার্স শেষ হয়েছে প্রায় এক বছর হয়ে গেছে, অথচ এখণ কেনো চাকুরী পাচ্ছেনা, নিজেকে কে কি আবীর ভালোভাবে প্রস্তুত করেনি চাকুরীর জন্য। বাবার প্রত্যাশা আর আবী্রের বাস্তবতা এই নিয়ে বাবার উপর একটু অভিমান ছিলো আবীরের।

বাবা সৌদি আরব থাকতেই ছোট বোন নীপার বিয়ে হয়ে যান। পাত্রী দেখতে এসেই বিয়ে। আবীরের চাচা নজরুল ইসলাম দায়িত্ব নিয়েই বিয়েটা দিয়েছিলো। এমন ছেলে নাকি হাজারে মেলেনা। হুট করেই বিয়ে, কোনো কিছুর আয়োজন নেই। একটা মাত্র মেয়ে এভাবে বিয়ে দিতে চাইনি আবীরের মা হুসনী আরা বেগম। আবীরের বাবা আসবে, বড় অনুষ্ঠান করে বিয়ে দেবে। সব আত্মীয় স্বজন আসবে, তাদের দাওয়াত করবে, মহা ধুমধামে একমাত্র কন্যাকে বিয়ে দেবে এই স্বপ্নটা হুসনী আরা অনেকদিন থেকেই দেখে আসছে। তবুও যখন ভালো পাত্র পাওয়া গেছে এই রকম পাত্র আর হাত ছাড়া করতে চাইনি নজরুল সাহেব। তখনই বাবাকে ফোন দিয়ে বিস্তারিত বলতেই বাবা বললেন আমিতো আসছিই একমাস পর, তখন নাহয় অনুষ্ঠান করা যাবে। এখন আপাতত বিয়েটা পড়িয়ে রাখুক।

বিয়েটা হয়ে গেলো সেসময়। বিয়েটা পড়িয়ে রাখা হয়েছিলো। আনোয়ার সাহেব দেশে আসলে তখন বিয়েটা উঠানো হবে মহা ধুমধামে। একমাস পরে আনোয়ার হোসেন দেশে আসলেন। নীপার জন্য গয়না, নীপার বড় তার জন্য এনেছেন দামী ঘড়ি। আবীরের বিয়ে দেবে সেজন্য আরো এক সেট গয়না। যখন দেশে আসলেন বাবা তখন তাদের পরিবারে আনন্দ হাসি আর সুখ দেখে কে।

আবীর তো ঢাকা চলে আসলো, চাকুরীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ভালোভাবেই। এবার ভাইভা। চাকুরীটা পেয়ে গেলেই একেবারে খুশীর সংবাদ টা নিয়েই বাসা ফিরবে সে। এমনই সংকল্প ছিলো তার।

আজ আনোয়ার হোসেন ও তার ভাই নজরুল ইসলাম মেয়ের শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলো বিয়ে উঠানোর জন্য একটা শুভ দিন ঠিক করতে। তারিখও ঠিক হয়েও গেছে। আগামী শুক্রবার এর পরের শুক্রবার। এবার বাসা ফিরে চলবে অনুষ্ঠান আয়োজনের। ফেরার পথেই ঘটলো এক্সিডেন্ট। আবীরের চাচা নজরুল ইসলাম অল্প আহত হলেও তার বাবা মারাত্মক আহত হলেন। সাথে সাথেই হাসপাতালে।

রাত প্রায় ১২ টা। আবীর ফোন দিলো মা কে, বেশ কয়বার দিলো। মা ফোন ধরেনা। নীপাও ফোন ধরছেনা। চাচা নজরুল ইসলামের ফোনে ফোন দিতেই চাচী ফোন টা ধরেন। জানতে চান এখন কি অবস্থা তাদের? চাচী বলেন ভালই আছেন। তুমি দ্রুত নেমেই হাসপাতালে চলে এসো।

বাস যখন তাকে নামিয়ে দেন, আবীর দ্রুত রিকশা নিয়ে হাসপাতালে চলে আসেন। ভাড়া মিটিয়ে একপ্রকার দৌড়ে ছুটে আসতে চাইলো। কিন্ত তার আগেই সব শেষ হয়ে গেছে। আবীর হাটু ভেঙ্গে বাবার পায়ের কাছে বসে পড়লো। আবীর একটু চাপা স্বভাবের, খুব শক্ত ধাচের মানুষ। কখনো তাকে কেউ কাঁদতে দেখেনি। আবীর নিজেও জানেনা সর্বশেষ সে কবে কেঁদেছিল। পুরুষ মানুষের কান্না তার একেবারেই অপছন্দ। কোনদিকেই সে তাকাচ্ছে না, তাকাতে পারছেনা। ইদানিং সে বাবাকে এড়িয়ে গেছে, সেভাবে কথা বলেনি। ভাইভার পরেই সে ভালো করে কথা বলতে চেয়েছিলো। গত ২ দিন কোনো কথায় হয়নি। সে তাকিয়ে আছে বাবার নিথর দেহটার দিকে। অনুতাপে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। মারা যাবার আগে সে বাবার পাশে থাকতে পারলো না। তার বাবাও পারলো না একমাত্র পুত্র কে যাবার আগে কিছু বলে যেতে।

আবীর নির্লিপ্তভাবে তাকিয়ে আছে বাবার দিকে। হঠাৎ মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতন আবীর কান্নায় আছড়ে পড়লো। প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছে আবীরের আর্তনাদ। ছড়িয়ে যাচ্ছে আর্তনাদের প্রতিধ্বনি পুরো হাসপাতাল জুড়ে।

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১৭ রাত ২:৩৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×