somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জ্বর !!

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাত টা আরো কিছুক্ষন কপালে রাখো।

না পারবোনা, কতবার রাখতে হয় হাত?

যতক্ষন বেঁচে আছি।

“চুপ চুপ” বলে উঠে

আমি কিছু বলার জন্য হা করেছি অমনি গুঞ্জা আমার মুখ টা চেপে ধরে তার হাত দিয়ে। ভাবখানা এমন যে সে কথা বলতে দেবেনা আমায়। আরো শক্ত করে চেপে ধরে, ফিসফিস করে বলে এসব কি বলা হচ্ছে?

আমি কিছু বলার জন্য মুখ থেকে গুঞ্জার হাত সরিয়ে নেবার জন্য তার হাত ধরেছি অমনি বলে কোন কথা হবেনা-তুমি চুপ করে থাকো। আর কক্ষনো যদি এমন কথা বলো তোমার কিন্ত খবর আছে।

আমি চুপ করে যাই। সুবোধ বালকের মত তার কথা গুলো শুনতে হবে এখন।

মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে ফেলে গুঞ্জা । তারপর বলে আচ্ছা জ্বর বাধালে কি করে?

রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম, জ্বর আমায় দেখে বেধে ফেলেছে।

ইয়ার্কি হচ্ছে?

ইয়ার্কি করলাম কোথায়? তুমি না আমায় জিজ্ঞেস করলে কিভাবে জ্বর বাধালাম।

আবার বেশি কথা বলা হচ্ছে?
দেখলাম গুঞ্জা রেগে যাচ্ছে। তাকে রাগাতে আমার ভালোই লাগে। রেগে গেলে সে চোখ বড় বড় করে তাকায় আমার দিকে আর ঠিক এই মুহুর্তে তার নাকে ঘাম জমতে থাকে। যতবারই গুঞ্জা রেগে যায় তখনই আমি মোবাইলের ফ্ল্যাশ দিয়ে তার ছবি উঠাই, ফ্ল্যাশ দিয়ে ছবি উঠালে নাকের ঘাম গুলো মুক্তার মত লাগে।

ওষুধ খেয়েছো? ধমকের সুরে জানতে চায় সে।

খাইনি।

গুঞ্জা র চোখ তখন বড় হয়ে গেছে, চোখেমুখে রাগ ফুটে উঠেছে। ক্যানো ওষুধ খাওয়া হয়নি?

খাওয়ার সময় পেলাম কখন?

ও সময় পাওনি?

না

আমায় এতবার ফোন করার সময় পেলে আর ওষুধ খাওয়ার সময় পাওনি?

নাহ পাইনি।

ধ্যাত বলে উঠে পরে গুঞ্জা । আমার মাথার কাছের জায়গা টা ফাঁকা হয়ে যায়। যাবার আগে থার্মোমিটার টা মুখের মধ্যে দিয়ে গুঞ্জা উঠে যায়। গুঞ্জা উঠার পর আমি চোখ বন্ধ করে থাকি।

এই যে স্যার খাবার পানি কোথায়? গুঞ্জা জিজ্ঞেস করে।

বোতলে।

সেই বোতল টা কোথায়?

টেবিলের উপর আছে।

আপনার রুমে টেবিল কয়টা আছে স্যার?

আমি বিড়বিড় করে বলি ক্যানো টেবিল তো ছিলো একটা এই রুমে?

না নাই টেবিল।

দেখো পাশের রুমে বোতলের উপর দুটো টেবিল আছে।

কি বকছো আবোলতাবোল তখন থেকে? মাথা খারাপ হলো নাকি? খানিক চুপ থেকে বলে বোতলের উপর টেবিল মানে কি?

আমার চোখ লেগে এসেছে। ঘুমের মাঝে আধো স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি। গ্রামের বাসার বারান্দায় চেয়ার নিয়ে বসে আছি, হাতে হুমায়ূন আজাদ এর “নারী” বইটা। বইটা পড়তেছিলাম এমন সময় একটা দোয়েল ডেকে উঠে। বই থেকে চোখ উঠিয়ে সজনে গাছের ডালের উপর বসা দোয়েল টার দিকে চোখ যায়। কার্তিকের এমন অবেলায় দোয়েল টা এত সুন্দর করে ডাকছে যে বইয়ের দিকে আর নজর যাচ্ছেনা। এত সুন্দর করে দোয়েল ডাকে আগে খেয়াল করা হয়নি। আমি চেয়ার থেকে উঠে গ্রিল ধরে তাকিয়ে থাকি, তখনো দোয়েল টা ডেকে যাচ্ছে। বুকের মধ্যে কেমন শান্তি লাগছে ... অবেলায় এমন মধুর ডাক বুকের মধ্যে তিরতির করে ভালো লাগা ছুয়ে যাচ্ছে।......

মোনা চোখ খুলো...ও মোনা।
গুঞ্জার কথায় সম্বিত ফিরে পাই। মুখ থেকে থার্মোমিটার বের করে উচু করে থার্মোমিটার দেখতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো সে। উলটিয়ে পাল্টিয়ে দেখে কি মনে করে ঝাকিয়ে ঝুকিয়ে আবার মুখে দিয়ে দিলো থার্মোমিটার টা। বলে থার্মোমিটার কি নষ্ট হয়ে গেলো নাকি?

আমি তখনও চোখ বন্ধ করে আছি।

খানিক বাদে গুঞ্জা আবার বলে মোনা একটু উঠে বসো।

আমি উঠে খাটের উপর পা জড়ো করে কাথামুড়ি দিয়ে বসি।

আমার সামনে গুঞ্জা দাঁড়িয়ে আছে হাতে পানির গ্লাস নিয়ে।

পানি ক্যানো? আমি জিজ্ঞেস করি।

স্যারের মাথায় দেবো। বলেই এগিয়ে আসে আমার কাছে। থার্মোমিটার টা মুখ থেকে বের করে বলে হা করো এখন?

আমি হা করলাম। আমার মুখে দুইটা ওষুধ দিয়ে গ্লাস টা মুখে ধরেন গুঞ্জা ।

নাও ওষুধ টা খেয়ে নাও।

আমি ওষুধ খেয়ে আবার শুয়ে পড়ি। একেবারে সুবোধ বালকের মত। স্কুলে পড়া না পারলে স্যারেরা যেভাবে বলতো ঠিক সেভাবেই আমি তার কথায় ওষুধ খেয়ে ফেলি।

আমার মাথায় একটু হাত রাখবে? খানিক বাদেই আমি গুঞ্জাকে বলি।

না রাখবো না। কয়বার রাখে হাত?

আমি কিছু বলিনা, চুপ করে যাই।

আমার মোবাইল টা বেজে উঠে তখন।

হাতে নিয়ে দেখি স্ক্রিনে মায়ের নাম্বার টা ভেসে উঠেছে।

কে ফোন করেছে? গুঞ্জা জিজ্ঞেস করে।
আম্মা ফোন করেছে।

দাও বলে ফোনটা নিয়ে সে পাশের রুমে চলে যায়। অনেক্ষন ধরে কথা বলে। কি এমন কথা কে জানে। মেয়েরা যেখানে যায় সেখানে কিভাবে কিভাবে যেন কথার বাগান সৃষ্টি করে ফেলে।

রুমের মধ্যে আমার একা ভালো লাগেনা। পাশের রুম থেকে গুঞ্জা র কথা অস্পষ্টভাবে ভেসে আসে-কি যেন বিড়বিড় করে বলতেই থাকে। আমি বিছানা থেকে উঠে দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসি। বিছানার সামনে চেয়ারের উপর পানির গ্লাস টা রাখা, তার পাশে এক পাতা ওষুধ। ওষুধ টা হাতে নিয়ে দেখি নাপা। পাতায় ৮টা ওষুধ এখনো অক্ষত আছে। পাগলিটা ২ টা ওষুধ আমায় খাইয়েছে।

আচ্ছা গুঞ্জা ওষুধ পেলো কোথায়? আমার বাসায় তো নাপা বা এই জাতীয় ওষুধ তো কিনি নাই কয়েকদিনের মধ্যে। নাকি আগে কিনেছিলাম? আমি মনে করতে পারলাম না। আচ্ছা ওষুধ যদি আগে কিনেও রাখী তাহলে সে খোঁজ পেলই বা কেমন করে? আমিতো ওষুধ বাক্সের মধ্যে এমন ভাবে রাখি মাঝে মধ্যে আমিই খুজে পাইনা। গুঞ্জা কিভাবে পেলো খোঁজ? সে তো কখনো আমার বাসায় আসেনি, কোথায় কি আছে তাও জানেনা। অবশ্য না জানলেও তার সমস্যা নাই, আমি দেড় মাস ধরে যে বাসাটা সাজিয়ে গুছিয়ে রাখছি তাতে ওর ১ ঘন্টা ঘুরেফিরে দেখলেই বাসার আনাচে কানাচে তার মুখস্ত হয়ে যাবে। কিন্ত সে তো বাসায় এসে ঘুরে ফিরে দেখার সময় পেলো কোথায়? সারাক্ষন তো আমার পাশেই বসে ছিলো।

তিন মাস আগে ও আর আমি মিলে বাসাটা যখন প্রথম দেখতে আসলাম সেবারের পর তো সে আর আসেনি। তার পছন্দেই বাসা নেওয়া হলো অথচ বাসা চেঞ্জ করার দিনে বলেছিলাম আসো। অথচ সে আসেনি। বিয়ের আগে সে আসবে না আমার বাসায়। তারে নিয়ে পান্থপথ, মিরপুর, কাজীপাড়া ঘুরে ঘুরে পছন্দ করে করে ঘরের আসবারপত্র যখন কিনতাম তখন সারাদিন আমার সাথে থাকতো। ফার্নিচার নিয়ে বাসার নিচ অবধী আসতো কিন্ত বাসায় আসতো না।

আমি যদি বলতাম আসো তখন সে বলতো সারাদিন থাকলাম তাও হলোনা।

আমিও দুষ্টুমি করে বলতাম না হয়নি।

গুঞ্জাও কম যায় না, সেও বলে বিয়ের আগে ঘনঘন বাসায় ডাকছো অন্য মতলব আছে নাকি?

আমি হেসেই উড়িয়ে দেই তার কথা। বলতাম তুমি দেখিয়ে দাও কোথায় এই খাট বিছাবো, কোথায় সোফা টা রাখবো।

দুষ্টুমির মুড থেকে হুট করে সিরিয়াস হয়ে গুঞ্জা বলে, উহু তা হবেনা।

ক্যানো?

তুমিই সাজাও।

আমি সাজালে যদি তোমার পছন্দ না হয়?

আচ্ছা তুমি আমাকে আয়না ভাবো ক্যানো?

মানে?

এই যে বলছো আমার যদি পছন্দ না হয়?

হ্যা বলছি তো ।

আমার পছন্দে সব সাজাতে হবে ক্যানো? তোমার কি পছন্দ নাই?

সংসার করবো দুজনের পছন্দ অপছন্দ থাকবে না? দুজনে মিলেই তো সাজাবো তাইনা?

হ্যা থাকবে, কিন্ত দুইজনের হুবহু এক পছন্দ থাকবে ক্যানো?

আমি কপট বিরক্ত নিয়ে কিছু বলতে চাই। সে বাধা দিয়ে বলে তুমি সাজালে কি সেগুলো কি আমার পছন্দ হবে না?

হবে কিন্ত তবুও......।।

আমার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলে, আবার তবুও ক্যানো? আমি যা করবো তাই তোমাকে করতে হবে ক্যানো? দুজনের তো পছন্দ অপছন্দ থাকবে তাইনা। কিন্ত তুমি আমার মাঝে তোমাকে খুজো কিংবা তোমার মাঝে আমাকে খুজো। দুজনই যদি হুবহু এক হই তাহলে আমায় বিয়ে করিও না। আয়না দেখে নিও দুজন মানুষ পেয়ে যাবা। তাকে দেখে বাকী জীবন কাটিয়ে দিও।

আমি কিচ্ছু বলতে চাই। আমাকে থামিয়ে গুঞ্জা আবার বলা শুরু করে, দুজন দুজনের মাঝে সাদৃশ্য না খুঁজে তোমার যা কিছু অমিল আছে আমার সাথে সেখানে ভালোভাসা খোঁজা, ভালবাসতে পারাটাই বেশি গুরত্বপূর্ন তাইনা?

কি ব্যাপার হাতে ওষুধের প্যাকেট নিয়ে বসে যে? খাবে নাকি আরো দুটো? বলতে বলে গুঞ্জা আবার রুমে আসে।

ওষুধ কোথায় পেলে আমি জানতে চাই।

দোকানে ছিলো।

আবার ইয়ার্কি করো।

তুমিই বা কম কিসের? জ্বরের ঘোরেও তো আমার সাথে ইয়ার্কি করো।

আচ্ছা ঠিক আছে বলে আমি অন্যদিকে ঘাড় ফিরে তাকাই।

গুঞ্জা হয়তো বুঝতে পেরেছে কথাটা আমার হজম হয়নি। তাই সে এগিয়ে এসে বললো আধাঘন্টা আগে দোকানে ছিলো, আসার পথে নিয়ে আসলাম। আমি জানতাম মশাই এর কাছে ওষুধ থাকবে না। তাই নিয়ে এসেছি।

আম্মা কি বল্লো? জিজ্ঞেস করি আমি।

কিছু না।

তাহলে এতক্ষন কি কথা বললে?

সব কথা তোমায় শুনতে হবে ক্যানো?

ও আচ্ছা বলে আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি আম্মার সাথে গুঞ্জা র কথা হয়েছে ২ মিনিট ৩৭ সেকেন্ড। অথচ আরো অনেক বেশি সময় সে পাশের রুমেই ছিলো।
আমি বলি পাশের রুমে কি শুয়ে বিশ্রাম করছিলে?

মানে?

মায়ের সাথে কথা বললে আড়াই মিনিট কিন্ত রুমে ছিলে তো অনেক্ষন।

সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গুঞ্জার কপালে ভাঁজ ফেলার এক বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমার মত কপাল ভাঁজ করাটা গুঞ্জা প্রায় সময় প্র্যাক্টিস করার চেষ্টা করে অথচ কিছুই হয়না। কিন্ত সেই সময় তাকে সবচেয়ে সুন্দর দেখায়।

তার কপালে ভাজ টা আরো সুন্দর করার জন্য আমিও কপাল ভাজ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকি।

কিন্ত সে আর কপাল ভাঁজ করেনা। হুট করে কপাল স্বাভাবিক করে আমার দিকে এগিয়ে আসে। আমি খাটে পা ঝুলিয়ে বসে আছি। আমাকে এসেই জড়িয়ে ধরে গুঞ্জা ।
হু হু করে কেঁদে উঠে। আর জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। খুব বেশি কষ্ট পেলে গুঞ্জা এমন করে কাঁদে।

আমি বলি কি হলো তোমার এমন করে কাঁদছ ক্যানো? আম্মা কিছু বলেছে তোমায়?

সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে না কিছু বলেনি।

তাহলে কাঁদছ ক্যানো এমন করে।

১০৩ ডিগ্রী জ্বর তোমার। আমার খুব কষ্ট লাগছে, কপালে হাত রাখলে আমার শরীর পুড়ে যাচ্ছে।

কই আমার তো লাগছে না।

তখন থেকে ভুলভাল বকছো। বোতলের উপর টেবিল বসিয়ে দিচ্ছো। গা পুড়ে যাচ্ছে আর বলছে যে কিছু মনে হচ্ছেনা।

চলো তোমাকে আমার বাসায় নিয়ে যাবো। বলেই গুঞ্জা আরো শক্ত করে আমায় ধরে।

বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ না করেই যাবো শ্বশুর বাড়ি?

ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে কাদতে গুঞ্জা বলে বিয়ে তো হয়েছেই।

হুম হয়েছে কিন্ত তোমায় তো উঠানো হয়নি।

না হোক তুমি চলো। তোমাকে এমন অবস্থায় রেখে আমি যেতে পারবো না।

আরে পাগলি তুমি ওষুধ খাইয়ে দিলে তো, আমি ঠিক হয়ে যাবো এখন।

গুঞ্জা র গাল বেয়ে পড়া পানি আমার কপালে এসে পড়ছে টপটপ করে। আমি ওকে শক্ত করে ধরি। বাসায় ফোন দাও, সবাইকে ঢাকায় আসতে বলো। আজকেই আমায় উঠিয়ে আনো। গুঞ্জা ফিসফিস করে বলে।

আমি বিছানা থেকে উঠে তার গালে হাত দিয়ে বলি তুমি এত ভেঙ্গে পড়ছো ক্যানো? আমিতো সুস্থ হয়ে যাবো। তুমি এমন করে কাঁদলে কি আমি অসুস্থ হয়ে থাকতে পারি?

গুঞ্জা ঠোঁট উল্টিয়ে বলে ইশ! তুমি বোধহয় আমায় চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার টা এবারই এনে দেবে। এমন এমন তোমার সব থিওরি। আমি কাঁদলে নাকি তোমার জ্বর ভালো হয়ে যাবে?

আমি কপালে ভাঁজ এনে তাকাই তার দিকে।

গুঞ্জাও কপালে ভাঁজ আনার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। আপার্থিব সৌন্দর্য। আমার বুকের ধুকপুক শুরু হয়ে গেছে। আমি আমার নাক গুঞ্জার নাকের কাছে লাগাতেই দেখি কোথা থেকে একটা হাত এসে দুইজনের ঠোঁটের মাঝে বসে গেছে।

উঁহু এখন না। আর ১৭ দিন ১৬ রাত পর। বলেই নাক সরিয়ে নেয়।
আমি ঠোঁট সরিয়ে নিই। ১৭ তম রাতের জন্য জমা রাখি।

আমায় ছেড়ে দিয়ে বলে তুমি একটু এদিক দিয়ে শুয়ে পড়ো, তোমার মাথায় একতু পানি দিয়ে দিই।

আমি বলি পানি দিতে হবে না।

ক্যানো দিতে হবে না? অনুষ্ঠানের আগেই জ্বর বাধালে এবার আমার কথা মত চলো।

আমিও আবারো সেই সুবোধ বালকের মত শুয়ে পড়ি, ঠিক যেমন স্কুলে পড়া না পারলে টিচারের কথামত বেত আনতে যেতাম।

মাথায় পানি দিতে দিতে গুঞ্জা ফিসফিসিয়ে গান ধরে......

...যখন বেলা-শেষের ছায়ায় পাখিরা যায় আপন কুলায়-মাঝে,
সন্ধ্যাপূজার ঘণ্টা যখন বাজে,
তখন আপন শেষ শিখাটি জ্বালবে এ জীবন -
আমার ব্যথার পূজা হবে সমাপন......

গান শুনে আমি চোখ মেলে তাকাই।
তখনো গুঞ্জা আনমনে গান বলেই যযাচ্ছে, আমার চোখে চোখ পড়তেই গান বলা থামিয়ে দিয়ে বলে উঠে বসো, মাথা মুছিয়ে দিতে হবে।

আমায় বসিয়ে গুঞ্জা তোয়ালে এনে আমার মাথার উপর রেখে বাথরুমে চলে যায়। বাথরুম থেকে এসে দেখে আমার মাথায় তোয়ালে ঠিক সেই অবস্থায় আছে।

মাথা মুছে নাও নি যে?

আমি বলি মুছিয়ে দাও।

গুঞ্জা এসে আমার মাথা মুছিয়ে দিচ্ছে। আর ফিসফিস করে বলে এই বাচ্চাটাকে কোলেপিঠে করে শিখিয়ে পড়িয়ে মানুষ করে নিতে হবে আমার।

আমি আমার মাথাটা গুঞ্জার বুকের মাঝে রাখি। ফিসিফিসিয়ে আমিও বলি এই বুড়ো মানুষ টা সবসময় তোমার কাছে বাচ্চা হয়েই থাকবে, বড় হবে না।

গুঞ্জা আমায় কাছে টেনে নিয়ে কপালে একটা আদর দিয়ে দেয়। বলে আজ বিকেলে জ্বর একটু কমলে ঘুরবো দুজনে হ্যা?

কোথায় যাবে?

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ...বলেই গুঞ্জা হেসে ফেলে।

আমি কপাল ভাঁজ করে গুঞ্জা র দিকে তাকিয়ে থাকি। সেও কপাল ভাজের বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমি বলি দাড়াও তোমার একটা ছবি উঠাই।

গুঞ্জা কপাল ভাঁজ করা অবস্থায় বলে ক্যানো আমার কি নাক ঘেমে যাচ্ছে?

আমি কিছু বলিনা। কপাল ভাঁজ করে রাখা অবস্থায় গুঞ্জা কথা বললে অনেক সুন্দর লাগে। আগে তো কখনো এত কাছে থেকে খেয়াল করিনাই। আমার চোখ থেকে ৩-৪ ইঞ্চি দুরত্বে তার নাক। তার নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছিলো, ঠোঁট থরথর করছিলো। আর আমার বুকের ধুকপুকানিটা টের পাচ্ছিলাম খুব, মাঝরাতে ঘড়ির কাটার যেমন শব্দ হয় ঠিক তেমন শব্দ । আমি চাচ্ছিলাম গুঞ্জা আরো কথা বলুক এই অবস্থায়। আরো কিছুক্ষন দেখি তারে। এমন সুন্দর দৃশ্য সবসময় দেখা যায়না। বললাম কই যেন যাবে বলছিলে?

কপালে ভাঁজ রেখে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বলে ঠোঁট উল্টিয়ে থাকে।

আমি থ হয়ে তাকিয়ে থাকি। এমন সুন্দর দৃশ্য দেখার জন্য মাঝে মাঝে জ্বর আসা ভালো। কেউ আমার কপালে জলপটি দিক বা না দিক এমন করে তাকালেই অসুখ এমনিতেই সেরে যাবে। যাচ্ছেও। আমার কপাল ঘামতে শুরু হয়ে গেছে। বোধহয় জ্বর নামতে শুরু করেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:২৯
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×