আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছি এক দশক হয়ে গেল।
প্রথম বর্ষে থাকতে একবারই সংগ্রহ করেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অমূল্য নিদর্শন--আইডি কার্ড টি। মানিব্যাগে তখন মানি নেই, কিন্তু গর্বভরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াই।
প্রথম বর্ষে সংগ্রহ করা সেই কার্ডটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয় ২০০৬ সালে। জ্ঞানী লোকেরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্বের কখনও মেয়াদোত্তীর্ণ হয় না। ছাত্রত্বের মেয়াদ উত্তীর্ণ না হলে ছাত্রের পরিচয় পত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে কেন?
সেই যুক্তিতেই ১৫-১৬ বছর আগে মেয়াদ ফুরানো পুরনো সেই আইডি কার্ড টি আজও পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়াই।
মনে মনে স্বপ্ন, কোন একদিন সুযোগ আসবে, আমি আমেরিকান সিনেমা-সিরিয়ালে দেখা FBI-এর মতো করে আমার মানিব্যাগে সযতনে রাখা আইডি কার্ডটি দেখিয়ে দেব।
বল বাহুল্য সেই সুযোগ এত বছরেও আসেনি।
ছাত্র জীবন গেল। পেশা জীবনও যায় যায় অবস্থা।
পেশাজীবনে এমন কোন হাতি-ঘোড়া হয়ে যাইনি যে সেরকম কোন আইডি কার্ড থাকবে। অফিসের কার্ড একটা আছে, সে কেবল আমার অফিসেই চলে, বাকি দুনিয়ায় সেই কার্ড অচল।
অন্তত এতদিন আমার তাই ধারণা ছিল।
কিন্তু করনা ভাইরাস সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিল।
বাকি দুনিয়ায় অচল অফিসের সেই আইডি কার্ডটিই আজ আমার FBI-James Bond এর আইডি কার্ড!
খিলগাঁও রেইল গেইট-এ কর্তব্যরত পুলিশ আরও কয়েকজনের সাথে আমার রিকশাটিও আটকালেন। আমি FBI স্টাইলে আমার আইডি কার্ডটি দেখালাম।
কার্ড দেখামাত্র আমার রিকশাটি ছেড়ে দিলেন তারা!
পেছনে দেখা গেল, কয়েকটি রিকশার যাত্রী নামিয়ে রিকশা উল্টে দিতে!
করোনার মৃত্যুঝুকির চেয়ে আইডি কার্ড দেখে আমার রিকশা ছেড়ে দেওয়ার সুখই আমার কাছে বড় সুখ হয়ে দেখা দিল!
একেই বোধহয় বলে, পাগলের সুখ মনে মনে...
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৪৫