somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন প্রিয় মানুষ "হুমায়ুন আহমেদ" এবং আমার কৈশোরের ঘোর লাগা কিছু স্মরনীয় মুহূর্ত।

২০ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৩:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জোৎস্নার রাত। শহরের ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে খালি পায়ে হেটে চলেছি। পরনে জিন্সের প্যান্ট, গায়ে খয়েরী রঙ্গের পান্জাবী। খুব ইচ্ছে ছিল হলুদ রংয়ের পান্জাবী পড়ে খালি পায়ে এরকম জোৎস্নার রাতে হাটার। কিন্তু সে ইচ্ছা অপূর্ন থেকে গেল। কারন আমার তো কোন হলুদ পান্জাবী নেই। তাই বাধ্য হয়েই........। এভাবে হাটতে হাটতে কখন যে মূল রাস্তা থেকে সরে গিয়ে অচেনা পাড়ার অচেনা একটা রাস্তা দিয়ে হাটতে শুরু করেছি, বুঝতেই পারিনি। কিন্তু যখন ঘোর কাটল, বুঝতে পারলাম একটা বাড়ীর গেটের সামনে দাড়িয়ে আছি। সামনে আর রাস্তা নেই...।



ভয় পেয়ে গেলাম। কারন এলাকার এই রাস্তাটাতে এর আগে কখনোই আসিনি। তাই রাস্তাটা একেবারেই অপরিচিত। সেই রাস্তা দিয়ে কিভাবে আবার বাড়ীতে ফিরে যাব, সেই চিন্তায় সেই জোৎস্নার রাতেও ঘেমে যেতে শুরু করলাম। সেই সাথে নতুন একটা আতংক মাথায় ভর করল!! যেহেতু মোটামুটি পাগলের মত রাস্তা দিয়ে হাটছি এবং সেই সাথে একটা অচেনা রাস্তায় কিছুটা দিকভ্রান্ত হয়ে অসহায়ত্ব অনুভব করছি এবং ব্যাপারটা আমার চোখে মুখে ফুটে উঠেছে!! সব মিলিয়ে হুজুগে বাংগালীর কাছে আমি একটা সন্দেহজনক ক্যারেক্টার!!! যে কেউ চাইলেই চোর-ছ্যাচ্চোড় ভেবে আমাকে রিমান্ডে নিতে পারে। এসব ভেবে ঘন্টাখানেক আগের ঘোর কেমন জানি আতংকে পরিণত হল। সেই বাড়ীর সামনের রাস্তায় দাড়িয়ে প্রতিজ্ঞা করলাম যে, এই যাত্রায় যদি ভালোয় ভালোয় রক্ষা পেয়ে যাই তো, জীবনে আর কখনোই হুমায়ুন আহমেদের "হিমু" হতে যাবনা!!!



অবশেষে কিভাবে কিভাবে যেন বাড়ীতে ফিরে এলাম। তবে বাড়ীতে ফিরে আসার পরেও ঘোরটা কেমন জানি কাটলনা। বরং আরো ঘোরের মধ্যে পড়ে গেলাম। এইবার পরিকল্পনা করলাম, দল বেধে জোৎস্না দেখতে যাব। কিন্তু আগেরটার চাইতে এটা আরো বেশী জটিল মনে হতে লাগল। দল বেধে দল কোথাও যাওয়া মানেই এক ধরনের পিছুটান। অন্যদের ইচ্ছে অনিচ্ছের উপর নির্ভর করে আমার সমস্ত কার্যাবলী আবর্তিত হবে- এটা ভেবেই কেমন জানি বিরক্ত লাগল। তবুও জোৎস্না দেখার জন্য একটু আকটু স্যাক্রিফাইজ তো করতেই হবে। ভাবলাম সেন্টমার্টিন যাব কয়েকটা দিনের জন্য। জোৎস্নার রাতে সেখানে গিয়ে আড্ডা দিতে দিতে চাঁদ দেখব!! কয়েকটা বন্ধুকে রাজিও করালাম। ওরা ঘুরতে যাবে, আর আমি জোৎস্নার রাত সবার সাথে উপভোগ করার পাশাপাশি একটু আকটু ঘুরাঘুরি করব। যদিও আমার এই পাগলামীর কথা কেউ জানেনা। প্রস্তুতির অনেকখানিই সম্পূন্ন করেছিলাম। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই পাগলামীকে পূর্নতা দিতে পারিনি!!!



এভাবে হিমু হওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে অতিকান্ত হতে থাকে আরো কিছুটা সময়। রিক্সাওয়ালাকে পাঁচ টাকার ভাড়া বিশ টাকা দিয়েছি, মাঝে মাঝেই জোৎস্নার রাতে খালি পায়ে হেটেছি অনেকটা পথ, কটকটে হলুদ রংয়ের পান্জাবী কিনতে পারিনি ঠিকই, তবে হালকা ঘীয়ে রংয়ের পান্জাবী কিনেছি, সবসময় জগৎ সংসার সম্পর্কে উদাসী মনোভাব দেখাতে চেষ্টা করেছি, বন্ধু ও পরিচিত মহলে দার্শনিক টাইপের কথা বলে বিরক্তির কারন হয়েছি এবং একটা সময় স্কুলে কিছু বন্ধুবান্ধবে বুঝিয়ে দিয়েছি যে আমার ডাকনাম "হিমু"!!! আর এসব ঘোর আর পাগলামীর মূলে ছিল আমার প্রিয় মানুষ "হুমায়ুন আহমেদ" আর তার সৃষ্ট চরিত্র "হিমু"



এভাবে চলতে থাকে ঘোর লাগা আরো কিছু মুহূর্ত। পরিচয় হয়ে যায় মিসির আলীর সাথে!! যুক্তিহীনতা আর পাগলামীকে ধরে রাখতে পারিনা। জগৎ সংসারের প্রাকৃত-অতিপ্রাকৃত ব্যাপারগুলোকে যুক্তির কষ্টিপাথরে ছোঁয়ানোর চেষ্টায় মত্ত হয়ে যাই। নিজের মাঝে আরেকজন মিসির আলীকে অনুভব করতে শুরু করি!! আবিস্কার করি আমার মাঝে অন্য এক "আমি" কে!!!



একই মানুষের মাঝে ভিন্ন ভিন্ন সত্ত্বার পরিচয় আমার এই প্রিয় মানুষ "হুমায়ুন আহমেদ" এর কারনেই অনুভব করতে পারি একসময়। আজ এই মানুষটা আমারে মাঝে আর নেই। বিদায় নিয়ে চলে গেছেন এক অজানা না ফেরার দেশে। হিমু, মিসির আলী আর শুভ্রকে আমরা কখনোই ফিরে পাবনা!! এদের সৃষ্টাকে নিয়ে কখনোই তেমন ভাবে ভাবা হয়নি। তবে আজ এই অবেলায় কেবলি মনে হচ্ছে- এই মানুষটাকে মনের অগোচরে কখন যেন বড্ড বেশী ভালোবেসে ফেলেছি!!



দোষত্রুটি নিয়েই একজন মানুষ। আর আমার এই প্রিয় মানুষটাও দোষত্রুটির উর্ধ্বে নয়। জীবনের চলার পথে উনি হয়তোবা সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারেননি। উনার প্রতি কিছু মানুষের হতাশা, অভিযোগ, ক্ষোভ থাকাটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। এতকিছুর পরও আসুন আমরা প্রার্থনা করি- সৃষ্টিকর্তা যেন এই মানুষটাকে অন্য জগতেও সুখে শান্তিতে রাখুক, উনার জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিক এবং উনার বিদায়ে উনার শুভাকাঙ্খীদের ধৈর্য ধারন করার তৌফিক দান করুক। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৩:৩২
২২টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×