ভারত: ৩৭০/৪(৫০)
বাংলাদেশ: ২৮৩/৯(৫০)
ফলাফল: ভারত ৮৭ রানে জয়ী...
স্কোর ক্রিকেটের খুব মজার একটা বিষয়। একসাথে যেমন পুরো চিত্রটা তুলে ধরে তেমনি আবার তুলে ধরেনা অনেক কিছুই। স্কোর কখনো তুলে ধরবেনা শেবাগের ঔধত্য, দাপট, অহংকার আর অমানবীয়-হিংস্র ব্যাটিং, তেমনি তুলে ধরবেনা বাংলাদেশী বোলারদের অসহায় আত্মসমর্পণ..। ঠিক তেমনি স্কোর কার্ড কখনোই তুলে ধরবেনা কিছুটা নিষ্প্রভ তামিমের দাঁত কামড়ে লড়ে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস, আর সাকিব-রকিবুলদের সাধ্যমত ব্যাটিং প্রয়াস। কিন্তু শেষমেষ মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় ওই স্কোরটাই..। ভারত ৮৭ রানে জয়ী..
কালকের খেলা আসলে আমাদেরকে জাতিগত ভাবে একটা নাড়া দিয়ে গেল। অনেক স্বপ্নের-নিজের দেশের মাটিতে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে জয়টাই প্রত্যাশিত ছিল আমার মতোই বাকি সকলের। আমাদের আশার ফানুসে বড়সড় একটা খোঁচা খেয়ে, পুরো ফানুসটাই যেন মিইয়ে গেছে। স্বপ্নগুলোও কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেল বাকি সময়গুলোর জন্য..।
তারপরও আমরা জাতিগত ভাবে অনেক বেশী আবেগী। দুই দলের ভিতর শক্তির পার্থক্য যতই বেশী হোক না কেন, মন সেটা না মেনে কল্পনায় মেতে উঠতে চায়! আমাদের আবেগ আমাদেরকে স্বপ্ন দেখায় জয়ী হওয়ার আর বাস্তবতা আমাদের কে দেখিয়ে দেয় তার নগ্ন রূপ। কিন্তু কাল আমাদের ছেলেদের বোলিং বিভাগের অসহায় আত্মসমর্পণ কি একটুও অপ্রীতিকর নয়??? এই যে বোলিং সংকট, তার দায়ভার কি অনেকখানি কোচ-নির্ধারকদের উপর বর্তায়না..??? কিন্তু কেন এই সমস্যা??? প্রধান কিছু কারণ হতে পারে এরকম-
১। কোচ জেমি সিডন্স যতই ভালো হোন না কেন, তার কর্তৃত্ব বজায় রাখতে গিয়ে বাদ দিয়েছেন অভিজ্ঞ মাশরাফিকে। মাশরাফি অনেক সিনিয়র, অভিজ্ঞ, দলে তার একটা ভুমিকা রয়েছে। মাশরাফি যদি বাদ যায় তাহলে আশরাফুল, রাসেল(বোলার), নাফিস সবাইকেই ইচ্ছা মতো বাদ দেওয়া যবে। অথচ রাসেল গত বিশ্বকাপে খুবই ভালো বোলিং করেছিল এবং তার এবারের প্রিমিয়ার লীগের পারফর্মেন্সও অন্তত শফিউলের থেকে ঢের ভালো ছিল। সেই সাথে ১৮/২/২০১১ তারিখে প্রথম আলোসহ সব পত্রিকাতেই বলা হয়েছে যে, মাশরাফি এখন পূর্ণ গতি এবং ছন্দে বোলিং করছেন।
২। সাকিবের সাথে মাশরাফির দ্বৈরথ। বেশ কিছুদিন ধরেই পত্র-পত্রিকাসহ মিডিয়াতে বেশ একটা ঠান্ডা লড়াই চলে আসছে। বেপারটাকে আরো উশকে দিয়েছিল প্রথম আলো-যুগান্তর সহ বেশ কিছু দৈনিক। সাবেকদের মন্তব্য নিয়ে রীতিমত বেশ আনুষ্ঠানিক একটা "মজায়" পরিণত করেছিল "কে হবে অধিনায়ক"!!! আর সিডন্স এই সুযোগটাই নিয়ে সাকিবকে করে তুললেন "অধিনায়ক" আর মাশরাফিকে করে দিলেন "জিরো"।
৩। আশরাফুল-বাংলাদেশের অন্যতম এক প্রতিভা। কোন ফুলকে যদি ফুটে ওঠার আগেই নষ্ট করে দেয়া হয়, তাহলে যেমনটি ঘটতে পারে, ঠিক তেমনি ঘটেছে এই তরুণটির সাথে। সবাই যেমন টেন্ডুলকার হতে পারেনা, তেমনি সবাই আশরাফুল ও হতে পরবেনা। অথচ এই আশরাফুলকে বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয়েছে টেন্ডুলকারের ছায়া, তার বদলে যা হয়েছে তা হল সে নিজেকেই নিজে পাল্টে ফেলেছে। পাল্টে ফেলেছে বললে ভুল হয়, সে আসলে নিজেকে "হারিয়ে ফেলেছে"। গতকালের ম্যাচে না নেওয়ার পর সেই হতাশাটা আরও বেড়েছে।
৪। শাহরিয়ার নাফিস, সৈয়দ রাসেল(সম্ভবত), আফতাব আহমেদ, অলক কাপালি, ধীমান ঘোষ, রাজিন সালেহ.. কতগুলো উজ্জ্বল নাম-স্বপ্ন আর হতাশার গল্প। হীন এবং কুটিল ভারতের "আইসিএল" ফাঁদে পা দিয়ে তারা যে পথচ্যুত হয়েছেন, সেই পথকে মসৃণ করার কোন চেষ্টাই বিসিবি করে নি। পাকিস্তান ঠিক একই ফাঁদে পড়লেও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে দেরী না করে ফিরিয়ে এনেছে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারদের। আর বিসিবি ক্রিকেটারদেরকে ভুলে গিয়ে শাস্তি দিয়ে তাদের কর্তব্য-দায় দুটোই সেরেছে। কালকে যখন ম্যাচ দেখছিলাম তখন বারবার মনে হচ্ছিল.. ইশ! এখন যদি আফতাব থাকতো! রকিবুলের বদলে যদি অলক থাকতো!! জ্ঞান-গুণ বিহীন মুশুফিকুর রহিমের বদলে যদি ধীমান থাকতো! তাহলে কালকের ম্যাচের চেহারা অন্য রকম হতে বাধ্য থাকতো।
সব মিলিয়ে শেষে হতাশা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকেনা। বারবার মনে হয় ইশ! যদি মাশরাফি থাকতেন!!! আর এ কথা আমার নয়-ভারত কাপ্তান ধোনিরেও!! ধোনি তো সংবাদ সম্মেলনে বলেই বসেছিলেন, এবার তো মাশরাফি নেই। দেখা যাক বাংলাদেশ কতদূর কি করতে পারে!!!
তাহলে কি আমরা আর স্বপ্ন দেখবো না??? এ প্রশ্নের উত্তর কে দিবে- বিসিবি না জেমি সি