বাংলা ভাষার বাংলাদেশের দৈনিক প্রথম আলো "প্রথম আলো ভাষারীতি" নামক একটি বই প্রকাশ করেছে । আপাত অর্থে এটি একটি নির্দোষ , এমনকি চৌকস উদ্যোগ হিসাবে চিহ্নিত অথবা গৃহীত হচ্ছে । কিন্তু সচেতনার নিরিখে ভাবনার অবকাশ রয়েছে, একটি দৈনিক পত্রিকা কি ভাষারীতি প্রবর্তন করতে পারে ? কিংবা পারলেও কি সেটির বেসাতি ফাঁদতে পারে ? প্রথম আলোর বিত্ত - বৈভব নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর হলেও এর বিদ্যা-বৈভব প্রশ্নাতীত নয় । সংবাদপত্রের সংঙ্গা ,এর দায়িত্ব ও কর্তব্যের আওতায় স্বতন্ত্র ভাষারীতি প্রবর্তন অন্তর্ভুক্ত নয় । বিশেষত লড়াই, সংগ্রাম, আর প্রাণ বিসর্জনের বিনিময়ে অর্জিত ভাষার রীতি প্রবর্তন একটি দৈনিক পত্রিকার হাতে অর্পিত হওয়া আমাদের ভাষা চেতনার অন্তঃসারশূন্যতা প্রমাণ করার প্রয়াস হিসাবে বিবেচিত হতে পারে । কোন দৈনিকের এমনতর কাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের বাংলা বিভাগ ও বাংলা একাডেমীর সামর্থ্যকে শুধু অপদস্থ নয় এসব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বকে অস্বীকার করার নামান্তরও বটে ।
প্রথম আলোর ভাষারীতি প্রকাশনাটি যদি শুধুমাত্র তাদের দাপ্তরিক ব্যবহার তথা তাদের সংবাদ ও প্রেস কর্মীদের জন্য একান্তভাবে নির্ধারিত হতো , তাহলে উপর্যুক্ত প্রশ্ন উত্থাপনের প্রয়োজন ছিল না । কিন্তু প্রথম আলো এ প্রকাশনাটি সাধারণ্যে বিক্রয়যোগ্য করেছে । তারা তাদের নিজস্ব রীতির বাণিজ্য করছে । ফলে ভাষারীতি পঠন, শিখন ও লিখনে তারা একধরণের নৈরাজ্যকে উসকে দিচ্ছে । আমি মনে করি প্রথম আলোর এ প্রকাশনা এখতিয়ার বহির্ভূত এবং অন্যায্য । জাতির মননের প্রিীক বাংলা একাডেমীর উচিত প্রথম আলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং সত্ত্বর এ প্রকাশনাটি প্রত্যাহারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা ।
সবচেয়ে কৌতুকী বিষয় হচ্ছে, প্রথম আলোর ভাষারীতির ভূমিকায় প্রথম আলোর সম্পাদক ভুল বানানে শব্দ প্রয়োগ করেছেন । ভূমিকার শেষ অনুচ্ছেদের প্রথম লাইনে তিনি 'শব্দভান্ডার' লিখেছেন । বিজ্ঞ সম্পাদক ভাষা রীতিতে ণ-ত্ব বিধান পাল্টে দিয়ে বাংলা ভাষার কোন নৈরাজ্য- নেই রাজ্যের দেশে আমাদের নিয়ে যেতে চান ?