হাজার বছরের সিঁড়ি পেরিয়ে বিশ শতকের শেষ অর্ধে বাঙালি জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসের এক বিস্ময়কর অর্জন । ঊনিশ শতকের বাঙলা রেনেসাঁ ও বাঙলা ভাষী মুসলমানদের রাজনৈতিক চেতনা সৃষ্টি বিপুল বাঙালির জাতি হয়ে ওঠার মৌলিক কার্যকারণ ।অপরদিকে ভৌগোলিক বিভাজন ও তথাকথিত ধর্মীয় ঐকতান সাম্রাজ্যবাদ আরোপিত প্রতিপক্ষের প্রবল প্রতিবন্ধকতা ।
এহেন প্রতাপশালী প্রতিবন্ধকতার দেয়াল মাড়িয়ে বজ্রনিনাদে উচ্চকিত হয়েছিল আমাদের ১৯৫২ সাল - আমাদের উত্থান সময় ।একুশে বাঙালি জাতির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন কালপর্ব - বাঙালি জাতি দেহের সাবালকত্বের স্মারক ।
তাই, সামগ্রিকতায় ভাষা আন্দোলন শুধুমাত্র বাঙলা বর্ণচিহ্ন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম নয় , এ ছিল আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলন । এ আন্দোলনের রাজনৈতিক চেতনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পত্তনের মাধ্যমে অন্তর্বর্র্তীকালীন কাংখিত পরিনতি লাভ করে ।
কিন্তু 'সামগ্রিকতা' বিচারে একুশের কাংখিত ফল আমরা লাভ করি নি । উন্নত জাতি গঠনের যাবতীয় শর্তাবলী আমাদের পোক্ত কোন পাটাতনে জমে ওঠে নি । বিশেষ কোন বিষয়ে আমাদের প্রাগ্রসরতা প্রতিবেশি বা দূরের কোন দেশ/জাতির জন্য চোখ টাটানোর নয় । আজো আমাদের বাজনীতি , আমাদের অর্থনীতি,শিল্প- সাহিত্য, ধর্ম-আধ্যাত্মিকতা,আমাদের বৌদ্ধিক বিকাশ স্বাধীন ও স্বয়ম্ভর নয় ।চেতনা ও মনন বিকাশের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের ষোলকোটি মানুষকে সাথে নিয়ে এগোবার মুরোদ তৈরি হয় নি ।
বাঙলা রেনেসাঁকে যদিও পণ্ডিত শিবনারায়ণ বাঙালি হিন্দুদের পুনর্জাগরণ বলেছেন, তথাপি আমাদের স্বাধীকার অর্জনে এ জাগরণের গুরুত্বই সবচেয়ে বেশি । কারণ শিক্ষিত জনশ্রেণিই দেশ পরিচালনার ক্ষমতা অর্জন করে এবং তারাই স্বাধীনতাহীনতায় মর্মান্তিক মর্মযাতনায় পীড়িত হয় । ফলে, বিদ্যা-বুদ্ধিতে এগিযে যাওয়া বঙ্গীয় হিন্দুরা স্বাধীনতার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে । এদিকে শিক্ষাহীন পূর্ববঙ্গের দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর উত্তর পুরুষরা পাশবর্তী সম্প্রদায়ের উন্নতির স্পর্শে এসে রাজনীতি সচেতন হয়ে ওঠে । পাশের বাড়ির আলো এসে তাদের আঙ্গিনাও আলোকিত করে । তারাও স্বাধীনতার গন্ধ শুঁকে বেপরোয়া হয়ে যায় । স্বাভাবিক ভাবে তৈরি হয় এক ধরণের প্রতিযোগিতা । এ প্রতিযোগিতাকে কাজে লাগালো ধূর্ত শাসক । উভয় জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত সংগ্রাম দমাতে শাসক ছড়িয়ে দিল ধর্ম বিদ্বেষ ।অল্প,অর্ধ,অশিক্ষিত জনতা ক্ষমতালিপ্সু কজন শিক্ষিত দুর্জনের পাল্লায় পড়ে জড়িয়ে পড়ল দাঙ্গায় । ফলাফল, ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ ।
যে করে হোক, যে ভাবেই হোক, আজ সেই ভাজিত ভূখণ্ডই আমার দেশ ।
কিন্তু অকপটে অজ্ঞতা প্রকাশ করি - ভাগাভাগির কারিগরি দিকটি আমার কাছে পরিস্কার নয় । বাটোয়ারা সালিশকারিগণ কিসের কারণে এমন আঁকাবাঁকা এবড়োথেবড়ো মানচিত্র তৈরি করে বঙ্গদেশকে যাচ্ছেতাই চেহারা দিলেন তার কোন সদুত্তর ইতিহাসের অধ্যাপকগণ আমাদের শেখান না । আর কিসের আশায় তৎকালীন এদেশীয় নেতারা এমনতর মানচিত্র মেনে নিলেন সে উত্তরও আমরা ইতিহাসের পাতায় পাই না ।মহাত্মন আকবর আলী খান ইতিহাসের ছাত্র-অর্থনীতিও জানেন ,মুক্তিযুদ্ধ করেছেন এবং চাকুরি করেছেন রাষ্ট্রের অন্দরে অতিউচ্চে তবু তার রচনা বাংলাদেশের উন্মেষ(ডিসকাভারি অব বাংলাদেশ) কেতাবও উপর্যুক্ত প্রশ্নে লা-জবাব ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:৩১