দেশের স্বাধীনতার জন্য একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর ; মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ৭৫ এর পর অাবার অনেকটা সময়কাল ধরে নিস্তব্ধ। পার্লামেন্ট মেম্বার নির্বাচিত হয়ে ১৯৯৬ সাল থেকে পূনরায় দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও এ প্রজন্মের সঙ্গে ব্যাপকভাবে পরিচিত হন এক এগারোর প্রেক্ষাপটে।
দেশের গণতান্ত্রিক ধারা তখন এক সংকটময় মুহর্তে। তৃতীয় শক্তির উত্থানে দেশে চলছে মাইনাস্ টু ফর্মুলা। অাওয়ামীলীগের ক্রান্তিলগ্ন, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ও দলের সাধারণ সম্পাদক অাব্দুল জলিলকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। তৃতীয় শক্তির অপরাজনৈতিক কৌশল দলীয় সংস্কার প্রশ্নে খন্ডিত হয় দলের নেতৃত্ব। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে ঠিক সেই সময়েই দলের যুগ্ম সম্পাদক অাশরাফুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দলের হাল ধরেন। কঠিন সেই মুহর্তে অার বেগ পেতে হয়নি অাওয়ামীলীগের। সেই দুর্যোগ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের হারানো শক্তি ফিরিয়ে আনেতে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের অসাধারণ ভূমিকা সর্বদলীয় প্রশংসিত। এখান থেকেই নিবেদিত প্রাণ বিচক্ষন রাজনীতিবিদ হিসেবে অালোচনায় অাসেন তিনি।
বলিষ্ট নেতৃত্বই তার প্রতি জানার অাগ্রহকে তরান্বিত করে। জানতেপারি,রাজনৈতিক পরিবারে জন্মনেয়া সৈয়দ অাশরাফ শৈশব থেকেই রাজনীতিতে যুক্ত। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে তিনি ।
মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে সৈয়দ অাশরাফ ছিলেন বীর যোদ্ধা। মুজিব বাহিনীর প্রশিক্ষক জেনারেল উবান তার লেখাতে বলেছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মুক্তিযুদ্ধে নিবেদিতপ্রাণ যোদ্ধা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রেসিডেন্টের ছেলে হয়েও সাধারণ যোদ্ধাদের মতোই যুদ্ধ করেছিল নির্লোভ অাশরাফ।
৭৫ এর পটপরিবর্তনে জেলহত্যা ঘটনায় নজরুল ইসলামের মৃত্যুর পর বিদেশে চলে যান সৈয়দ অাশরাফুল ইসলাম। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর কণ্যা শেখ হাসিনার ডাকে দেশে এসে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে পার্লামেন্ট মেম্বার হন। সেই থেকে প্রতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে অামৃত্যু পার্লামেন্ট সদস্য ছিলেন।
একটি কথা না বললেই নয়।২০১৩ সালের ৫ মে। হেফাজতে ইসলামীর ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচীতে বিএনপি-জামাতের ধংসাত্মক পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বিগ্ন গোটা দেশ। সেই সন্ধ্যায় তিনি ছিলেন সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক। সবাই তখন টিভি পর্দার দিকে তাকিয়ে সরকার থেকে কি ঘোষনা অাসে। মিডিয়ার সামনে আসেন অাশরাফুল। তার আশ-পাশে থাকা নেতাদের মুখমণ্ডল শুকনো ও বিষন্ন দেখালেও তিনি ছিলেন প্রাণবন্ত। সাংবাদিকদের ক্যামেরায় অাশরাফুল বলেন, ‘আমাদের সরলতাকে দুর্বলতা ভাববেন না। রাতের মধ্যেই আপনারা ঘরে ফিরে যাবেন। তার এই বাক্যটি ছিলো কঠোর হুসিয়ারি,তা অার কারো বোঝার বাকি ছিলনা। কিন্তু হেফাজতে ইসলাম বিএনপি জামায়াতের রাজনৈতিক ফাঁদে পরে ঢাকা না ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে স্মরণকালের সফল অপারেশনে হেফাজতে ইসলামের সদস্যরা বাধ্য হন ঢাকা ছাড়তে। অামার মতে এটা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের রাজনৈতিক বিচক্ষণতার একটি দারুন উদাহরণ। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দৃঢ়তায় ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বিচক্ষণতায় বাংলাদেশ সেই বৈরি পরিবেশ কাটিয়ে ওঠে।
এছাড়াও ক্ষমতার শীর্ষে থেকেও অাশরাফুল ইসলাম লোভহীন জীবন যাপন বর্তমান রাজনীতিতে খুবই বিরল। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের রাজনৈতিক বিচক্ষণতা প্রশংসিত প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। ভদ্র ও মার্জিত ভাষায় রাজনৈতীক মোকাবেলা করায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কাছেও তিনি প্রশংসিত। অামি মনে করি, অাশরাফুল ইসলাম ভালো রাজনীতি বিদের একটি উদাহরণ। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদকে হারালো। ##
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:০২