আমি সম্প্রতি একটি দূরবীন কিনেছি। কালো এবং হালকা নীলাভ মিশ্রণের।
রাতে এবং দিনে দেখার জন্য দু’রকম আলোকপ্রভার অস্বচ্ছ কাচের ফোকাস।
আমি সমুগ্রগামী জাহাজের মাস্তুল আর অস্পষ্ট ধোয়া দেখার জন্য দূরবীনটি কিনেছি।
আমি দূরবর্তী হাওয়াকলের শাদা পাখা স্পষ্ট দেখার জন্য দূরবীনটি কিনেছি।
একটি সমুদ্রচীল নীলাকাশে কতটা নিশ্চল তা দেখার জন্য দূরবীনটি কিনেছি।
তিন-চারটি ধূসর পানিহাস ঢেউয়ে দুলছে;
সবুজের সাথে ফসফরাসের মিশ্রণ একরকম বুদবুদ এনে দিয়েছে।
যেন আদীম মুনিসকল বিষ্ময়ে জড়ো হয়েছে মাঝসমুদ্রে,
তাদের তুন থেকে খসে পড়ছে জাগতিক ধেনু-
আমি দূরবীনে চোখ রেখে দুটি ডিঙি নৌকার চুম্বন দেখি।
রমনী আর লজ্জার মাঝখানে যে আব্রুর প্রভেদ তা আমার শক্তিশালী দূরবীনের স্পষ্টতায় নেই হয়ে যায়!
আমি জলের সাথে জলজ শুশুকের কামলীলা দেখি, হয়ত উত্তর সাগরে তাকে ডলফিন বলে।
যারা আমার মতো একাকী আর নি:সঙ্গ মানুষেরে অভিশাপ দেয় অপয়া বলে।
আমার দূরবীনে দিকনির্দেশক একটি কম্প্যাস আছে। ফ্যান্সিসের মতো আমি যদি কখনও হারিয়ে যাই,
কাঠে একটি পাটাতনে মাথা রেখে গলায় ঝুলানো দূরবীনটি তাক করলেই আমি পৌছুবো রত্নদ্বীপে!
দূরে একটি জাহাজ ভেপু দিয়ে প্রতিবেশী জাহাজটির মনযোগ আকর্ষণ করে।
আমার দূরবীনে জাহাজের প্রতিবিম্ব হয়ে তিনটি নারী অসংখ্য জ্বিহবা বের করে ভেংচি কাটে।
মিলনের যে অবিশ্বাস আমার জামার খোল পকেটে ছিল,
সেখান থেকে তামাটে একটি হলুদ জ্যোতি বের হয়ে দূরবীনের কাচ গলে দূরের জাহাজের দিকে নির্গত হয়।
আমি বুঝে নিই আমার বিষাদ মিশে গেছে আজ এখনি এই দূরবীনের রঙিন কাচে সহসা।
পাশ থেকে কালো ক্যানভাসের ব্যাগে দূরবীনটি মুড়ে উঠে দাঁড়াই ন্যুজ হয়ে।
ফিরতি পথে তখন শুধু নক্ষত্রের অনুগ্রহ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:৩১