এডলফ হিটলার তাঁর আত্মজীবনী ‘ম্যাইন ক্যাম্ফ’ এ ইহুদিদের লিভিং শেইপকে বর্ণনা করছিল শয়তানের লিভিং শেইপ হিসেবে,বলছিল,’Devil as the symbol of all evil’। হিটলারের মত প্রকাশ্যে এতটা ঘৃণা এখনও প্রদর্শন না করলেও নরেন্দ্র মোদি যে মুসলমান ও বাংলাদেশেকে দুচোখে দেখতে পারে না তা তাদের কথাতেই বুঝা গেছে অলরেডি।
এতদিন সে ছিল একটা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা কারী দলের প্রধান,আর এই মুহূর্তে সে এই উপমহাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী রাস্ট্রের প্রধান। আমাদের আসলেই বুঝা দরকার তাঁর এই থ্রেট কি সিরিয়াস না জাস্ট ফাঁকা বুলি।অবশ্য ফাঁকা বুলি হলেও যথেষ্ট চিন্তার কারন।কেননা ক্ষমতার বাইরের দলের জোরালো হুংকারের চেয়ে ক্ষমতাসীন দলের ফাঁকা বুলির কার্যকর হওয়ার প্রোবাবিলিটি বেশি।
বিজেপি একটা টার্ম ব্যবহার করতেছে ,সেটা হল ‘অবৈধ অভিভাসন’। অবৈধ অভিভাসনের থিওরিটিকাল সংজ্ঞা খোঁজার আগে চলুন প্র্যাকটিকাল সংজ্ঞা দেখে আসি। গত ১৮ এপ্রিল বিজেপি নেতা সুব্রামানিয়াম স্বামি গোহাটিতে ঘোষণা দেন,’এক তৃতীয়াংশ বাংলাদেশী ভারতে থাকে। সুতরাং বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ ভারতকে দিয়ে দিতে হবে।’ হুহ,মামাবাড়ির আবদার। এক তৃতীয়াংশের ব্যাপারটায় পরে আসতেছি।
২৭ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুরে মোদি বলেন,’’বাংলাদেশী অভিভাসীদের বের করে দেয়া হবে।কিন্তু হিন্দু অভিভাসীদের অবশ্যই ভারতে থাকার জায়গা করে দিতে হবে।’
মে মাসের ২ থেকে ৪ তারিখে আসামে ৪২ জন মুসলমান বাঙ্গালী অভিভাসীকে হত্যা করা হয়।লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো একজনও হিন্দু নয়,প্রত্যেকে মুসলমান।
তাহলে অভিভাসী বাঙ্গালী বলতে প্র্যাকটিকালি মুসলমান বাঙ্গালীকেই বুঝানো হচ্ছে। এপ্রসঙ্গে বলে রাখি বাংলাদেশের নির্বাচনের সময় কিছু হিন্দুদের ঘর ছাড়া করা হয়। আর দাদারা একেবারে জবাই করে দিয়েছে (অন্তত ১২ জনকে)। দাদারা আবার ডাইরেক একশানে বিশ্বাসী।
চলুন এবার দেখি থিওরিটিকাল সংগায় বিজেপি অবৈধ অভিভাসন হিসেবে কি বুঝাচ্ছে।আসামে প্রকাশিত দলের মেনিফেস্টোতে বিজেপি প্রতিজ্ঞা করছে,’’তারা সকল অবৈধ অভিভাসীদের চিহ্নিত করে বহিস্কার করবে,তবে একটা ব্যাতিক্রম ছাড়া।সেটা হলঃ তারা সকল হিন্দু,বৌদ্ধ,শিখ,অন্যান্য উপজাতিদের প্রটেক্ট করবে যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছে ‘ধর্মীয়,রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রসিকিউশনের মাধ্যমে এবং তাদেরকে অবৈধ হিসেবে গন্য করা হবে না।’’(সূত্রঃ Political Ill Game ,Daily Star ,May 9)
হতাশ হলাম।ভাবছিলাম পেপারে অন্তত কিছুতা রাখঢাক থাকবে,বিজেপি দেখি পুরো ঘোষণা দিয়ে মুসলমানদের বিপক্ষে নামছে।এটা তো আসামের মেনিফেস্টো গেল,এবার দেখি কেন্দ্রীয় মেনিফেস্টোতে কি আছে।১৯৯৮ সালের মেনিফেস্টোতে বিজেপি দাবি করে ‘বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিভাসীর সংখ্যা ১.৭ কোটি ছাড়িয়ে গেছে।’
২০০৪ সালের ডকুমেন্টে হুমকি দেয়,’3D ফর্মুলার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ বের করে দেয়া হবে-Detect,Delete and Deport’.২০০৯ সালের মেনিফেস্টোতে বিজেপি বলে,’We will systematically detect,detain and deport illegal immigrants who have emerged as a major source of homegrown terror.’২০১৪ সালের মেনিফেস্টোতে বাংলাদেশ কথাটা উল্লেখ নেই।বলা আছে,‘ইস্টার্ন বর্ডার দিয়ে অবৈধ অভিভাসন এবং এদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা ’ । ইস্টার্ন বর্ডার বলতে কি বুঝায় ,এটা তো ভারতের গরুও বুঝে !
বিজেপি বলছে বিশাল এক বাংলাদেশী অভিভাসী জনগোষ্ঠী নাকি ভারতে অবস্থান করছে।দাদারা কাটাতারের বেড়া দিয়ে সমগ্র সীমান্ত ঘিরে ফেলল তাও নাকি পশ্চিমবঙ্গে লাখলাখ অবৈধ অভিবাসী! মানুষ তো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় তখনই যায়,যখন ঐ জায়গার ইকোনোমি বেটার থাকে। মধ্যপ্রাচ্য,সিঙ্গাপুরের তুলনায় ভারতের কি এমন ইকোনমি যে মানুষ পঙ্গপাল হয়ে ভারতে ছুটবে? আর ৭১ থেকে আজ পর্যন্ত চ্লিশ বছর পেরিয়ে গেল ,এত অভিবাসী থেকে একজন বাংলাদেশি ও কেন নাগরিক সমাজে প্রতিষ্ঠিত হল না? ইউরোপ আমেরিকার যেই দেশেই বাঙ্গালী অভিবাসী রয়েছে সেখানে কেউ কেউ না কেউ ঐ সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে। আর তাদের অর্থনীতি যদি ভালোই থাকতো তাহলে তো মোদি ক্ষমতায়ই আসে না। অর্থনীতির উন্নতি ছিল মোদির অন্যতম এজেন্ডা।
যদি আমরা ভাবি এগুলো শুধু কাগজেই পড়ে থাকবে,তাহলে বিরাট ভুল করবো। ১৯৯৮ সালে এর আগে যেবার ক্ষমতায় আসছিল বিজেপি,সেবার দিল্লী অফিসে বসার কয়েক মাসের মধ্যেই বিজেপির কয়েক নেতা এই ইস্যুটি নিয়ে লাফালাফি শুরু করে। মুম্বাইয়ের বস্তি থেকে কয়েকহাজার বাংলাভাষী মানুষকে ট্রেনে উঠিয়ে পাঠায়া দেয়া হয় পশ্চিমবঙ্গে,বাংলাদেশে পুশব্যাক করার জন্য। হ্যাঁ সভ্যতার এই যুগেও এমন কান্ড করতে পারে শুধু বিজেপিই।তবে বিডি আর সেবার সেই চেস্টা রুখে দিয়েছিল।
সাবধান বাংলাদেশ,! সামনে অনিশ্চিত দিন!