আবু বকর সিদ্দিকী বিন সাইফুল্লাহ রুমি (রুমন), ডাকনাম - রুমন
ইহা কোন জিহাদি সংঘটনের শূরা সদস্যদের তালিকা নয়। এটি মাত্র একজন নির্দোষ ভাগ্যবান বালকের সম্পূর্ণ নাম।
জী,এটা আমার নাম । রুমন সিদ্দিকীর প্রথম নাম।
নামের গঠন ও মাজেজা বর্ণনা শেষে খুব জটিল লাগবে না আশা করি
আমার নিকট আত্মীয়রাও আমার এ নাম দেখে চমকে উঠবেন এবং ভুরু কুচকে জোরেশোরেই বলবেন যাহ! কবে আবার তোর এই নাম ছিল ? গল্প ফাদার জন্য বানাইছিস ।
তোর নাম তো ছিল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী রুমন।
ফিকশন লেখার সময় মাঝেমধ্যেই কিছু স্বাধীনতা ভোগ করি কিন্তু এটা আসলেই ভয়াবহ সত্য। আমার নিজের স্মৃতি থেকেই ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল। ভাগ্যিস ক্লাস থ্রি এর একটি পুরানো গল্পের বইয়ে আমার এই পুরো নামটি লিখা দেখলাম তাই মনে পড়ল । দেখার পর থেকেই ভাবছিলাম যে যেহেতু আক্ষরিক অর্থেই এরকম একটা ঘটনা আমি ভুলে যেতে বসে ছিলাম তাই এবার লিখে রাখব । ফেসবুক থেকে ভালো জায়গা ইদানিং আর কই ?
আবু বকর সিদ্দিকী বিন সাইফুল্লাহ রুমি (রুমন) থেকে সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী রুমন হতে রুমন সিদ্দিকী ।
ঘটনাবহুল যাত্রা। চলুন তর্জমা ও তাফসীর পেশ করি ।
প্রথম পর্ব -
আমার বাবা । তিনি মনে হয় তার প্রথম ছেলে ওয়ালিদ হিসাবে কোন বুজুর্গ এর পরামর্শে তৎকালীন মুসলিম আরবের নিসাব অনুযায়ী আবু বকর সিদ্দিকী এর ছেলে আবু বকর সিদ্দিকী বিন সাইফুল্লাহ রুমি নামকরন করেছিলেন।
ক্রস রেফারেন্স এর জন্য আমার আম্মাকে জিজ্ঞাস করতে গিয়ে দাবর খেয়ে ফেরত এসেছি। আম্মার কাছ থেকে ইসালাম বিষয়ক কিছু শুনলেই কেন জানি তেতে উঠেন।) তার মানে এই দাঁড়াল আমার নাম "সাইফুল্লাহ রুমি"। অনেকেই অভিজ্ঞতা আছে, বালক অবস্থায় প্রথম দেখায় প্রায়ই নামের অর্থ জিজ্ঞেস করতো মুরুব্বীরা ।সুতরাং নামের অর্থ জানা থাকা বাঞ্ছনীয় ছিল অভিজাত মুসলিম পরম্পরার আদবের অংশ হিসাবে। তাই আমি আমার নামের মানে জানতাম বা আমার পরিবার খুব সুন্দর করে আমাকে শিখিয়ে দিয়েছিল। এবং জানাটা ভীষণ গৌরবের বিষয় ও ছিল । তখনকার দিনে বুজুর্গ মুরুব্বীদের নিজের ডাক নাম বলা বেয়াদবি ছিল, তাই আমরা ভালনাম বলতাম এবং এই কারনে ডাকনামের মানে জানার প্রয়োজনীয়তাও ছিল না । পরের প্যারায় তাই রুমন নাম আদবের অংশ হিসাবে অনুপস্থিত থাকবে।
"সাইফুল্লাহ শব্দের অর্থ আল্লাহর তরবারি এবং রুমি নামের অর্থ মাওলানা জালালউদ্দিন মুহাম্মদ রুমি"। একটা ভাবগম্বির পজ নিয়ে, সাথে যোগ করে দিতাম 'ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ আলেম'। বলা শেষ করে আমার কেমন জানি সত্যিকারের আবেগ কাজ করতো। গর্বের সাথে নিজেকেও আমি আল্লাহ্র তরবারি এবং সর্বশ্রেষ্ঠ আলেম অপেক্ষা কম ভাবতাম না।যাইহোক উত্তর শুনে সকলেই বাহবা দিতেন মাসাল্লাহ বলে। সুভানাল্লাহ বলে আবার কেও গাল টিপে দিতেন ।
আমাকে কে এই উত্তর গুলো শিখিয়ে পড়িয়ে দিয়েছিল আজ আমার মনে নেই তবে মজার ঘটনা শুরু হচ্ছে সবেমাত্র , আমার নামের মানে বলা কালিন কোন বয়েসেই, আমার নামের অর্থের ব্যাখ্যা নিয়ে কোনোদিন প্রশ্ন করেনি। কেও না।
আমি বড় বড় মুফতি , আলেম , ক্বারি , হাফেজ দের তত্ত্বাবধায়নে কোরআন শিক্ষা করেছি , হাদিসের জ্ঞান নিয়েছি , তখন তাদের প্রায় সবাইকেই ঠিক উপরে বর্ণিত ভাবে আমার নামের অর্থ বলেছি এবং বাহবা শুনেছি।বড় হবার পড়ে অবশ্য খুব একটা কেও নামের অর্থ জিজ্ঞাস করতো না । তবুও মাঝে মাঝে নিজেই আগ্রহ নিয়ে বুজুর্গদের আড্ডায় নিজের নামের অর্থ বলেছি বাহবা এর লোভে।
এটা সেই সময়ের কথা , "যখন মনের গোপনে আমি ভাবছি শেষ পর্যন্ত বড় হলাম" , যখন আমি ইয়াহু রুম এ গ্রুপ চ্যাটের ওয়াল এ গালাগালি করা শিখে গেছি , এ এস ল এর মজা শিখে গেছি। সেসব সোনালী দিনের গল্প এটা । সদ্য কর্মা আমার খেয়াল হোল , যে টেম্পলেট রাট্টা মেরে আজীবন তোতা পাখির মত নামের অর্থ বলে আসছি সেখানে একটা শুভঙ্করের ফাকি, একটা গলদ আছে ।"জালালুদ্দিন রুমি" তো আমার নামের অর্থ হতে পারে না। আর শ্রেষ্ঠ আলেম তো ওই রুমির উপাধি। ওটাও আমার নামের অর্থ নয়।তাহলে শব্দ "রুমির" মানে কি? শুরু করলাম ইসলামে নিরুৎসাহিত করা সত্ত্বেও, "কেন ও কিভাবে"? প্রশ্ন করা। ইসলামের স্বর্ণযুগে অটোম্যান সাম্রাজ্য এর অন্তর্ভুক্ত তুরস্কে জন্মগ্রহন করেছিলেন মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি । যখন চেঙ্গিস খান অটোম্যান সীমানার ভেতরে প্রবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন,এমনি অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে বড় হয়ে উঠা বারো শতকের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক , চিন্তাবিদ , ধর্মতত্ত্ব বিশ্লেষক ও মরমী কবি "রুমি" অমর হয়ে রয়েছেন তার নির্মোহ আধ্যাত্মিকবাদ ও দর্শন চর্চার কারনে।সেই সময়ের এবং পরবর্তী কালের সকল ধর্মের অনুসারিদের কাছে "রুমি" ও তার "মাসনাভি" ব্যাপকভাবে সমাদৃত।
যদিও তিনি ইসলামধর্মের কঠোর ঈশ্বরকেন্দ্রিক উপাসনার থেকে ঈশ্বর সমীপে আত্মার ব্যাপ্ত হওয়ার মাধ্যমে অন্তরের শুদ্ধি সাধন লাভেবেশি আগ্রহী ছিলেন যা অনেক প্রথাগত মুসলিমদের কাছে তাকে সমালোচিত করেছিল। কিন্তু তার সুগভীর অনুসন্ধান স্পর্শ করেছিল সার্বজনীন আত্মার ব্যাপকতা কে। আগ্রহীরা বিস্তৃত তথ্যর জন্য সূফী জালালুদ্দিন রুমি লিখে সার্চ দিলেই গুগোল ও ইউ টিউব এ অনেকে কনটেন্ট পেয়ে যাবেন।
এই পর্যন্ত পাওয়া আমার নামের অর্থ "রুমি" অর্থশূন্য। অথচ জীবনে একজন মানুষ ও আমাকে এই ভুল টা ধরিয়ে দিলেন না। বরং মাসাল্লাহ বলে , বাহবা দিয়ে উৎসাহিত করেছেন প্রায় সবাই। তখন তথ্য আজকের দিনের মত এতো বেশি সহজ ও প্রতুল ছিল না কিন্তু খাটাখাটনি করলে পাওয়া যেত। রুমি নিয়ে খুব ঘাটাঘাটি করলাম। আবিস্কার করলাম চমকপ্রদ ও মজার কিছু তথ্য। (কিছু তথ্য অইসময় পেয়েছিলাম যা আমার একান্ত ওয়ার্ড ফাইল এ টোকা ছিল আর কিছু এই লেখার সময় সন্নিবেশিত করেছি)
প্রথম প্রাপ্তি,
রুমি একটি জাপানী শব্দ। আর অর্থ"Beautiful lapis lazuli"। lapis lazuli হোল পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ আকর্ষণীয় ও কমনীয় মূল্যবান পাথর খণ্ড। এর রঙ স্বর্গীয় আকাশী নিল। এই পাথর বিশেষ করে রাজবংশীয় মর্যাদা ও সাফল্যর প্রতীক হিসাবে সংরক্ষন করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেবতা ও দৈব শক্তি এবং আত্না ও আধ্যাত্মিক কল্পনাশক্তির নিদর্শন হিসাবেও ব্যাবহার হয়।এখানে লক্ষণীয় যে প্রাচিন সভ্যতার ক্ষমতার শ্রেষ্ঠত্তের নিদর্শন ছিল এই পাথর । এখন "রুমি" ছিল সূফী জালালুদ্দিন বাল্খি এর নিকনেম বা উপাধি। এটা হতেও পারে যে, জালালুদ্দিন বাল্খি কেই "লাপিস লাজুলি" পাথর এর মত মর্যাদার রুপক করে আধ্যাত্মিক সম্রাট "রুমি" বলা হত।(আমার কাছে খুব বেশি ডাটা
নেই জোর দিয়ে বলার মত। কিন্তু কাউন্টার লজিক প্রাচিন উপাস্য পাথরের নামে ইসলামের স্বর্ণযুগের এমন জাঁদরেল মাওলানা ও তামামদুনিয়ার আলেমের উপাধি কেমন করে হোল এটাও রহস্য।
অন্যদিকে,
ভাষা ফার্সি ও আরবিতেও রুমি শব্দটি বিদ্যমান । এরাবিক ভাষায় রোমান দের কে "রুমি" বলা হয় , বেশিরভাগের মতে জালাল আদ দিন এর নিসবাস বা নিকনেম "রুমি" হয়েছে "রুম সালতানাত" থেকে আগমন কে নির্দেশ করে । অর্থাৎ,Rumi means From rum।
এর পরবর্তীতে যারাই রুমি নাম রেখেছেন তারা রুমি বলতে এই মহান দার্শনিক মরমী কবিকেই ট্রিবিউট দিয়ে থাকেন।
অর্থাৎ সময়ের বিবর্তনে বর্তমান আলেম সমাজ মাওলানা রুমির দ্বারা এতটাই প্রভাবিত যে তারাও মেনে নিয়েছেন "রুমি" মানেই শ্রেষ্ঠ । অথবা তারা ইতিহাস পড়তে একটুও পছন্দ করেন না ।
এতো কিছু করেও , নিজের নামের শ্রেষ্ঠত্ত অক্ষুন্ন থাকায় আমি খুব খুশি।
দ্বিতীয় পর্ব-
স্কুলের সাময়িক বা বৃত্তি পরীক্ষা কোন একটার ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে হয়ত আবার ইসলামিক ভাবধারার পরিবার আমার বিশাল লেজুড়ে নাম নিয়ে ধাক্কা মত খেলেন। হয়ত টিচারদের কেও তাদের উৎসাহিত করে থাকবেন আমার নামের ব্যাপারটা পুনর্বিবেচনা করে দেখার জন্য। ভবিষ্যতের হাজার হাজার ফর্মে নাম পুরনের বিভীষিকা খানিক আন্দাজ করে মনে হয় আমার অভিভাবকদের মনে দয়া হয়। তারা আমার নাম কেটেকুটে "আবু বকর সিদ্দিকী বিন সাইফুল্লাহ রুমি (রুমন)" থেকে কেটেকুটে "সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী রুমন" করে দিলেন। রুমি ও রুমন দুয়ের মধ্যে থেকে কেন তারা রুমন কে বেছে নিলেন এটাও আমার জন্য রহস্যই রয়ে যাবে।
তবে নামের কর্তনে আমি রীতিমত শ্রেষ্ঠত্ত হারিয়ে ফেললাম।
তবে আম্মা আমাকে বাকি জীবন রুমি নামেই দেখেছেন। বিয়ের পরে তিনিও কোন অদ্ভুত কারনে আমাকে একবারের জন্য আর ওই নামে ডাকেন নি। সত্যিকারের শ্রেষ্ঠত্ত যে ঠিক ওইদিন হারিয়েছি ,গভীর গোপনে থেকে একমাত্র মমতাময়ী মাতৃ হৃদয় সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। সেইদিন থেকে আমার জীবনে "রুমি" উপাখ্যান এর সমাপ্তি।
আমি দেখতে দেখতে সাবুর মত দ্রুত বড় হতে লাগলাম , আহা একসময় চাচা চৌধুরী হাতে এইদিনটার জন্য কত অজস্র প্রার্থনা করেছিলাম। কল্পনার সমান বড় না হলেও একটা দুস্টুমিস্টি মেয়ে আমার প্রেমে পরে গেলো। জীবনে এই প্রথম নাম নিয়ে অউট অফ সিলেবাসের প্রশ্ন খেয়ে বসলাম।
আমার টুন টুন ঠোঁট কানের কাছে এনে ফিসফিস করে বলল " এই জান তোমার নামের মানে কি "
আমার নিউরনরা চট করে কাজে লেগে গেলো , একযুগ পেছন থেকে টেম্পলেট ডাটা কপিপেস্ট মেরে আনসার রেডি করে দিল। আমিও চোখ বুঝে ফিল ফিল নিতে নিতে ভাবছি, "এ আর এমন কি?"
যেই বলতে যাব " আল্লাহ্র তরবারি"।
হটাঠ করে অবচেতন মনের বিদ্রোহের কারনে নাকি মাঝখানের দীর্ঘ অনভ্যাস এর ফলে? আমি ঠিক ঠোঁটের আগা থেকে তরবারি খানা টুপ করে গিলে ফেললাম।
আমি পুরা খাড়া মানে সজাগ। টুন টূন তো আমার ভালো নাম জানে না , যেটা বুজুর্গ এর কাছে আদবের পরম্পরা ছিল ওইটা তো টুন টুন এর কাছে নিষিদ্ধ অতীত।
তাইলে ও কোন নামের মানে জানতে চাইল ? অসহায় আমার আশেপাশে কেও নাই যে জিগামু প্রশ্ন কই থেকা করল ?
টুনটুনের তাগাদার চোখ উপেক্ষা করে লাস্ট ভাইবায় প্র্যাকটিস করা ঘেংঘ্যাঙে গলায় বললাম "জান মানে ঙঙঙ"
টুনটুন হিন্ট দেয়া মাত্রই সেদিনের মত এক্সটেনশন নিয়ে বাসায় ফিরে ডেক্সটপে বসে পড়লাম।
ইদানীং সার্চ ইঞ্জিন গুলা বেশ আপডেট হইছে , হাই ফাইভে এখন ভারতীয় মেয়েদের সাথে এ এস এল ছাড়াই গজুরে আলাপ করার সুযোগ তৈরি হইছে। আমিও অনেক অর্থেই বেশ বড়।
কটকট করে টাইপ করলাম "রুমন"
যা পাইলাম তাতে কেমন হিজিবিজি হিজিবিজি লাগতে লাগলো। মাত্র বলার মত দুইজনকে পেলাম। একজন উনিশ শতকের মাত্র সেদিনের ব্রিটিশ রুমন লাম্বা। আর যাই হোক আমার বাসার লোকজন ওই লাম্বার নামে আমার নাম রাখে নাই। আরেকজন হোল প্রাচীন ৬ শতকের একজন আইরিশ সেইন্ট রুমন । উনি দেশ প্রেমিক ছিলেন। এখনো আইরিশ ও ব্রিটিশরা তাকে খানিকটা চেনে। এই নামে ক্যান আমার নাম ? আমি কয়েকদিন আসলেই খুব ভাবতাম, খুব। শেষে লাম্বার থেকে সব দিক দিয়ে উন্নত সেন্ট রুমন এর নামেই আমার নামকরন যার অর্থ পেট্রিওট।টুনটুন কে জানিয়ে দিলাম।
ওকে এটাও পইপই করে বলে দিলাম জেমস বন্ড , ইম্পসিবল ইথান হান্ট দের আরেকটা নামকেই পেট্রিওট বলে।( টুন টুন এই কয়েকটা ডাটা আর বার্গার খুশিমনে খেয়ে নিল )
এরপর টুনটুনিদের বিয়ে হয়ে যেতে লাগলো , আমি একটা ফেসবুক একাউন্ট খুলে ফেললাম এর তার দেখাদেখি। এবার আবার নাম বিভ্রান্তি । সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী রুমন দিয়ে একাউন্ট খোলার বেশকিছুদিন পরে দেখি সাইফুল্লাহ নিক নেমের জায়গা নিয়ে নিয়েছে। আস্তে আস্তে ফেসবুক নিজ জীবনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে লাগলো।
দিলাম আল্লাহ্র তরবারি ফেলে। সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী রুমন হতে রুমন সিদ্দিকী হয়ে বেশ ফুরফুরা লাগলো। মুশকিল বেড়ে গেলো অন্যদিকে। গুরুত্বপূর্ণ কাগজ , নথি তে রুমন সিদ্দিকি লেখার হার বাড়তে লাগলো । শেষে এটাই পারমানেন্ট করে নিলাম। বেশি কঠিন মুশকিলে পরলে নোটারি শেষ ভরসা।
গল্প এখানে শেষ হতে পারতো কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস বাসর রাতে প্রচন্ড আবেগ নিয়ে বউ যখন বলে উঠল "রু"। হতবাক আমাকে রেখেই জীবন সংক্ষেপিত হয়ে পর্দা ফেলল।
(সমাপ্ত)
কথকের নিজর কিছু অনুভুতি আছে। হয়তবা শুধু শেষ অনুভুতিটুকু বলতেই এতো বড় লেখাকে এখানে টেনে নিয়ে আসা।
............................................
গল্পের প্রয়োজনে সংলাপ ও প্রেক্ষাপটে কিছু স্বাধীনতা ব্যাবহার করা হয়েছে। তবে কোন ঘটনার মৌলিকতা বিনষ্ট করা হয় নি ।
আগের থেকে আরও বেশ বড়সড় গোটাগাটা হয়ে গেলাম। প্রতিদিন কতশত জীবনপাতার ছিন্ন হিসাব জোড়া দিতে নিজের নামের একটা মিসিং লিঙ্ক এর ভ্রান্তির কথা অবলীলায় ভুলে গেলাম। কৌতুক এর ছলে জীবনের কয়েকটা ধাপের এক গল্প আর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারছিল না । কারন মনে হয় বড় হয়ে গিয়ছি । গতকালকে , হ্যাঁ আপনারা গত কালকের সার্চ ইঞ্জিন কেমন ছিল জানেন নিশ্চয়ই। আপনিও আমার মত বড় হচ্ছেন। গতকালকে মাঠে একা একা হাঁটছিলাম প্রতিদিনের মত , খেলার আয়োজকরা মাঠের পাশের দেয়ালের গায়ে পোস্টার লাগিয়েছে। নিচে আয়োজক এর নাম দেখলাম রুমন। উপরের গল্পটা উকি দিল। সার্চ ইঞ্জিন চালু করলাম। এখন আমি বড় হয়েছি , আমি জানি আংশিক তথ্য নিয়েও কেমন করে সবচেয়ে যোগ্য উত্তর খুজে নেয়া যায়। কি গুলো চাপতে লাগলাম। কিছু রুমন ভেসে উঠল । গল্পটা ওই মুহুরতেই লেখা হয়ে গিয়েছিল । তিনটা নিউজ শেয়ার করি
"অবশেষে ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করে চার দিন জিম্মি থাকার পর পাওনাদারের কাছ থেকে মুক্ত করা হয়েছে ছয় বছর বয়সী রুমন মিয়াকে।"
"গত রমজান মাসে সাহেব আলী নামের এক গরু ব্যবসায়ীকে রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ রয়েছে রুমনের বিরুদ্ধে"
"জাতীয় সংসদের স্টিকারযুক্ত গাড়িসহ কয়েকজন তরুণীকে নিয়ে শ্যামনগরের একটি রিসোর্টে ধরা পড়ে জেল খাটেন রুমন।"
আজ থেকে ঠিক দশ বছর আগে উপরের তিনজন সার্চ ইঞ্জিনে ছিলেন না । সার্চ ইঞ্জিন অনেক আধুনিক হয়েছে। সেণ্ট রুমন আধুনিক হয়েছেন।
বিড়বিড় করে উঠলাম " ঈশ্বরের তরবারি"।
আমি আমার রুমন নামের পেছনের সবচেয়ে সম্ভাব্য উত্তর বের করেছি। অন্য কোন পর্বে টুক করে লিখে দিবনে।
নিচের কয়েকটা লাইন লিখবো না ভাবছিলাম , কিন্ত এই লাইন টা জীবন রম্যর মত আমার এই গল্পেও অবধারিত ।
একমাত্র যিনি "রুমন" প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতেন তিনি প্রকৃতির নিয়মে আমার বড় হবার সাথে তাল মিলিয়ে জুপিটার এ চলে গিয়েছেন। আমার মনের একটা অন্ধকার কোন রয়েই গেলো। মেঘে মেঘে আমি সত্যি বড় হয়ে গেলাম , মাঝখানে কতকিছু হয়ে গেলো , বড় হওয়ার আকস্মিকতায় বোকা হয়ে গেলাম । বড়দের মত আচরন করতে করতে বেহিসাবি সময়ে নিজের নাম নিয়ে করা রসিকতা ভুলে গেলাম । সিনেমার বিরতির পর, আমিও নতুন এক অধ্যায়, আমার শাশ্বত শিশু জিনোম এর নাম রাখার মত বড় হয়ে গেলা ঈশ্বরের রম্য লেখায় বুঝে ফেললাম বড়দের ভেজা চোখ কাওকে দেখাতে নেই তাই ছোটরা ভাবে ,"ইসস কবে বড় হব?"
থাকুক বেচে কিছু চিরন্তন ভ্রান্তি ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:০৯