somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলামের চোখে কোরবানী ও কোরবানী ঈদ

০৭ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জাতির জীবনে যখন নব জাগরণ আসে তখন পুরাতনের নব মুল্যায়ন শুরু হয়। বিংশ শতাব্দির প্রথমার্ধে মুসলিম নব জাগরণ এর যুগে বাংলার শায়েরে আজম কবি নজরুল ইসলাম এ ব্যাপারে অনন্যসাধারণ ভুমিকা পালন করে গেছেন। কাব্য সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি আমদের ধর্ম, শিক্ষা, সাহিত্য -সংস্কৃতি সব কিছুর পর্যালোচনা করেছেন ও দ্বিধাহীনভাবে স্বমতামত প্রকাশ করে গেছেন।
সুতরাং আমাদের সংস্কৃতির একটা প্রধান ধারা কোরবানী ও কোরবানি ঈদ তার দৃষ্টি এড়াবার কথা নয়। বীর রসের কবি হিসাবে কোরবানীর মতো ঘটনা কবিতার বিষয়বস্তু রুপে তার দৃষ্টি না এড়াবার কথা । বস্ততঃ পক্ষে হয়েছেও তাই। তিনি কোরবানী সম্পর্কে একাধিক উৎকৃষ্ট দীর্ঘ কবিতা লিখেছেন। যদিও গায়ের কজনের এক শ্রেনীর পৌরুষ-চেতনাহীন ভাব বিলাসীদের নিকট কোরবানী রীতিমতো অপ্রীতিকর ঘটনা, তদুপরি মুসলমান দের মধ্যে কেউ কেউ গো ভক্ত দের অপ্রসন্ন মানসিকতার শিকার হয়ে পড়েছিলেন। তরিকুল আলম নামে তৎকালীন এক ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন এমনই এক ভদ্রলোক। তিনি কোরবানীকে আক্রমণ করে এক প্রবন্ধ লিখে বসেন এবং উক্ত প্রবন্ধ নজরুল ইসলামের গোচরে আসে। কোরবানি যে নিছক পশুবধ নয়, এ যে ত্যাগের মহিমামন্ডিত দীক্ষা তা উপলব্ধি করার মতো যোগ্যতা তরীকুল আলম সাহেবের না থাকলেও নজরুল ইসলামের ছিল।
প্রকাশিত হলো কোরবানীর তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে এক দীর্ঘ কবিতা-
"ওরে হত্যা নয়, আজ সত্যাগ্রহ, শক্তির উদ্ভোদন "
আর এই শক্তির উদ্ভোদন জীবন সংগ্রামে অত্যন্ত প্রয়োজন।
তাই অহিংসার পূজারী যে বুদ্ধদেব তিনিও একে সমর্থন না করে পারেন না। তাই কবি লিখেছেন --
" এ ত্যাগে যুদ্ধ মম
তাই জননী হাজেরা বেটারে পরালো বলির পূতবসন! "


ভীমসংগ্রামের মোজাহেদ বেশই ইসলামের সাচ্চা বেশ। দুনিয়ার ন্যায় সত্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অহিংসার নামে জড়-প্রতারক সাজলে মুসলমানের তাই চলে না।
তাই কবির জিগ্যাসা-
"মুসলিম রণডঙ্কা' সে
খুন দেখে করে শঙ্কা কে ?? "

তাছাড়া পৃথিবীর ইতিহাসে সাখ্য দিচ্ছে যারা তাদের স্বমত - স্ব-আদর্শের জন্য লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে, -জেল জরিমানা -গুলী বুক পেতে বরণ করেছে আল্লা তাদের যোগ্যতায় তুষ্ট হয়ে তাদের উপর বিশ্বপৃথিবীর নেতৃত্ব ভার দিয়েছেন। আর যারা জীবনের মায়ায় মৃত্যুর ভয়ে, ক্ষতির আশঙ্কায় নানা টালবাহানায় কাপুরুষ সেজেছে, জীবনের ধর্মসংগ্রাম কে এড়িয়ে গেছে বা এড়িয়ে যেতে চেয়েছে, আল্লাহ তাদের দুনিয়ায় বুকে লাঞ্ছনার জীবনযাপনে বাধ্য করেছেন । যে জীবনের জন্য তাদের এত মায়া সেই জীবনীলাভ হয়েছে তাদের জন্য সুদূরপরাহত। মৃত্যুর মাঝেই জীবন নিহিত - এটা আল্লার বিধান, ইতিহাসের শিক্ষা।
পাছে আমরা এই কথা ভুলে যাই তাই আল্লাহর নবী আশঙ্কা প্রকাশ করতেন।
মৃত্যুর ভয় ও পার্থিব আসক্তি সম্পর্কে আমাদের দুর্বলতা বিষয়ে আল্লাহর নবী বারবার সাবধান করে গেছেন। কিন্তু মুসলমানরা বিশ্বশ্রেষ্ট মহামানবের সেই আশণ্কা বাস্তবায়িত করতে ছাড়ে নি । এই দুঃখজনক অভিঞ্জতা লাভ করে কবি নজরুল ইসলাম ব্যথিত হয়েছিলেন। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন 'ত্যাগী ও শহীদ' হওয়া ছাড়া মুসলমানরা সব করতে রাজি অথচ ত্যাগী ও শহীদ হওয়াই ইসলামের মর্মকথা । তাই আমাদের কালে কোরবানীর গুরুত্ব তিনি তীব্রভাবে অনুভব করেছিলেন।
এই কারনে কবির সোচ্চার ঘোষণা, -
"খুনের খু্ঁটিতে কল্যাণকেতু লক্ষ্য ঐ তোরণ,
বল আল্লার নামে যুঝবো, জান ভি পন।"

কিন্তু এটাও তার দৃষ্টি এড়ায় নি যে কোরবানী, আজ সত্যিকারের কোরবানী না হয়ে, প্রথা সর্বস্বতায় পরিনত হয়েছে। সে ইবরাহীম (আঃ) সে ইসমাইল (আঃ) সে মা-হাজেরা (আঃ) আজ কিছুই নেই - আছে শুধু পশুমেধ যঞ্জলীলা । কবি লেখনী ধারণ করলেন কোরবানির সত্য স্বরুপ প্রকাশের জন্য । 'শহীদী ঈদ ' ঈদুল -আজহাকে স্বাগত জানিয়ে তিনি লিখলেন --
"শহীদ-ঈদ এসেছে আজ
শিরোপরি খুন-লোহিত তাজ। অতএব
" জিয়ারার চেয়ে দিঘারা যে
আল্লার রাহে তাহারে দে
চাহিনা ফাঁকির মনিমানিক। "


তিনি লক্ষ্য করেছিলেন মুসলমানরা একদিকে পশু কোরবানী দিচ্ছে অন্যদিকে খোদাদ্রোহী জীবন ব্যবস্থার পায়রবি করছে। অথচ এ কোরবানীর সত্যাগ্রহ ও শক্তির উদ্ভোদন তো খোদাদ্রোহী সমাজ ব্যবস্থা ধ্বংস করার জন্য তাই কবির স্পষ্ট ঘোষণা -
"ইসলামে যারা করে' জবেহ
তুমি তাহাদের হও তবে
তুমি জুতো-বওয়া তারি অধীন
ইসলামে তুমি দিয়ে কবর
মুসলিম বলে কর ফকর
মোনাফেক তুমি, সেরা বেদ্বীন।"

এ সমালোচনা অত্যন্ত কঠোর হলেও এতে ফাঁকি নেই, মেকি নেই। যদি খোদার প্রতি কোন প্রেম-ভাব-ভালবাসা মুসলমানের না থাকেও তারই ভালবাসায় যদি সবকিছু উৎসর্গ করা না হয় তবে ইবরাহীমের (আঃ) সুন্নত পালনের কথা তো অর্থহীনঃ--
"খাবে দেখেছিলেন ইবরাহীম (আঃ)
কোরবানী দাও মহামহিম
তোরা যে দেখিস দিবালাকে ।
কি যে দুর্গতি ইসলামের
পরিক্ষা যেন খোদা তোদের
আবিধের সাথে বাজী রেখে।। "

তাই যতদিন দ্বীন ইসলাম কুফরীর রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত না হচ্ছে ততদিন এ পশু কোরবানীর ভন্ডামি দেখিয়ে কোন লাভ নেই। কেন না কবির প্রশ্ন-
"কশায়ের আবার কোরবানী কি? "
কশায়ের মত নিষ্ঠুরভাবে যারা কাড়িকাড়ি টাকাকড়ি জড় করে ত্যাগের বেলাতে জড়সড় তাদের কি কোরবানীর ভড়ং করা সাজে?
কোরবানী কেবল তাদের করা সাজে, যারা দ্বীন-ইসলামের জন্য তরুন-তপ্ত-তাজা প্রান কোরবান করতে সদা অগ্রসর,। সর্বশেষে কবি আল্লাহর কাছে মোনাজাত করেছেন এই বলে -
"কোরবানীর এই যে খুন
শিখা হয়ে যেন জ্বলে আগুন
জালিমের যেন না রাখে চিন
আমিন! রাব্বিল আলামিন!
আমিন! রাব্বিল আলামিন!!"

বস্তুতঃ কোরবানী সম্পর্কে এত উৎকৃষ্ট কবিতা এর পুর্বে বা পরে বাংলা সাহিত্যে আর হয় নি ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:১৩
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×