somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিরিয়ানিতে আলুর আগমন....

১৫ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিরিয়ানিতে আলুর আগমন এই কলকাতাতেই, ওয়াজিদ আলি’র হাত ধরে।

শুধু নগরী নয়। তাঁকে ছেড়ে চলে আসতে হয়েছিল প্রাণের চেয়ে প্রিয় অওয়ধ। নবাবি চলে যাওয়ার মুহূর্তেও চোখে জল আসেনি। কারণ মনে করতেন, একমাত্র সঙ্গীত এবং কবিতাই প্রকৃত পুরুষের চোখে জল আনতে পারে। তিনি অওয়ধের শেষ নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ।

ইতিহাস বলছে, ১৮৫৬ সালের ৬ মে কলকাতায় পৌঁছান নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ। এর পর কলকাতাতেই জীবনের শেষ ৩০ বছর কাটিয়ে দেন তিনি। মেটিয়াবুরুজে রাতারাতি যে ছোট লখনউ গড়ে তুলেছিলেন ওয়াজিদ আলি, তাঁর মৃত্যুর পর ততটাই দ্রুততায় তাঁর সব স্মৃতি মুছে ফেলেছিল ব্রিটিশ সরকার। সে সময়কার নবাবি দফতরের কোনও নথিপত্র রক্ষা পায়নি বললেই চলে, নবাবের লেখা কিছু বই ছাড়া। নবাব তৈরি করেন প্রাসাদ, বাগবাগিচা, চিড়িয়াখানা। ৷ এরই সঙ্গে অওয়ধ থেকে তিনি কলকাতায় এনেছিলেন ঘুরি ওড়ানো, কবুতরবাজি ৷ এখানেই শেষ নয় ৷ এই ওয়াজিদ আলির জন্যই কলকাতা বিরিয়ানির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। তাঁর রসনা তৃপ্তির জন্যই এ শহরে ‘দমপোখ্‌ত’ বা ঢিমে আঁচে রান্না শুরু হয়। অনেকে বলেন, বিরিয়ানিতে আলুর প্রচলন নাকি ওয়াজিদ আলি শাহই করেছিলেন। তবে এ বিষয়ে বিতর্কও রয়েছে। তবে বিতর্কের ধার ধারে না কলকাতার ভোজন রসিক মানুষজন। বিরিয়ানির স্বাদ-গন্ধকে অনেক আগেই এ শহরের মানুষ আপন করে নিয়েছেন। বিরিয়ানির ইতিহাস নিয়ে এখন আর তাঁরা মাথা ঘামাতে চান না।

ইদানীং, বিরিয়ানির প্রতি বাঙালিদের টান যেন বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। শহরের রাস্তাঘাটের আনাচে কানাচে, অলিতে গলিতে এখন বিরিয়ানির দোকান। দোকানের একশো মিটারের মধ্যে এসে পড়লেই নাকে বিরিয়ানির গন্ধ আর লাল কাপড়ে মোড়া বিরিয়ানির বিশাল হাঁড়ি চোখে পড়তে বাধ্য। আর পেটে সামান্য জায়গা খালি রয়েছে, অথচ অবলীলায় বিরিয়ানির দোকান পেরিয়ে চলে যাচ্ছেন... এমন কার সাধ্য!

তবে বাঙালির প্রিয় ‘দমপোখ্‌ত’বা ঢিমে আঁচে রান্না তিনিই নিয়ে আসেন কলকাতায়, বিশেষ করে বিরিয়ানি। বিরিয়ানিতে আলুর প্রচলনও তাঁর হাতেই কি না, তা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে। ‘কলকাতা বিরিয়ানি’র সঙ্গে ভিন রাজ্যের বিরিয়ানির ফারাক বিস্তর ৷ উপরে ছড়ানো বেরেস্তা ৷ লম্বা লম্বা সুগন্ধি চালের কোলে কাইয়ে মাখামাখি তুলতুলে খাসি ৷ আর মোলায়েম আলুর আদর ৷ সঙ্গে দেখা মেলে মুক্তোর মতো চকচকে সেদ্ধ ডিমের ৷ এমনটা তো কলকাতা ছাড়া দেখা মেলাভার! বিরিয়ানিতে হাল্কা গন্ধওয়ালা হলদেটে আলু আর ধবধবে সাদা ডিমের উপস্থিতি ছিল না প্রথম থেকে ৷ যেটা দেখা যায় ‘কলকাতার বিরিয়ানি’তে ৷ এর প্রচলনটাও কিন্তু ভারী অদ্ভুতভাবে শুরু করেছিলেন নবাব ৷

বিরিয়ানিতে কেন এল আলু ?

অওয়াধি বিরিয়ানি আর কলকাতা বিরিয়ানি’র মধ্যে তফাৎ একটাই ৷ আর তা হল আলু ৷ ওয়াজিদ আলি শাহ যখন কলকাতায় আসেন, তখন তাঁর কাছে তেমন অর্থ ছিল না ৷ তবে নবাবিয়ানাটা তো রক্তে ৷ তিনি ছিলেন, ‘খানে কা অউর খিলানে কা শওখিন’৷ খেতে এবং খাওয়াতে দারুণ পছন্দ করতেন তিনি ৷ কলকাতায় আসার বেশ কিছু বছর পর বিরিয়ানিতে আলুর যোগ করেন নবাব ৷

তবে শোনা যায়, সে সময় আলুর দাম কিন্তু এত কম ছিল না! পর্তুগিজরা এ দেশে নিয়ে আসে আলু ৷ এদিকে মাংসের দাম এত বেশি! বিপুল পরিমাণে মাংস কিনে বিরিয়ানি তৈরি করার ব্যয়ভারটা কিন্তু সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না কিছুতেই ৷ সেই কারণে কিছুটা খরচ বাঁচাতে, এরই সঙ্গে বিরিয়ানির পরিমাণ বাড়াতে আলুর ব্যবহার শুরু হয় ৷

ওয়াজিদ আলি শাহ’র সেই বিরিয়ানির ধারা এখনও বয়ে নিয়ে চলছেন ওয়াজিদ আলি শাহ’র প্রপৌত্রী মনজিলাত ফতিমা ৷ এখনও সযত্নে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি ৷ নবাবি রেস্তোরাঁর সেই ধারা আর রান্নার প্রতি অমোঘ ভালোবাসা প্রতিটি বিরিয়ানির হাঁড়িতে ঢেলে দেন ওয়াজিদ আলি শাহ’র প্রপৌত্রী ৷ প্রতিবার বিরিয়ানির হাঁড়ি চাপানোর আগে উচ্চারিত হয়-‘বিশমিল্লাহ’৷ আল্লাহ’র নাম নিয়ে শুরু হয় রান্না ৷ হাতের জাদুতে শুরু হয় বিরিয়ানি তৈরি ৷ সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দম-এ বিরিয়ানি তৈরি ৷ দম-এ বিরিয়ানি তৈরি হওয়ার সময় নিজে তো কোনও কথা বলেনই না ৷ কাউকে কথা বলতেও দেন না মনজিলাত ৷ এক্কেবারে বংশের সেই রীতি মেনে, হেঁসেলে চলে রান্না ৷ ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতায় লাজবাব রূপ নেয় ‘কলকাতা বিরিয়ানি’৷ হাঁড়ির ঢাকনা খুলতেই বিরিয়ানির সুবাসে ম ম করে ওঠে চারপাশ ৷

তথ্যসূত্রঃ পোলাও বিরিয়ানি-শতরুপা ব্যানার্জী
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৩৫
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×