somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিউটোরিয়াল ০২- কিভাবে নিজের পা নিজে ভাঙ্গবেন!

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টিউটোরিয়াল-০১

প্রথমে ছোট-খাট একটা পাহাড়ের মোটামুটি খাড়া ২/৩ কিলোমিটার ঢালু ট্রেইল ননাফসুসিত ভাবে উঠে যাবেন। এই ২/৩ কিলোমিটার উঠার পরেই আপনার মনে হবে কি কুক্ষনেই না আপনি এই পা ভাঙ্গা প্রজেক্টে আসার সিদ্ধান্ত নিছিলেন। এই প্রজেক্ট হাতে না নিয়ে "কান কাডা কুদ্দুস" না "মুরগী মিলন" নামক প্রজেক্ট নিলে অন্তত পত্রিকার পাতায় আপনার কুখ্যাত ফডুডা দেখতে পারতেন। পিঠে থাকা প্রায় ৩৫ পাউন্ড ওজনের আপনার ব্যাকপ্যাক তখন আপনাকে প্যাক প্যাক করে ব্যাথা দিয়ে সাহায্য করপে। এইরাম প্যাকপ্যাক তথা পুতুপুতু ব্যাথা নিয়ে আরও ৭ কিলোমিটার হেটে পরে একটা ৩ মিনিটের ব্রেক পাইবেন "স্ন্যাক" নামক কিছু কুখাদ্য খাওয়ার জন্য। ৩ মিনিট পরে আরও এককিলোমিটার হাঁটার পরে আপনার অভিজ্ঞ পর্বতারোহী জিজ্ঞাসা করবে-
- "দোস্ত, জায়গাটা জোশ না !! আস একটা ফডু তুলি"
আপনি মনে মনে কইবেন-
- "শালা !! দূরে গিয়া মর। এই পাহাড়ী ট্রেইলে মাইনাস পাঁচ ডিগ্রী তাপমাত্রায় ৩৫ পাউন্ড ওজন নিয়ে ৯/১০ কিলোমিটার হাঁটার পরে স্বর্গের হুর পরীদেরওতো মনে হবে এফডিসির আটার বস্তা নায়িকা, আর এই পাহাড়ী জায়গাটা জোশ হয়ে কেমনে!!"
কিন্তু ভদ্রতার জন্য আপনে মুখে ক্লোজ-আপ, কোক-আপ, সেভেন-আপ মার্কা হাসি দিয়ে কইবেন-
-"হ, দোস্ত, জায়গাটা আসলেই সুন্দর, একদম আমাগো পাশের বাড়ির জরিনার লাহান সুন্দর। অন্য সবাইকে ডাক। বান্দাইয়া রাখার মত একটা ফডু তুলি"
কিন্তু আপনার বল্টু জানে না যে এই বান্দানো ফডু যদি কোন বান্দর দেখে, তাইলে তারা আপনারদের বিধ্বস্ত চেহারা দেখার পরে ভয় পেয়ে জঙ্গলে মানুষের প্রবেশ বন্ধ করে দিবে।
জরিনার কথা চিন্তা করতে করতে আরও ১ কিলোমিটার হাটার পরে সুন্দর একটা নদীর ধারে যখন ২০ মিনিটের লাঞ্চনা ব্রেকে জুতা খুলে নরম ঘাসের মধ্যে শুয়ে পড়বেন, তখন আপনার মনে হবে জায়গাটা আসলেই স্বর্গের হুরপরীদের মত সুন্দর, যদিও আপনি কখনও হুরপরী দেখেন নাই, দেখছেন খালি চান্তেক।

আপনার জুতা যদি একটু ভারী হয় আর নতুন হয়, তাইলে লাঞ্চনা ব্রেকের পরে আবার যখন খাড়া ঢাল বেয়ে উঠা শুরু করবেন তখন আপনার পদযুগলদ্বয় ভাংগনের পথে একপা এগিয়ে যাবে আর আপনি ব্যাথায় ক্যাকু ক্যাকু করবেন। তখন আপনি কিছু কইতেও পারবেন না, আবার পা ভাঙ্গার সফলতার ব্যাথা সইতেও পারবেন না। খালি নিজেরে নিজেরে থাপড়াইবেন। হঠাৎ করে যদি কিছুক্ষনের জন্য পিছনে পড়ে যান তখন আপনার বন্দুকদের(বন্ধু না, তখন এদেরকে আপনার বন্ধুক বলেই মনে হবে) কেউ কেউ জিজ্ঞাসা করপে- " কিরে!! তুই ঠিক আছস?"
আপনি আবার মুখে ক্লোজ-আপ, কোক-আপ, সেভেন-আপ মার্কা হাসি দিয়ে কইবেন-
-"আমি ঠিক আছি, জাষ্ট একটু পানি খাইতেছি"
কিছুক্ষন পরে যখন আবার ২ মিনিটের ব্রেক পাবেন তখন আপনি কর্দমাক্ত ট্রেইলেই আপনার ব্যাকপ্যাকের উপড় শুয়ে পড়বেন। অথচ নরমালি কেউ আপনাকে সাড়ে সত্তরটা হুর পরী দিলেও আপনি এই কুশয়নে কুবিছানায় শোয়ার কথা চিন্তাও করবেন না।

এইরাম ব্যাথায়িত আফসুস খাইতে খাইতে ২০ মিলোমিটার হাটার পরে দেখপেন দিনের আলো প্রায় শেষ আর আপনারা পৌছছেন একেবারে পাহাড়ী জংগলের শেষ মাথায় যেইটার আশে-পাশে কোন মানুষের সাড়া-শব্দ নেই। ক্ষুধার্ত-ক্লান্ত, ব্যাথায়িত আপনি তখন দেখবেন আপনার পানির বোতলে হয়ত পানি নাই, তখন একটু বড় ধরনের আফসুস খাইবেন আর আশে পাশে পানি খুঁজবেন। শেষের ক্লান্ত শইলডা নিয়ে রাতে থাকার জন্য সেই জংগলে আরেকটা ভাসমান ঘর সেট করে পাশের পাহাড়ি ঝর্না থেকে পানি এনে ট্যাবলেট্যায়িত করে খাবেন। বিকালের মোলায়েম পশমি আলোতে আপনি যখন পাহায়ের ঢাল বেয়ে নেমে সমুদ্র সৈকতের কার্পেটায়িত বালুতে পা রাখবেন তখন আপনি আপনার পা ভাঙ্গার কথা ভুলে গিয়ে মনে করবেন আপনি হ্যাভেনে পা রাখছেন। পারিপার্শিক প্রকৃতি আপনার ঠান্ডার কষ্ট, পায়ের ব্যাথা ভুলিয়ে আপনাকে ভালবাসার স্পর্শে, স্বর্গীয় আনন্দে অবগাহন করাবে যেইখান থেকে আপনি আসতে চাইবেন না কিন্তু আপনাকে আসতে হবে। তখন আপনি বুঝবেন কেন কুবি বলছেন-
- "পা ভাংগতে চাই না আমি এই সুন্দর বনে"

আপনি যদি জীবনে কোনদিন অমৃত না খেয়ে থাকেন, তাহলে সেই সন্ধ্যায় আধা সিদ্ধ করা স্প্যাগেটি বা নুডুলস টাইপ খাবারকে আপনার অমৃতের চেয়েও বেশী সুস্বাদু মনে হবে। তখন আপনি বুঝবেন কুবিরা কেন বলেন-
-"খাদকতমরাই টিকে থাকে"

এরপরে বিস্কুট খাইতে খাইতে তাস পিডাইয়া বা কোন বোর্ড গেম খেলে বা আড্ডায়িত হয়ে এক নাডা যখন অন্য নাডাদের সাথে খুনসুঁটিতে মেতে উঠবেন বা তাবুর মধ্যে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাইবেন তখন আপনি মনে মনে সদ্য বইমেলায় আসা বিখ্যাত নুরু কবির আংরেজী কবিতার লাইন আওড়াউবেন -
-"লাইফ ইজ বিউটিফুল"

পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন গরম কফি হাতে নিয়ে, পাটের বস্তাডা গায়ে না জড়িয়ে সূর্যোদয় দেখবেন, তখন আপনার সূর্যকে স্পর্শ করতে ইচ্ছা করবে কিন্তু আফসুসিত ভয়ানক ঠান্ডা হাওয়া্র জন্য আপনার হাফ ভাঙ্গা পায়ের ব্যাথা আপনাকে বলবে-
-"ওরে নাডা ! সূর্যকে না স্পর্শ করে বাড়ি চল"
এই কথা শুনে আপনি ক্যাকু ক্যাকু করতে করতে গান ধরবেন-
- "আমার ডান পা-টা খেয়েও গো পাহাড় ওও
এই বাম পা-টা পাহাড় খেও না
আমি বাড়ি চলে গেলেও
তারে ঠিক করার সাধ
মিটবে নাগো মিটবে না"

সবকিছু পরিষ্কার করে সেই ময়লা আবার ব্যাকপ্যাকের মধ্যে ঢুকিয়ে নাডা বন্ধুদের সাথে আবার গতকালের একই পথ পাড়ি দেওয়া শুরু করবেন তখন আপনার ভাঙ্গা পা সফলতার শেষ ধাপে এগিয়ে যাবে। পরিমধ্যে এসে আপনার হলিউডি বুট খুললে এক সময় দেখবেন যে আপনার নখ খানিকটা কালো রঙ ধারন করে আফ্রিকার দিকে হাইকিং এ যাওয়ার জন্য রেডি হইতেছে। শেষের দিকের এসে আপনি কিছুক্ষন পরে পরেই ব্রেক নিবেন আর ব্যাথায় ক্যাকু ক্যাকু করতে থাকবেন কিন্তু বন্দুকদের বলবেন একটু টায়ার্ড লাগছে আর কিছু না। শেষ পর্যন্ত যখন আপনি বেইসক্যাম্পে ফিরে আসপেন তখন পা পুরাপুরি ভেঙ্গে যাওয়ার কথা। আমি সিউর আপনি চিৎ-পটাং করে তাবুর মধ্যে শুয়ে পড়বেন আপনার শরীর ব্যথায় আফসুস খাইবে আর আপনি খাবার খুঁজবেন- এইডা গ্যারান্টেড, নাইলে টাকা ফেরত।

টাকা ফেরত ? আরে টাকাইতো দেন নাই। আবার ফেরত কিসের !!! ভাগেন!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৫১
৯৬টি মন্তব্য ৯৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×