somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

(রিপোস্ট) অপেক্ষা- একটি যুদ্ধের অথবা শান্তির । অনুঘটকঃ বাংলাদেশ ।

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগে ২১ শে সেপ্টেম্বর দুপুরে এই পোস্ট টি দিয়েছিলাম । যারা সন্ধার পর ব্লগে আসেন তাদের মত জানতে আবার দিলাম ।

বিবিসি'র সাবেক সংবাদ কর্মী- সিরাজুর রহমান কে মোটামুটি সবাই চিনে । লন্ডন প্রবাসী এই বাংলাদেশী সাংবাদিকের লেখায় আবেগ এর চেয়ে যুক্তির ব্যাবহারের কারনে তার লেখা আমার ভালো লাগে । তাই যখনই কোন পত্রিকায় তার লেখা পাই তা অবশ্যই পড়ি । আজ তার ''বাংলাদেশকে ব্যবহারের গোপন চুক্তি'' শিরোনামে লেখা প্রবন্ধ টি পড়লাম । তার সেই প্রবন্ধে তিনি যা উস্থাপন করেছেন তা অনেক টা এই রকম -

গত ১০ই সেপ্টেম্বর ভারতীয় সংবাদ সংস্থা IBNG আগরতলা থেকে সংবাদ দেয় যে, ভারত উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর সাথে দেশের বৃহত্তর অংশের টেলি-সংযোগ উন্নত জন্য শিগগির বাংলাদেশের মাটির নীচ দিয়ে ফাইবার-অপটিক ক্যাবল স্থাপন করতে যাচ্ছে । প্রথমে আগরতলা থেকে আখাউড়া এবং পরে ভারতের সাব্রুম থেকে প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দর ও তারপর আশুগঞ্জ নদীবন্দর পর্যন্ত ক্যাবল বসবে ।

সম্প্রতি ভারতের আগরতলা থেকে বাংলাদেশের আখাউড়া পর্যন্ত রেল সংযোগের কাজ দ্রুততার সাথে করার জন্য দুই দেশের মধ্যে মতৈক্য হয়েছে ।

বর্তমান বাংলাদেশ সরকার ক্ষমতায় আরোহনের পরপর ই এশিয়ান হাইওয়ের দু'টি ধারাকে বেনাপোল আর বাংলাবান্ধা থেকে ভারতের প্রায়-বিচ্ছিন্ন উত্তর-পূর্বের সাথে করিডোর হিসাবে সংযুক্ত করার ব্যাপারে বাংলাদেশ রাজি হয়েছে ।

তারও পরে হাসিনা সরকার ভারতকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ব্যবহারের অধিকার দিতে রাজি হয় । তারই জের ধরে ভারতের একটি ব্যাঙ্ক থেকে ১.৭৫% সুদ হারে বাংলাদেশের ১০০ কোটি ডলার ঋণ গ্রহন করা এবং বন্দরদ্বয় ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় অবোকাঠামো উন্নয়ন ও নির্মান করা হবে ।

বর্তমান সরকার ঘোষনা দিয়েছে যে, শিগগির ই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর নির্মান করা হবে । এই প্রকল্পের ব্যায় ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা আর এই বন্দর নির্মানের জন্য ৬ হাজার একর জমির প্রয়োজন হবে । বন্দরটি নির্মিত হবে ঢাকার আশেপাশেই । তিন টি স্থানের প্রস্তাব করা হয়েছে যার প্রতিটি ই বর্তমানে ধান ও অন্যান্য ফসল ফলানোর কাযে ব্যবহ্রত হচ্ছে ।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য , প্রধানমন্ত্রি বলেছেন - '' এই বিমান বন্দর প্রতিবেশি দেশ সমুহ ও ব্যবহার করতে পারবে ''।
এখন দুটি প্রশ্ন -
১. বর্তমান প্রস্থিতিতে যেখানে আমাদের বিদ্যুত ও জ্বালানী সমস্যা সমাধান করা অনেক জরুরি সেখানে এত ব্যায় বহুল ও কম প্রয়োজনীয় অথবা এক দৃষ্টিতে অপ্রয়োজনীয় একটি প্রকল্প হাতে নেয়ার কি প্রয়োজন ।
২. সাম্প্রতিক সময়ে প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারনে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ যারা প্রতি বছর প্রচুর খাদ্য শস্য রপ্তানি করে তারা এ বছর নিজেদের খাদ্য উতপাদনে ঘাটতির আশংকা করছে । বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ও দূর্ভিক্ষের আশংকার কথা বার বার প্রকাশ করছে। আর বাংলাদেশের বিরাট জনসংখ্যার জন্য খাদ্যের যোগান নিয়ে সমস্যা তো নিত্য বছর ই হচ্ছে । সেখানে ৬ হাজার একর ফসলি জমির অধিগ্রহন কতটা যুক্তিযুক্ত ।

এ তো গেল বাংলাদেশের ভিতরের ঘটনা । এবার একটি ভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলবো এবং পরে দুটি বষয় কে এক করে দেখলে কেমন দেখায় তা দেখব ।

চীন ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক যে ভালো নয় তা সবাই জানে । সাম্প্রতিক সময়ে তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে ।

বর্তমান সময়ে পরাশক্তির দিক দিয়ে আমেরিকা'র পরে ই চীনের অবস্থান । তাই কৌশল গত কারনে ই আমেরিকা ও চীনের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক বিরাজ করছে । সেই কৌশলেরই অংশ হিসাবে আমেরিকা ভারতের মিত্র হিসাবে বর্তমানে আলোচিত ।

ভারত ও চীনের সিমান্ত নিয়ে দ্বন্দ যেকোন সময় ফেটে পড়তে পারে ।
তার আভাষ পাওয়া যাচ্ছে ভারতের দ্বায়িত্বশীল নানা ব্যাক্তির করা মন্তব্যে ।

ভারতের প্রধামন্ত্রী মনমোহন সিং গত ৭ই সেপ্টেম্বর Times Of India কে বলেছেন - '' চীন এশিয়ার মাটিতে পা রাখার চেষ্টা করছে, আমাদের সে সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে । ...দু'বছর পরে চীনের নেতৃত্বে পরিবর্তন হবে । চীনাদের মধ্যে নিজেদের শক্তি-সামর্থ জাহির করার নতুন একটা প্রবনতা দেখা দিয়েছে । সেটি কোন দিকে যায় বলা কঠিন । সুতরাং আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে ।'' প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়েছে যে, ''এ অঞ্চলে (দক্ষিন এশিয়ায়) চীনের ক্রমবর্ধ্মান উপস্থিতির দিকে ভারত সতর্ক দৃষ্টি রাখছে । এ উপস্থিতির মধ্যে আছে বাংলাদেশ , শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে বন্দর নির্মানে চীনের গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ ।''

কিছুদিন আগে চীন একজন ভারতীয় জেনারেলকে ভিসা দিরে অস্বীকৃতী জানায় । বেইজিং বলেছে, ঐ জেনারেল ' বিতর্কিত কাশ্মীরে সেনাধ্যক্ষ ছিলেন ' বলেই তাকে ভিসা দেয়া হয় নি । ভারত সরকার এ ব্যাপারে অস্বাভাবিক রকম ক্রুব্ধ হয়েছে । এক্ষেত্রে মনে করিয়ে দেইঃ পাকিস্তান ১৯৬৩ সালে চীন কে আজাদ কাশ্মীরের লাদাখ অঞ্চলে দুই হাজার বর্গমাইল পার্বত্য অংশ ছেড়ে দিয়েছিল যা নিয়ে এখন ভারত ও চীনের মধ্যে সংঘাত চলছে ।

একাত্তরে পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতের সেনাধ্যক্ষ লে. যে. যে. এফ আর জ্যাকব ইন্ডিয়ান ডিফেন্স রিভিঊ সাময়ীকিতে এক প্রবন্ধে জরুরী ভাবে চীন-ভারত সীমান্তের কোথায় কত সৈন্য, কোথায় কত শত ১৫৫ মিলিমিটার কামান, কোথায় কত হেলিকপ্টের মোতায়েন করতে হবে এবং কোথায় কতগুলো বিমানঘাটি স্থাপন করতে হবে তার ফিরিস্তি দিয়েছেন ।

জেনারেল জ্যাকব স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন, সঙ্ঘাত দেখা দিলে চীন প্রথমে "শিলিগুড়ি করিডোর" কেটে দেয়ে উত্তর-পুর্ব রাজ্যগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে ।

সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় এটা খুবই স্বাভাবিক যে, ভারত নিজের আত্মরক্ষার জন্য সচেষ্ট্য হবে । কিন্তু এই যুদ্ধে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ফেলা টা হল ট্রেজিডি । যা আমরা বাংলাদেশের জনগন চাই না ।

হয়তো ভাবছেন এর মধ্যে বাংলাদেশ কিভাবে জড়ালো । তাহলে দেখুন -

সঙ্ঘাতের সময় যদি শিলিগুড়ি করিডোর যদি চীন বন্ধ করে দেয় তাহলে ভারতের তার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে যোগাযগের জন্য বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই ।

তাই বাংলাদেশের জলপথ , রেলপথ ও স্থল পথ তাদের ব্যবহার করার উপযুগী করা হচ্ছে । এই সব পথে ভারি অস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম নেয়া হবে।

আর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ব্যবহার করা হবে সেই সাত রাজ্যের মধ্যে বিমান যোগাযগের জন্য ।

তো কি মনে হয়, চীন এই ব্যপার গুলো চোখ বুজে দেখে যাবে । তারা কিছুই করবে না । অবশ্যই করবে । আর তারা নিজে এসে কিছুই করা লাগবে না । কারন সে ডামাডলে ঐ সাত রাজ্যের বিচ্ছিন্নতা বাদি সংগঠন গুলো সু্যোগ নিতে চাইবে । আর চীন শুধু তাদের আর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য করবে মাত্র ।

ঘটনা এটাই ঘটবে যে , 'রাজায় রাজায় যুদ্ধে উলুখাগড়ার প্রাণ যাবে' ।

এখন ট্রিগার বাংলাদেশের হাতে । কিভাবে ?

ভারত যদি বাংলাদেশের কাছ থেকে এই সুযোগ না পায় তবে তারা সংযত আচরন করবে আর যুদ্ধ বাধবে না । আর যদি এই সুযোগ গুলো পায় তবে অসংযত, উদ্ধত ও আগ্রাসী ভারত তার স-চেহেরায় আবির্ভুত হবে ।

আর যার মূল্য বাংলাদেশেকে জীবন ও সার্বভৌমত্ব দিয়ে শোধ করতে হবে ।

আমাদের মনে হয় আরেকটু ভেবে দেখা দরকার ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×