somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিভি টক শো এবং একজন শাহজাহান খান: জনসচেতনতা সৃষ্টি যখন জনআতঙ্ক!!

২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৮:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেসরকারি টেলিভিশন এর সংখ্যা বাড়ছে আর এর সাথে বাড়ছে সন্ধ্যা বা মধ্যরাতের 'টক শো' সংখ্যা। যার উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশ, দেশের মানুষ, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, উন্নয়ন-সমস্যা-সম্ভাবনা, বর্তমান রাজনীতি পরিস্থিতি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা- পর্যালোচনা করা এবং সমাধানের পথ খুঁজে বের করা। সেই সাথে জনসচেতনতা সৃষ্টি তো আছেই। কিন্তু এই জনসচেতনতা সৃষ্টি যখন জনআতঙ্কে রুপ নেয় তখন সেটা আর টক শো থাকেনা, হয়ে যায় ঝাঁকুনি শো! এমনি এক ভয়ে- আতঙ্কে ঝাঁকুনি খেলো বাংলাদেশের মানুষ।

‘হারামজাদা তোর চোখ তুলে ফেলবো, তুমি আমাকে চেনো না?’__ বিএনপির নেতা রফিকুল ইসলাম মিয়ার উদ্দ্যেশে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান!!
এর পরে নিশ্চয়ই মানুষ রাজনীতিবিদদের কাছ হতে ভাল কিছু খুব কম ই আশা করবে।

ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার মধ্যরাতে বেসরকারি টেলিভিশন আরটিভি ‘আওয়ার ডেমোক্রেসি’র স্লটের কিছুটা বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত ‘ঈদ-পূজায় নিরাপদে ঘরে ফেরা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায়।

খবরটি দেশের শীর্ষস্থানীয় সব পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অক্টোবর ২৪,২০১২ দৈনিক মানবজমিন এর রিপোর্ট মতে 'তেজগাঁও শিল্প এলাকায় আরটিভির নবনির্মিত বহুমাত্রিক স্টুডিও হলে অনুষ্ঠিত টক শো তে অতিথি হিসেবে অংশ নেন নৌপরিবহনমন্ত্রী মো. শাহজাহান খান, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি মো. ইসরাফিল আলম, আওয়ামী লীগের আরেক এমপি গোলাম মওলা রনি, বিএনপি দলীয় এমপি রাশেদা বেগম হিরা, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সভাপতি চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, জাতীয় পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, র‌্যাবের পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল, পরিবেশ আন্দোলনের নেতা স্থপতি ইকবাল হাবিব, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনির হায়দার, সাংবাদিক জাকারিয়া কাজল এবং প্রবাসী সাংবাদিক নিশাদ দস্তগীর। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন ঢাবি শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস।

রাত সোয়া ১১টা থেকে আরটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার শুরু হওয়ার পর যত দূর দেখা গেছে- আলোচনার এক পর্যায়ে বক্তব্য শুরু করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী মো. শাহজাহান খান। তিনি নৌপথের উন্নয়নে তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বয়ান দেন। বিশেষত, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় নতুন নতুন জাহাজ ক্রয়, ড্রেজার ক্রয় ইত্যাদির বিবরণ তুলে ধরেন তিনি। একপর্যায়ে তিনি বলেন, বিগত জোট সরকারের আমলে নৌপরিবহন খাতের কোন উন্নয়ন হয়নি। তখন কেবল চাঁদাবাজি আর দুর্নীতি হয়েছে এই খাতে। মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় টার্মিনালে চাঁদাবাজি করেছে। তার এই বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়ে এ সময় বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, আমাদের সময় দুর্নীতি আর চাঁদাবাজি হয়েছে, এখন কি এসব বন্ধ হয়ে গেছে? সে সময় বেশি চাঁদাবাজি হয়েছে, নাকি এখন বেশি হচ্ছে- সেই হিসাব দেন। এখন তো লোকজন আপনাদের চোর বলছে। এ সময় শাহজাহান খান কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলেন, আপনি চুপ করুন। আমার বলা শেষ হলে আপনি বলবেন। জবাবে রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, এই অনুষ্ঠানে আমাকে দাওয়াত দেয়ার সময় বলা হয়েছিল যে, কোন রকম আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেয়া হবে না। কিন্তু এখন দেখছি শুধু আমাদের আমলের বদনাম করা হচ্ছে। এ পর্যায়ে উপস্থাপক বলেন, জনাব রফিকুল ইসলাম মিয়া আপনাকে বলার সুযোগ দেয়া হবে, আপনি তখন বলবেন। কিন্তু তাতে কর্ণপাত না করে তিনি শাহজাহান খানের কথার পিঠে কথা বলে যাচ্ছিলেন। আর এতেই প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন নৌপরিবহনমন্ত্রী। আপনি থেকে হঠাৎ তুমি সম্বোধন শুরু করেন তিনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় হঠাৎ বন্ধ করে দেয়া হয় সরাসরি সমপ্রচার। কিন্তু তাতেও থামছিলেন না দুই নেতা। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান দু’জনেই। শাহজাহান খান হুঙ্কার দিয়ে বলে ওঠেন, হারামজাদা তুমি জানো না একজন মন্ত্রীর সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হয়? তোমাকে আজ জুতাপেটা করবো। মন্ত্রীর এসব কথায় একেবারেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান রফিকুল ইসলাম মিয়া। তিনি মাথা নিচু করে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন স্টুডিও থেকে। এ সময় তার দিকে তেড়ে যান মন্ত্রী শাহজাহান খান। বলে ওঠেন, রফিক তুমি শাহজাহান খানকে চেনো না। আজ এখন তোমার চোখ তুলে ফেলবো। মারামারি করতে চাইলে চলো ফিল্ডে নামি। এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি ইসরাফিল আলম-ও নৌমন্ত্রীর পক্ষ নিয়ে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াকে বকাঝকা করতে থাকেন। তবে বাকি সবাই হতভম্ব হয়ে নীরবে দেখতে থাকেন সেই দৃশ্য। এমনকি অপর দুই এমপি গোলাম মওলা রনি এবং রাশেদা বেগম হিরাও নিজ নিজ আসনে বসেছিলেন চুপচাপ। একপর্যায়ে রফিকুল ইসলাম মিয়া স্টুডিও থেকে বেরিয়ে যান। উঠে দাঁড়ান ইলিয়াস কাঞ্চন, মনির হায়দার ও ইকবাল হাবিব। কিন্তু আরটিভির স্টাফদের অনুরোধে তারা আবার চেয়ারে বসেন। এ পর্যায়ে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য রাশেদা বেগম হিরা চেয়ার থেকে উঠে বেরিয়ে যান। এ সময় আওয়ামী লীগের এমপি ইসরাফিল আলম তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি আবার কোথায় যাচ্ছেন? জবাবে রাশেদা বেগম হিরা বলেন, আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়েছি। তাই আর বসতে চাই না। পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে ইসরাফিল আলম বলেন, আপনাদের আবার ভয় আছে নাকি? কিছুক্ষণ পর দেখা গেল, আরটিভির কর্মকর্তারা ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ও রাশেদা বেগম হিরাকে আবার স্টুডিওতে ফিরিয়ে এনেছেন। তাদের অংশগ্রহণেই কয়েক মিনিট পর আবার শুরু হয় অনুষ্ঠানটি এবং সরাসরি সমপ্রচার করা হয় বাকি অংশ। শেষ অংশের আলোচনায় আর তেমন উত্তাপ-উত্তেজনা ছিল না। অবশ্য অনুষ্ঠান শেষে আরটিভি কর্মীদের অনুরোধে মন্ত্রী শাহজাহান খান স্টুডিও থেকে বের হওয়ার পথে হাত মেলান ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার সঙ্গে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া মানবজমিনকে জানান, আমি হতবাক হয়েছি। কোন সভ্য মানুষ এ ধরনের ভাষায় কথা বলতে পারেন এটা বিশ্বাস হচ্ছে না। একজন মন্ত্রী হয়ে প্রকাশ্যে কোন নাগরিককে যে ধরনের ভাষায় হুমকি দেয়া হয়েছে তা বলতে লজ্জা হচ্ছে। রাজনীতি করতে গিয়ে মানুষকে শ্রদ্ধা করতে শিখেছি। অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য, সাংবাদিক ও র‌্যাবের একজন ডিজি ছিলেন। তাদের সামনেই কাউকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া কোন সভ্য মানুষের পরিচয় হতে পারে না। (রিপোর্ট সমাপ্তি)মানবজমিন
ফেসবুকে ভিডিও

এই হচ্ছে আমাদের বর্তমান রাজনীতিবিদদের ভাষা ও ব্যবহার। পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলো যখন উন্নয়নের ধারায় এসে পৃথিবীতে নিজেদের সুপরিচিতি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে তখন আমাদের জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিকগণ এক পক্ষ অপরকে দোষারোপ করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে বা নিজের স্বার্থ উদ্ধারে অশুভ, অগণতান্ত্রিক কু পদ্ধতি অবলম্বন করছে! আর দেশে সৃষ্টি হচ্ছে নানাবিধ সমস্যা যা উন্নয়নের পথে বাধাঁ।

দেশপ্রেম আজ বড়ই জরুরী!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৯:২০
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×