আমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তথ্য জানার জন্যে গুগলের সাহায্য নিতাম। কখনও কখনও বাংলায়ও সার্চ দিতাম। একটি বিষয় লক্ষ্য করতাম যে আমার বাংলায় সার্চ করা অনেক বিষয়ই সামুতে পাওয়া যাচ্ছে। আগে অবশ্য আমি আমার কিছু বড় ভাইয়ের কাছে সামুর নাম অনেকবারই শুনেছিলাম। তবে আগ্রহ না থাকায় সামুতে তেমন আসতাম না। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ আগে জার্মান একনায়ক অ্যাডলফ হিটলার সম্পর্কে নতুন কিছু তথ্য জানতে গুগলে সার্চ দেই। সাথে সাথেই চলে আসে সামুর একটি সিরিজ যেখানে থার্ড রাইখ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এত সুন্দর ও সহজ করে লেখা হয়েছে সিরিজটা যে আমি আধ ঘন্টায় পুরো সিরিজটাকে শেষ করে ফেলি। সাথে সাথে মনে হল যে একটা অ্যাকাউন্ট থাকলে খারাপ হয় না। এই ভেবেই একটা অ্যাকাউন্ট খুলে ফেললাম।
অ্যাকাউন্ট খোলার পরে আমার পড়ার পালা শুরু হয়ে গেল। আমি সারাক্ষনই কিছু না কিছু পড়তে থাকতাম। দু-একটা মন্তব্য করাও শুরু করলাম। আস্তে আস্তে ব্লগের অনেক গুণী লেখককে চিনে ফেললাম। তাঁদের পুরনো লেখাগুলোও পড়তে লাগলাম। হঠাৎ একজন ব্লগার আমাকে উৎসাহ দিয়ে বললেন যে আমি যেন লেখা শুরু করি। তবে কি, আমার হাতের লেখা এমনই খারাপ যে লিখতে সাহস হচ্ছিল না। আর আমি বিষয়বস্তুও খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
কাল একটা পোস্ট পড়া শেষ করে পোস্টের মন্তব্যগুলো পড়ছিলাম। হঠাৎ একটা মন্তব্য দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। জনৈক ব্লগার অকথ্য ভাষায় পোস্টের লেখককে গালাগাল দিচ্ছে। আমার মনে হল আদর্শিক দিক থেকে মন্তব্যকারী এবং লেখক দুই মেরুর মানুষ। তবে তাই বলে তো একজন শিক্ষিত মানুষ এই ধরণের গালাগাল দিতে পারে না। মনে হল এই বিষয়ে কিছু লেখা উচিৎ। তাই আজকের এই লেখা।
একটা মানুষ ছোট থেকে বড় হতে হতে অনেক কিছু শেখে। শিখতে শিখতে ঐ মানুষটির মধ্যে মতামত প্রকাশের ক্ষমতা জন্মায়। মানুষটি চায় নিজের মতামত প্রকাশ করতে। পৃথিবীর প্রতিটি সুস্থ্য মানুষের জন্যেই একথাগুলো প্রযোজ্য। তবে সব মানুষের মতামত একরকম হয় না। একেকজনের দৃষ্টিভঙ্গি একেকরকম। কারো কাছে ক্ষুদিরাম বসু একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী আবার কারো কাছে তিনি একজন সন্ত্রাসী।
‘মতভেদ’ এই গ্রহের মানুষ নামক প্রাণীর ক্ষেত্রে নিপাতনে সিদ্ধ। এটাকে মেনে নিয়েই আমাদের পৃথিবীতে চলতে হবে। যদি কারো সাথে মতভেদ হয়ে থাকে তবে তাকে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবেই মোকাবেলা করা উচিৎ। কোনভাবেই কোন অশ্লীল আচরণ করা উচিৎ নয়। এই ব্লগে কেউ কেউ হয়ত সাম্যবাদী কেউ কেউ হয়ত ইসলামপন্থী আবার কেউ কেউ হয়ত গণতন্ত্রপন্থী। অনেকের হয়ত একে অপরের সাথে মতানৈক্য হতে পারে। তবে সেই মতানৈক্যর জন্য কেউ যদি অন্য মানুষকে গালাগালি করে তবে সেই গালাগালিগুলো তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যর্থতাকেই বোঝাবে।
কথায় আছে ‘ব্যবহারে বংশের পরিচয়’। আপনি যখন অশ্লীল বাক্য ব্যবহার করবেন সেটা আপনার বংশের পরিচয়ই বহন করবে। আপনার বাবা মা আপনাকে কি শিক্ষা দিয়েছেন সেটাও মানুষ বুঝবে। আপনার ব্যক্তিত্ব বলে আর কিছুই থাকবে না। আপনাকে বাকি সবাই খারাপ চোখে দেখবে। আপনার নিশ্চয়ই ইচ্ছা করে না পৃথিবীর ঘৃণিত ব্যক্তিদের একজন হতে?
সামুতে অনেককেই দেখলাম ধর্ম নিয়ে অশ্লীল পোস্ট দিচ্ছে। হ্যাঁ অনেকেই বলতে পারে এটা যার যার বাকস্বাধীনতা। আমি মানছি। তবে বাকস্বাধীনতা আর অশ্লীলতা একে বারেই এক নয়। আপনি ধর্ম নিয়ে সমালোচনা করতে পারেন তবে ধর্ম প্রবর্তকদের কিংবা ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের গালাগালি করতে পারেন না। আপনি যদি বলেন গালাগালি করাও বাকস্বাধীনতা তবে আপনার মাকে গালি দেওয়াও অন্যের কাছে বাকস্বাধীনতা। আপনার মা আপনার কাছে যেমন অতিপ্রিয় মানুষ ধর্মীয় লোকদের কাছে তাদের ধর্ম প্রবর্তকরাও অতি প্রিয় মানুষ। আপনার যেমন খারাপ লাগে আপনার মাকে গালাগালি করলে ঠিক তেমনি ধর্মীয় লোকদেরও খারাপ লাগে যখন আপনি তাদের ধর্ম প্রবর্তকদের গালাগালি করছেন।
একটা ঘটনা বলি। কোথায় যেন ঘটনাটি পড়েছিলাম। সম্রাট শাহজাহানের কাছে একবার পারস্যের রাষ্ট্রদূত আসলেন। সম্রাট তাকে খেতে দিলেন। রাষ্ট্রদূত খাবার সময় কটমট শব্দ করে মুরগীর হাড় চিবোচ্ছিলেন। সম্রাটের কটমট শব্দ সহ্য হচ্ছিল না। সম্রাট রাষ্ট্রদূতকে বললেন, “মুরগীর হাড় দেখি সব খেয়ে ফেললেন, কুকুরের জন্যে কিছু রাখুন”। এই শুনে রাষ্ট্রদূত পোলাওয়ের দিকে আঙুল তুলে বললেন, “ঐ তো রেখেছি ওখান থেকেই কুকুর খাবে”। মজার বিষয় হচ্ছে সম্রাটের প্রিয় খাবার ছিল পোলাও।
দেখুন একজন আরেকজনকে সুন্দর শব্দ ব্যবহার করে অপমান করেছিলেন। অপমান করেছে ঠিকই তবে ভাষাগত সৌন্দর্যের ফলে অপমানটি বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যায়ে চলে গেছে। গালাগালি করার মধ্যে আপনার কোন বীরত্ব নেই বরং এর মধ্যে আপনার অসহায়ত্ব আছে। আপনার মতামতের অসহায়ত্ব আছে।
ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের অত্যন্ত সতর্ক হওয়া উচিৎ। যদি আপনার কারো লেখা একান্তই খারাপ লাগে। তবে আপনি সেই পোস্ট থেকে একশ হাত দূরে থাকুন। দয়া করে গালাগালি করবেন না। আপনার একটা কথাই বলে দেবে আপনি কোথা থাকে উঠে এসেছেন।
পুনশ্চঃ ব্লগে এটাই আমার প্রথম পোস্ট। ব্লগে লেখার প্যাটার্ন জানি না। সামুর ‘সহযোগিতা’ থেকে যতটুকু জেনেছি ততটুকুই । আশা করি লেখার দোষত্রুটি ধরিয়ে দেবেন ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:১৪