তখন ২০০৮ সাল। সবেমাত্র এইচএসসি দিয়েছি। ময়মনসিংহ শহরের এক কোণায় থাকি। ইউনিভার্সিটি এডমিশন কোচিং এর টানা ক্লাস আর ভাল লাগছিলনা। মেসে শুয়ে বসে দিন যাচ্ছিল আমার। একদিন শুয়ে আছি রুমমেট এর বিছানায়, হঠাৎ চোখ পড়ল একটি বইয়ের উপর। ছোঁ মেরে বইটি হাতে নিয়ে দেখলাম, আরে সত্যজিতের ফেলুদা সমগ্র যে! নস্টালজিয়ায় পড়ে গেলাম। আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়তাম তখন রাত্রে বিটিভিতে ফেলুদা দেখাত। অনেক কিছুই বুঝতাম না। তবে কেন জানি অসাধারণ লাগত, ফেলুদা শুরু হলে টিভি থেকে চোখই আর সড়াতে পারতাম না।
যখন ‘গোরস্থানে সাবধান’ পড়া শুরু করেছি, তখন দেখি ধীরে ধীরে গায়ের সব লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে। এমনও সময় গেছে রুমে রুমমেট না থাকলে ফেলুদা পড়তে পারতাম না। কিছুটা ভয় আর এডভেঞ্চারে আমি সত্যিই নার্ভাস হয়ে পড়তাম।
সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা ছাড়া অন্য কোন লেখা আমি পড়িনি। ফেলুদার একটি বড় বৈশিষ্ট হল শুরুটা দেখে শেষ ফিনিশিং কী হবে তা বলে দেয়া যায় না।
ফেলুদার আরেকটি বৈশিষ্ট হল-কাহিনী বর্ণনা অসাধারণ। একবার পড়তে বসলে আর ছাড়াছাড়ি নাই। এডমিশন কোচিং করতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি- এর কী জ্বালা!!
টিভিতেও অনেকবার ফেলুদা দেখেছি। টিভিতেও সমানতালে পরিচালক তার স্বাক্ষর রেখেছেন।
বড় কথা হচ্ছে পরিচালক সন্দীপ রায় হয়তো সত্যজিৎ রায়কে সম্মান জানাতেই গুরুত্বের সহিত কাজটি করেছেন। এমনটি কয়জনে পারেন!!
মিস্টার হিরো ফেলুদার কথা কী আর বলব। বইয়ের কাহিনীতেও সমান দাপট দেখিয়েছিন। টিভিতেও এক্কেবারে সেই রকম। সেই সাথে মিত্তির সাহেবের কথা নাইবা বললাম।
ফেলুদার সপ্তকান্ড পড়ে মজা পায় নাই এরকম কয়জন আছেন, হাত তোলেন। পাহাড়ে ফেলুদা পড়ে নিজেইতো ফেলুদা হয়ে গিয়েছিলাম। শুধুমাত্র এডমিশন টেস্ট ছিল বলে রক্ষে পাইছি
প্রত্যেক লেখকেরই নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট রয়েছে যার কারণে নিজ স্বকীয়তায় তারা উদ্ভাসিত।
সত্যজিত সাহেবেও তেমনি একজন। উনার জন্য হাজারো শুভকামনা, বেঁচে থাকুন মানুষের হৃদয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৫৮