উত্তর আসবে সালমান খান, উত্তরদাতা যদি ডিশুম ডিশুম কম পছন্দ করেন তাহলে হয়তো বলবে শাহরুখ খান। একটু বিস্তরভাবে যদি এ জরিপটি চালানো হয়, তাহলে অনেকে আবার শাকিব খান এর নামও বলতে পারেন ।
কিন্তু যারা সীমানা পেরিয়ে’ তে ঝড় বিক্ষুব্ধতা আর জলোচ্ছ্বাসের ভেতর ভেসে উঠা বুলবুল আহমেদ এর দীপ্ত উপস্থিতি দেখেছিলেন, তারা কী বলবেন?
এমন শুভ্র চেহারা, ভাবুক চাহনি, ধীরলয় অভিনয়, অভিনয়ে চমৎকার এক্সপ্রেশন বাংলা সিনেমায় ক’জন নায়কের মধ্যে ছিল? যারা দেবদাস সিনেমায় পার্বতীকে (কবরী) পাওয়ার আকুলতা দেখেছিলেন অভিনেতা বুলবুল আহমেদ এর মধ্যে তারা হয়তো প্রেমের ভাষাকে অন্যভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বুলবুল আহমেদ হয়তো এ ছবিতে অভিনয় করে প্রেমের সংজ্ঞা চেঞ্জ করে ফেলেছিলেন ! ভাগ্যিস আমাদের দেশে শাকিব খান জন্মেছিলেন , নাহলে কী না হতো!!
কে জানত সিলেটের এমসি কলেজ, ঢাকার কলেজিয়েট স্কুল, নটরডেম কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া এই তরুণ একদিন বাংলা সিনেমার ভীত কাপিয়ে দিবেন একদিন। বর্তমান বাংলা সিনেমার কিছু নায়কের মতো ভুড়িভুড়ি চলচ্চিত্রে অভিনয় না করলেও বুলবুল আহমেদ আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন কীভাবে অভিনয় করতে হয়! কিছুদিন আগে একজনকে বলতে শুনি- বুলবুল যুগে মানুষ অভিনয় দেখতে সিনেমা হলে যেত আর এখন যায় ফিগার দেখতে ।
সিলেটের এমসি কলেজে অধ্যয়নকালীন মঞ্চনাটক ‘চিরকুমার সভা’য় নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করে উপস্থিত সবার নজর কাড়তে সক্ষম হন বুলবুল। পড়াশোনা শেষ করার পর ইউবিএল ব্যাংক এ টিএসসি শাখার ম্যানেজার হিসেবে চাকরী জীবন শুরু করেন তিনি।
ব্যাংকে ১০ বছর চাকরি করার পর তিনি রূপালি জগতে পর্দায় পা রাখেন। ১৯৭২ সালে আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামের অনুপ্রেরণায় সিনেমায় কাজ শুরু করেন বুলবুল আহমেদ। ১৯৭৩ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামের (ইউসুফ জহির) মুক্তি পাওয়া ছবি ইয়ে করে বিয়ের মাধ্যমে প্রথম বড় পর্দার দর্শকদের সামনে নায়ক হিসেবে আর্বিভাব ঘটে তাঁর। বছর খানেক বিরতির পর আবার বড় পর্দায় আসেন আবদুল্লাহ আল মামুনের অঙ্গীকার ছবির মাধ্যমে। এর পর একে একে কাজ করেন ধীরে বহে মেঘনা, রূপালী সৈকতে, সীমানা পেরিয়ে, সূর্য কন্যা, জন্ম থেকে জ্বলছি সহ বেশ কিছু দর্শকনন্দিত ছবিতে। ১৯৮২ সালে চাষী নজরুল ইসলামের দেবদাস ছবির মাধ্যমে নিজেকে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে আসেন বুলবল আহমেদ।
ছোট পর্দার নাটকেও বুলবুল আহমেদ ছিলেন অনবদ্য একটি নাম। যারা হুমায়ূন আহমেদের ‘এই সব দিনরাত্রি’ ধারাবাহিকটি দেখেছেন, তাদের তো আর ‘শফিক সাহেব’ কে মনে করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই!
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি কয়েকটি ছবিও পরিচালনা করেন বুলবুল আহমেদ। বুলবুল আহমেদ পরিচালিত উল্লেখযোগ্য ছবি হচ্ছে ওয়াদা, মহানায়ক, ভালো মানুষ, রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্ত, আকর্ষণ, গরম হাওয়া, কত যে আপন প্রভৃতি। এর মধ্যে শেষের চারটি ছবি প্রযোজনার পাশাপাশি পরিচালনাও করেন বুলবুল আহমেদ। ৪৪ বছরের মিডিয়া জীবনে বুলবুল আহমেদ প্রায় ৩০০ নাটক এবং দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন। বুলবুল আহমেদ অভিনীত সর্বশেষ চলচ্ছিত্র হচ্ছে দুই নয়নের আলো, আর সর্বশেষ টিভি নাটক হচ্ছে ২০০৯ সালে শুটিংকৃত বাবার বাড়ি। নাটকটিতে অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনার কাজও করেছেন তিনি।
বুলবুল আহমেদ তাঁর দীর্ঘ অভিনয় জীবনে চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পুরস্কার লাভ করেন। ১৪ জুলাই ২০১০ সালে বাংলা সিনেমার দর্শকপ্রিয় এই কিংবদন্তি চলে যান- না ফেরার দেশে। এই শোক সত্যি কাটিয়ে উঠার মতো নয়। তবুও
কবি আলফ্রেড টেনিসনের মতো এই শোকের অতীত মৃত্যুকেও মেনে নিতে চাইছি এভাবে:
টেনিসনের মতে, মৃত্যুকে নিষ্ঠুর কিংবা মন্দ বিবেচনা করা ঠিক নয়। কারণ, মৃত্যু হলো সেই সিংহ দরোজা যা দিয়ে মানুষ মহিমান্বিত সত্ত্বার সন্ধান ও সান্নিধ্য পায়। তাই একে সানন্দেই স্বাগত জানানো উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৫৭