somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যাংক কর্মকর্তা থেকে কিংবদন্তি নায়ক

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই যুগে এপার বাংলার প্রজন্মকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, তোমার প্রিয় নায়ক কে?
উত্তর আসবে সালমান খান, উত্তরদাতা যদি ডিশুম ডিশুম কম পছন্দ করেন তাহলে হয়তো বলবে শাহরুখ খান। একটু বিস্তরভাবে যদি এ জরিপটি চালানো হয়, তাহলে অনেকে আবার শাকিব খান এর নামও বলতে পারেন :( :(
কিন্তু যারা সীমানা পেরিয়ে’ তে ঝড় বিক্ষুব্ধতা আর জলোচ্ছ্বাসের ভেতর ভেসে উঠা বুলবুল আহমেদ এর দীপ্ত উপস্থিতি দেখেছিলেন, তারা কী বলবেন?


এমন শুভ্র চেহারা, ভাবুক চাহনি, ধীরলয় অভিনয়, অভিনয়ে চমৎকার এক্সপ্রেশন বাংলা সিনেমায় ক’জন নায়কের মধ্যে ছিল? যারা দেবদাস সিনেমায় পার্বতীকে (কবরী) পাওয়ার আকুলতা দেখেছিলেন অভিনেতা বুলবুল আহমেদ এর মধ্যে তারা হয়তো প্রেমের ভাষাকে অন্যভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বুলবুল আহমেদ হয়তো এ ছবিতে অভিনয় করে প্রেমের সংজ্ঞা চেঞ্জ করে ফেলেছিলেন ! ভাগ্যিস আমাদের দেশে শাকিব খান জন্মেছিলেন B-) , নাহলে কী না হতো!!


কে জানত সিলেটের এমসি কলেজ, ঢাকার কলেজিয়েট স্কুল, নটরডেম কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া এই তরুণ একদিন বাংলা সিনেমার ভীত কাপিয়ে দিবেন একদিন। বর্তমান বাংলা সিনেমার কিছু নায়কের মতো ভুড়িভুড়ি চলচ্চিত্রে অভিনয় না করলেও বুলবুল আহমেদ আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন কীভাবে অভিনয় করতে হয়! কিছুদিন আগে একজনকে বলতে শুনি- বুলবুল যুগে মানুষ অভিনয় দেখতে সিনেমা হলে যেত আর এখন যায় ফিগার দেখতে :P :P


সিলেটের এমসি কলেজে অধ্যয়নকালীন মঞ্চনাটক ‘চিরকুমার সভা’য় নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করে উপস্থিত সবার নজর কাড়তে সক্ষম হন বুলবুল। পড়াশোনা শেষ করার পর ইউবিএল ব্যাংক এ টিএসসি শাখার ম্যানেজার হিসেবে চাকরী জীবন শুরু করেন তিনি।


ব্যাংকে ১০ বছর চাকরি করার পর তিনি রূপালি জগতে পর্দায় পা রাখেন। ১৯৭২ সালে আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামের অনুপ্রেরণায় সিনেমায় কাজ শুরু করেন বুলবুল আহমেদ। ১৯৭৩ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামের (ইউসুফ জহির) মুক্তি পাওয়া ছবি ইয়ে করে বিয়ের মাধ্যমে প্রথম বড় পর্দার দর্শকদের সামনে নায়ক হিসেবে আর্বিভাব ঘটে তাঁর। বছর খানেক বিরতির পর আবার বড় পর্দায় আসেন আবদুল্লাহ আল মামুনের অঙ্গীকার ছবির মাধ্যমে। এর পর একে একে কাজ করেন ধীরে বহে মেঘনা, রূপালী সৈকতে, সীমানা পেরিয়ে, সূর্য কন্যা, জন্ম থেকে জ্বলছি সহ বেশ কিছু দর্শকনন্দিত ছবিতে। ১৯৮২ সালে চাষী নজরুল ইসলামের দেবদাস ছবির মাধ্যমে নিজেকে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে আসেন বুলবল আহমেদ।


ছোট পর্দার নাটকেও বুলবুল আহমেদ ছিলেন অনবদ্য একটি নাম। যারা হুমায়ূন আহমেদের ‘এই সব দিনরাত্রি’ ধারাবাহিকটি দেখেছেন, তাদের তো আর ‘শফিক সাহেব’ কে মনে করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই!
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি কয়েকটি ছবিও পরিচালনা করেন বুলবুল আহমেদ। বুলবুল আহমেদ পরিচালিত উল্লেখযোগ্য ছবি হচ্ছে ওয়াদা, মহানায়ক, ভালো মানুষ, রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্ত, আকর্ষণ, গরম হাওয়া, কত যে আপন প্রভৃতি। এর মধ্যে শেষের চারটি ছবি প্রযোজনার পাশাপাশি পরিচালনাও করেন বুলবুল আহমেদ। ৪৪ বছরের মিডিয়া জীবনে বুলবুল আহমেদ প্রায় ৩০০ নাটক এবং দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন। বুলবুল আহমেদ অভিনীত সর্বশেষ চলচ্ছিত্র হচ্ছে দুই নয়নের আলো, আর সর্বশেষ টিভি নাটক হচ্ছে ২০০৯ সালে শুটিংকৃত বাবার বাড়ি। নাটকটিতে অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনার কাজও করেছেন তিনি।

বুলবুল আহমেদ তাঁর দীর্ঘ অভিনয় জীবনে চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পুরস্কার লাভ করেন। ১৪ জুলাই ২০১০ সালে বাংলা সিনেমার দর্শকপ্রিয় এই কিংবদন্তি চলে যান- না ফেরার দেশে। এই শোক সত্যি কাটিয়ে উঠার মতো নয়। তবুও
কবি আলফ্রেড টেনিসনের মতো এই শোকের অতীত মৃত্যুকেও মেনে নিতে চাইছি এভাবে:
টেনিসনের মতে, মৃত্যুকে নিষ্ঠুর কিংবা মন্দ বিবেচনা করা ঠিক নয়। কারণ, মৃত্যু হলো সেই সিংহ দরোজা যা দিয়ে মানুষ মহিমান্বিত সত্ত্বার সন্ধান ও সান্নিধ্য পায়। তাই একে সানন্দেই স্বাগত জানানো উচিত।


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৫৭
৫২টি মন্তব্য ৪৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×