যাই হোক কলেজ লাইফ শেষ করে তরী ভিড়ালাম ইউনিভার্সিটিতে। প্রথম দিন অরিয়েন্টশন ক্লাস বেশ চমৎকার লাগিল । ক্লাস শেষে আরেক বিখ্যাত ক্লাসও আদায় করতে হয়েছে! বোধহয় অনেকটা বোকাসোকাই ছিলাম- সিনিয়র ভাইয়েরা বন্ধুকে ডেকে একাডেমিক ভবনের পিছনে নিয়ে যাওয়ার সময়, বন্ধুর ডাকে সাড়া দিলাম আমিও।
বড় ভাইজানেরা যেমনে আমার দিকে তাকাচ্ছিল মনে হইতেছিল- কোন জনমে এক মহা ভুল করছিলাম, এজন্য আজ এর খেসারত দিতে হইবেক ।
যাই হোক এক পর্যায়ে আমার হাতে একটি রজনিগন্ধার স্টিক ধরাইয়া দিয়া বড় ভাইজেনারা কইলো- যা ওই, সুন্দরী আপুরে প্রপোজ কইরা আয় । মনে মনে কইতাছিলাম শালার বেটারা- নিজেগো দুর্বল ঈমান নিয়া ওই বেটির সামনে খাড়াইতে পারো না. . . .।
কী আর করা, উত্তম মাধ্যম থেকে বাঁচতে গিয়া রজনিগন্ধা স্টিক হাতে নিলাম। ওই সুন্দরী আপুর কাছে যতই এগুচ্ছিলাম, ততই হস্ত কম্পন বাড়িয়া উঠিতেছিল। মনে মনে কইতাছিলাম- ইহা কী হইয়া চলিতেছে :> ?
আপু’র এক্কেবারে কাছে গিয়া চক্ষু বন্ধ কইরা চিক্কুর মাইরা কহিলাম- আপু, আমার কুনু দোষ নাই । ওই ভাইজেনারা পাঠাইছে আপনারে ফুল দেওয়ার লাইগা।
এই কথার পরপরই দেখিলাম- কোথা থেকে জানি, হাসাহাসির শব্দ পাওয়া যাইতেছে । চক্ষু খুলিয়া দেখিলাম, আরে আপুমনি তার বত্রিশখানা দাঁত বাহির কইরা হাসিতেছেন, সাথে বজ্জাত সিনিয়র ভাইজেনারাও. . . . । যাক, সেই যাত্রায় বড়ই বাঁচা বাইচ্চা গেছিলাম!
আজকে ৪বছর পর এইসব যখন ভাবি, তখন মোচড় দিয়া উঠে মনটা। ক’দিন আগে যখন অনার্সের শেষ ক্লাসটা করছিলাম তখন ভাবছিলাম, আহারে. . .এইভাবেই হয়তো সবাইকে বিদায় নিতে হয়!
হয়তোবা বিদায়ের এই উপলব্ধি থেকেই আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম উচ্চারণ করেছিলেন-
আবার গাঙে আসবে জোয়ার, দুলবে তরী রঙ্গে,
সেই তরীতে হয়ত কেহ থাকবে তোমার সঙ্গে-
দুলবে তরী রঙ্গে,
প’ড়বে মনে সে কোন্ রাতে
এক তরীতে ছিলেম সাথে,
এমনি গাঙ ছিল জোয়ার,
নদীর দু’ধার এমনি আঁধার
তেম্নি তরী ছুটবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৫৬