somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরজন্মে ‘পুরুষ’ নয়, ‘মানুষ’ হওয়ার বাসনা

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মা...ও মা....মা’রে.., আমাকে বাঁচা....।

ছোট্ট বোন লাবণীকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে যেই না রিকশায় উঠতে যাব ঠিক সেই মুহুর্তে কানে ঠেকল গগনবিদারী এই আত্মচিৎকারটি। ইশারায় রিকশা চালককে থামিয়ে সামনে পা বাড়ালাম। ভিড় ঠেলে একজনকে জিজ্ঞেস করলাম ভাই, কী হয়েছে এখানে? প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেল লোকটি। একই প্রশ্ন ছাড়লাম অন্যজনের কাছে। চোখেমুখে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে লোকটির সোজাসাপটা জবাব- মাঘিটার উচিত শিক্ষা হইছে। কৌতূহল মেটাতে শরীরের সকল শক্তি প্রয়োগ করে আরো সামনে গেলাম। সামনে গিয়ে একটি বীভৎস চেহারা দেখে আঁতকে উঠলাম। নেভী ব্লু সেলোয়ার কামিজ পরিহিতা একজন মেয়ে মাটিতে কাতরাচ্ছে। মেয়েটির ‘ব্যাজ’ দেখে বুঝলাম স্থানীয় একটি কলেজের ছাত্রী সে। কিছুক্ষণ আগে যার মুখে এসিড ছুড়ে দেয়া হয়েছে। এসিডের ভয়ানক জ্বালাপুড়ায় মেয়েটি চিৎকার করারও শক্তি হারিয়ে ফেলছে। সময় যতই বাড়ছে মেয়েটির মুখ থেকে বের হয়ে আসা গোঙানির শব্দ বাতাসে মিইয়ে যাচ্ছে। মেয়েটির গোঙানির শব্দ আমার বুকে এসে শেল এর মতো বিঁধছে। আর সহ্য করতে পারলাম না। দৌড়ে গিয়ে একটি দোকান থেকে একগ্লাস পানি নিয়ে এসে মেয়েটির পুড়ে যাওয়া অংশে উপর অল্প অল্প করে ঢালতে লাগলাম। আমার এই আচরণে পাশে থাকা উৎসুক ব্যাক্তিরা ইতোমধ্যে কানাঘুষা শুরু করে দিয়েছে। অনেকে অশ্লীল মন্তব্য করে পেটের ভাত হজম করে চলছে! তাদের তীর্যক মন্তব্যে আর কান দিতে ইচ্ছে হলো না। গ্লাসের পানি প্রায় শেষ, এরই মধ্যে ফোন বেজে উঠল। প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে মুঠোফোনটি বের করলাম। নাহ্ কল আসেনি, তাহলে..? ও আচ্ছা, মেয়েটির সঙ্গে থাকা ব্যাগ থেকে আসছে..শব্দটি। মুঠোফোনটি বের করে কলটি রিসিভ করলাম।

‘এই বিষয়ডা এইহানেই শেষ।
এইটা নিয়ে বেশী বাড়াবাড়ি করলে,
তোর বংশ নি:বংশ বানায়া দিমু’ -নিজের অস্তিত্ব জাহির করে ওপাশ থেকে লাইনটি কেটে দেয়া হল।

সাতপাঁচ না ভেবে আমি দৌড়ে গেলাম রিকশা আনতে। মেয়েটিকে অতিসত্ত্বর হাসপাতালে নেয়া উচিত। রিকশা ঠিক করে এসে দেখি জায়গাটিতে জনাকীর্ণতা আর নেই। মেয়েটির পাশে রাখা হয়েছে পুলিশের একটি গাড়ি। আমি এগিয়ে গেলাম পানি নিয়ে।
অ্যাই আপনি কে? এদিকে আসেন। পেছনে তাকিয়ে দেখি একজন সাব ইন্সপেক্টর আমাকে ডাকছেন।
এগিয়ে গিয়ে বললাম- ‘অ্যাই মেয়েটিকে এসিড মারা হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নেয়া উচিত’।
আপনি কে?- রাগত স্বরে সাব ইন্সপেক্টরের পাল্টা প্রশ্ন।
একটু বিব্রত হয়ে বললাম, আমি ওনার (এসিডদগ্ধ মেয়েটির) পরিচিত কেউ নই। এই পথেই যাচ্ছিলাম, চিৎকার শুনে থেমে দেখি ওনাকে এসিড ছুড়া হয়েছে।
মুখের ওপর পানি দিতে কে বলেছে আপনাকে?
একজন এসিডদগ্ধ ব্যাক্তিকে প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত জায়গায় পানি দিতে হয়।
অপরাধীদের আলামত নষ্ট করার দায়ে আপনাকে এক্ষুণি থানায় যেতে হবে।
এবার একটু রেগে গিয়ে বললাম, অপরাধীদের আলামত কীভাবে নষ্ট হল, সেটা বলবেন কী?
আমার কথা শেষ না হতেই শরীরের সমস্ত শক্তি হাতে এনে জোরে একটা চড় বসিয়ে দেয়া হল আমার গালে।
বেটা ফাইজলামি করস আমার সাথে, চল্ থানায় চল্। সাব ইন্সপেক্টরের এমন হুংকারের সাথে সাথেই একজন কনস্টেবল এসে আমার হাতে হ্যান্ডকাফ লাগানো শুরু করল।
আমি অনুনয় করে বললাম, স্যার আমাকে থানায় নেন, কোন সমস্যা নেই। কিন্তু এর আগে এই মেয়েটিকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করেন, প্লিজ আল্লাহর দোহাই লাগে।
তুইও থানায় যাবি, অ্যাইটাকেও (মেয়েটাকে) নেয়া হবে?
আমি বললাম স্যার, এই এসিডদগ্ধ মেয়েকে কেন থানায় নেয়া হবে?
সবকিছু তোরে বলতে হবে? শালা বাইনচোঁদ- এই বলেই বেয়নেট দিয়ে আমার ঘাড়ে আঘাত করলেন সাব ইন্সপেক্টর। ব্যাথায় আমি কুঁকড়ে গেলাম।
প্রায় ৫০মিনিট...পর।
থানায় ডিউটি অফিসারদের বসার একটি কক্ষের এক কোণায় কনস্টেবল প্রহরায় আমাকে বসিয়ে রাখা হল। সম্ভবত এসিডদগ্ধ মেয়েটিকে রেখেছে পাশের রুমে। মেয়েটির মুখ থেকে আর গোঙানির শব্দ বেরুচ্ছে না। মেয়েটির মন এখন কী চাচ্ছে, জানতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে আমার। থানায় বসা অবস্থায় মেয়েটির বীভৎস মুখটি বারবার ভেসে উঠছে চোখের সামনে। হয়তোবা তার মা কলেজ পড়ুয়া মেয়েটির জন্য ভাত রেঁধে রেখেছেন। আদরের মেয়েটি বাসায় পৌছুলে একসাথে ভাত খাবেন, আর চুটিয়ে গল্প করবেন। কিন্তু মেয়েটির মা হয়তো জানে না (!), হায়েনারা পদে পদে ছোবল মারার জন্য উৎপেতে আছে। সেই নরপশুদের সহযোগিতা করার জন্য ভিকটিমকে ‘পতিতা’ খেতাব দিতে বসে আসে আরেকদল কাপুরুষ। পাশাপাশি এসব দেখে মেয়ে জাতির চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধার করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার জন্য আছে আরো কত পশু। হায়, পুরুষত্ত্বের কী নিদারুণ অব্যবহার! তারুণ্যের কী অপচয়! ভাবতেই ঘেন্না হচ্ছে আমার। নাহ্, আর না। পরজন্মে মানুষ হতে চাই, পুরুষ নয়।
ওহ্, ছোট্ট বোন লাবণীকে ফোন দেয়া হয়নি।
ও কি বাড়ি পৌছেছে?
নিরাপদে?
নিসংকোচে?

বি.দ্র: এই লেখার চরিত্রগুলো কাল্পনিক হলেও এর বাস্তবতা কাল্পনিক নয় বলে মনে করি।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৫৫
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×