ক’দিন ধরেই খুব ধকল যাচ্ছে। কী শরীর কিংবা মনে। কিছুই ভাল লাগছেনা। তার উপর আবার শুরু হয়েছে পরীক্ষা। ব্লগেও খুব বেশী একটা আসা হয় না। নেটে বসলে প্রথম আলো কিংবা বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর এ ঢুঁ মেরে আসি। কিন্তু সেখানেও গতানুতিক খবর । হয়, পদ্মাসেতু, না হয় হরতাল, আর ধর্ষণের খবর তো আছেই। এসব খবর অনেকটা হলের ডাইনিংয়ের খাবারের মতো হয়ে গেছে। খেয়েধেয়ে বলি আর ভাল লাগে না, এবার একটু চেঞ্জ করা যায় না..। মন ভাল করতে, পরিবারের সদস্যদের কাছে ফোন দেই। কিন্তু অপরপাশ থেকে তাদেরও নীরবতা। মনে মনে বলি- ফোন দিয়ে মনে হয় ভুলই করলাম। রবী ঠাকুরের ফটিক গল্পে পড়েছিলাম-তের চৌদ্দ বছরের ছেলেদের মতো এমন বালাই আর নেই। অর্থাৎ তাদেরকে নাকি কেউ সহ্য করতে পারে না । কিন্তু ১৩/১৪ বছর তো সেই কবেই ফেলে এসেছি। তারপরও কেন..। নাহ্ রবী ঠাকুর আরও ক’বছর বাড়িয়েও লিখতে পারতেন... । সেদিন বসে বসে ভাবছি..আমরা যতই বড় হচ্ছি, ততই আমাদের গন্ডিটা ছোট হয়ে আসছে। ফ্রেন্ড সার্কেল থেকে শুরু করে সবকিছুতেই..। ছোট্ট থাকতে যেখানে ইচ্ছে সেখানে যেতে পারতাম। অন্য পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের মনোমালিন্য থাকলেও, তাতে আমার কিছু যায় আসতোনা। আমি দিব্যি ওইসব পরিবারে হানা দিয়েছি..হয় সেই পরিবারের ছোট্ট ছেলে কিংবা মেয়েটির সাথে কুতকুত, লুড, কিংবা টিভি দেখতে। ইশ্ কতই যে সৌন্দর্যে ভরা ছিল সেই দিনগুলি..।
এতটাই যান্ত্রিক হয়েছি আমরা যে. সহোদর ভাইবোনদের সাথেও বছরে একবার দেখা করার সুযোগ হয়ে উঠে না। হয়তোবা ফোন দিয়ে আমি খোঁজ খবরটা নেই। কিন্তু তারা যান্ত্রিকতা মেইনটেন করে চলেছেন। হা হা হা, ভালোই, ক্ষতি কী..?
সেদিন মাকে ফোন দিলাম। কিছুক্ষণ কথা বলে যা বুঝলাম, তিনিও একাকীত্বে ভুগছেন। অনেকটা আমার মতোই। তার ছেলেমেয়ে থেকেও প্রয়োজনে কাছে পান না, আর আমারতো ছেলেমেয়ে নেই (থুক্কু, আমিতো বিয়াই করি নাইক্কা), তারপরও যাযাবর হয়ে উঠতে পারিনি।
ইদানিং মনে হচ্ছে, সব মানুষই নিজকে নিয়ে ব্যস্ত। ব্যস্ত থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তারপরও একাকীত্ব ঘুচাতে, একটু মনের কথা বলতে, খুনসুটি করতে মানুষকে মানুষের সাথে মেলামেশা করা উচিত, সেটিও অনেকে করছে না। অধিকাংশই কেমন জানি ঘরকুনো হয়ে পড়ছে। অবশ্য আমি নিজেও ইদানিং অনেকটাই ঘরকুনো, অন্যদের আর কী বলব।
তবু আনমনে গেয়ে উঠি-
আমার বেলা যে যায় সাঁঝ বেলাতে
তোমার সুরে সুরে, সুর মেলাতে...।