somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বোন! (সত্য কাহিনী অবলম্বনে)

৩০ শে জুন, ২০০৮ সকাল ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়টা ডিসেম্বরের মাঝামাঝি, অনেকের মতই রেহানেরও পরীক্ষা শেষ। অবশ্য সে মাত্র নার্সারিতে পরে। পরীক্ষার গুরুত্ব বোঝার মত বয়স তার হয় নাই। কিন্তু তবুও সে বেশ খুশি। কারন তার বাবা-মা তাকে কথা দিয়েছে, পরীক্ষা শেষ হলে তাকে একটা বোন এনে দেওয়া হবে। আজ তার বাবা মাকে নিয়ে হাসপাতাল যাচ্ছে বোন আনার জন্য। রেহানের খুশি ধরে না। আগেই ঠিক করে রেখেছে বোনের নাম হবে "মিস্টি"

রেহান বারান্দার দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে, কখন তারা আসবে। সময়টা যেন কিছুতেই কাটতে চাইছে না। বন্ধুরা মাঠে খেলা করছে। সেদিকে তার মনা নেই। হটাৎ একটা আসংকা তার মনে আসে, এবারও বুঝি বাবা-মা কথা রাখলো না। তার মনে পরে গত মাসে তার বাবা কথা দিয়েছিলো ঢাকা থেকে রেসিং কারসেট এনে দেবেন, ঠিক জুয়েলের এমন একটা রেসিং কার আছে। জুয়েল সেটা তাকে ধরতে দেয় না। সে বাবা ঢাকা থেকে ফিরে আসার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করেছে। তাদের বাসা থেকে ট্রেনলাইন দেখা যায়। সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ট্রেনের আসা যাওয়া দেখেছে, এই বুঝি বাবা এলো.........ইয়া হু..........বাবা এসেছে.......দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জরিয়ে ধরে। কিন্তু সেইবার বাবা রেসিং কার আনে নাই......সে অনেক লম্বা কাহিনি। সেবার তার মনটা খুব খারাপ হয়েছিলো। ভাবতে ভাবতে তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। সে মনে মনে ভাবে তার কোন রেসিং কার দরকার নাই, বোন এলেই হলো। সে ঠিক করে রেখেছে, তার সব খেলনা সে তার বোনকে দিয়ে দেবে।

পিপ..পিপ...... গাড়ীর হর্ন, রেহান তাকিয়ে দেখ গাড়ী থেকে তার বাবা নেমেছে, মাও নামছে.....কোলে গোলাপি রংয়ের টাওল পেচানো তার বোন...........তার যেন তর সইছে না মনে হ্চ্ছে দুই তালা থেকে লাফিয়ে নেমে পরে।

বাসার সবাই খুব খুসি। ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে মিস্টি বিতরণ চলছে। সবাই আসছে তার বোনকে দেখতে.......কি সুন্দর বাবু...........কুটু কুটু .....পুটু পুটু.....। রেহানের মেজাজটা খারাপ হচ্ছে, কারন একেতো তাকে বাবু কোলে দেওয়া হচ্ছেই না, অন্য দিয়ে সে যে বাবুর সাথে একটু একলা খেলা করবে, তাও সম্ভব হচ্ছে না।

দেখতে দেখতে সাত দিন কেটে গেলো..........আজকে তার বোনের মাথা কামানো হবে.........তার মামা সৌদিয়ারব থেকে আসবে বাবু দেখার জন্য....বাসা লোকে লোকারন্য যেন বিয়ে বাড়ির আমেজ। ঠিক দুপুরে মামা এলেন। সবাই মিলে মামাকে দেখতে গেলো। ড্রইংরুমে মামা বসে আছেন, আর সবাই তাকে ঘিরে আছে। মামা বাবুটার জন্য অনেক কিছু এনেছে..........সুটকেজ খুলে একটার পর একটা জিনিস বের করছে....রেহানের খুব রাগ হচ্ছে, বাবুটা ঐ রুমে একলা ঘুমিয়ে আছে, আর সবাই ড্রইং রুমে হাহা..হিহি.....অসহ্য......সে তার বোনের রুমে চলে আসে। শীতের মধ্যে বাবুটা কি সুন্দর লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে.......না! বাবুটা যে একদমই নরছে না........কি হলো? শ্বাসওতো নিচ্ছে না......সে মাকে চিৎকার করে ডাকে..........ততক্ষনে বাবুটা নেই। লেপ নাকের ওপর চাপা পরে শ্বাস বন্ধ হয়ে বাবুটা মারা গেছে...........সেদিন তার মায়ে কান্নায় বাতাস যেন ভারি হয়ে গিয়েছিলো।

মিস্টি নামটা আর রাখা হলো না। তার আগেই বাবুটাকে কবর দিতে হলো। পরের দিন রেহানকে আর পাওয়া যাচ্ছিলো না। কোথাও না। তার মা বাবার অবস্হা তখন বলে বোঝানর মতো না। অবশেষে মাইকিং করতে হলো, সারা শহরের মানুষ জানলো, রেহান নামের ৫ বছরের একটি বালক কে খুযে পাওয়া যাচ্ছেনা।

সন্ধা ৬টার দিকে (যেহেতু শীতকাল, তাই ৬টা মানে অনেক সন্ধা) রেহানকে পাওয়া গেলো কবরস্হানে, তার বোনের কবরের পাসে। বোনটা একা একা ভয় পাবে, তাই সে বসে আছে............।

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ১২:১৭
৪৫টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×