আমাদের বাসায় একটা রেডিও আছে, পুরোনো আমলের, অ্যান্টেনায় চলে, চলে মানে চালালে এখনও বেশ চলে সেটা, ঢাউস সাইজের, বর্তমানে চিলেকোঠায় ঠাঁই, কেউ সেটা এখন ছুঁয়েও দেখে না। নতুন নতুন গ্যাজেটের আগমনে কমে গেছে সেই রেডিওর প্রতি মায়া।
মায়া কমে যাওয়া একদিকে ভালো। মায়া কমে গেলে দুঃখবোধ এড়িয়ে যাওয়াটা সহজ হয়ে যায়, মন খারাপ লাগার পরিধিটা ছোট হয়ে আসে।
মায়া আমারও কমে গেছে। তবু বেখেয়ালে ঘুরে বেড়াই আজও, অনর্থক কাজে সময় নষ্ট করি, কখনো কখনো উঠে আসি চিলেকোঠায়, পুরোনো রেডিওটার সামনে দাঁড়াই কারণে অকারণে, ধুলো ঝাড়ি, অন করি, গ-গ শব্দে কাশতে কাশতে নিজের বয়স জানান দেয় রেডিওটা, আমি ইয়া বড় বড় নব ঘুরাই, কত কিচমিচ ধ্বনি, কতো বিচিত্র আওয়াজ পেরিয়ে মাঝে মাঝে চেনা অচেনা ওয়েব লেংথে স্থির হয় কালো মোটা কাটা, রেডিও পিকিং, বিবিসি, ভোয়া, আকাশবাণী, সংবাদতরঙ্গ- শুনতে পাই ওয়াশিংটনের সাথে পিয়ং ইয়ংয়ের সম্পর্কের তিক্ততা বাড়ছে, শুনতে পাই মায়ানমারে মানুষ মরছে, দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হচ্ছে শরণার্থীর ভির, শুনতে পাই বাংলাদেশে রূপার শ্লীলতাহানি, বর্বর হত্যাকাণ্ডের কাহিনী, আমি ব্যথিত হই, আমার ভেতর পুড়তে থাকে, পুড়তে থাকে পুরো নগর, রেডিওর নব ঘুরাই, শুনতে পাই কারো প্রতিবাদী স্বর, ‘-নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়-’
হয়তো এড়ায় না, হয়তো এড়ায়- আমি জানি না ঠিক, আমার দহন, আমার প্রজ্জ্বলন বড় বেশি সাময়িক, মোমবাতি নির্বাপনের আগে দপ করে জ্বলে উঠে চিরতরে নিভে যাওয়ার মতো অনেকটা, আত্মকেন্দ্রিকতায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত আমি, কিছুই করার নেই, মায়া কমে গেছে, মায়া কমে গেলে এমনটাই হয়
ছবি: সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৮