কালো বিড়ালটা কথা বলতে পারতো, হয়তো অবিশ্বাস্য শোনাচ্ছে, অথচ আমার দেখা শ্রেষ্ঠ গল্পকথক আমি ওকেই বলবো
ও আমার বিছানায় ঘুমোতো, রান্নাঘরে ঢুকতো না পারতপক্ষে, খাবার টেবিল ছিলো ওর অন্যতম পছন্দের জায়গা
বাজার থেকে আনা ভালো মাংসটুকু ও-ই নিতো, জড়তাহীন ভঙ্গি একেবারে, যেন আমি নই, ও-ই হচ্ছে পরিবারের সর্বেসর্বা, কর্তাপ্রধান কিংবা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারীর মতো, ভাজা ইলিশের টুকরো খুব কম দিনই কপালে জুটেছে আমার, তবে এসব ভারি গৌণ মনে হতো যখন ও গল্প বলা শুরু করতো
গল্পের বিষয়বৈচিত্র্যে ডুবে যেতাম আমি, মহাকাশ থেকে অতল সাগরের অনাবিষ্কৃত জগত্, আমি একটা ঘোরে আটকে যেতাম, গল্প বলার সময় ঝকঝকে মার্বেলের মতো চোখ দুটো একদম স্থির থাকতো ওর, শুধু মুখটা নড়তো, মুখের ভেতর হালকা গোলাপি রঙের ছোট জিহবার জাদুকরী আলোড়ন সৃষ্টি করতো মন্ত্রমুগ্ধতা
ওর গোঁফের আড়ালে মাঝে মাঝে উঁকি দিতো রহস্যময় ক্ষীণ হাসি, বলতে দ্বিধা নেই, আমি কালো বিড়ালের গল্পে ভেসে বেড়াতাম, আমার অবসরের ডুবসাঁতারে কালো বিড়ালের গল্পই থাকতো কেবল, আমি ডায়েরিতে লিখে রাখতাম ওর গল্পগুলো, দু'একটা পাঠাতাম পত্রিকায়, কোনোটাই ফেরত আসতো না, ছাপা হতো প্রতিটিই, আপনারা সেগুলো পড়তেন সাহিত্যপাতায়, জানতেন না 'ক্যাপ্টেন নিমো' ছদ্মনামের আড়ালে আমার কালো বিড়ালের গল্প সেগুলো
গল্পকারের পরিচয় নিয়ে মাথাব্যথা ছিলো না সম্পাদকের, পত্রিকার পাতা ভরলেই নির্ভারচিত্তে বাড়ি ফিরতেন তিনি, হেঁড়ে গলায় গান গাইতে গাইতে
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১২:৪৫