গালকাটা চান্দু। পিতৃপ্রদত্ত একখানা নাম ছিলো একসময়। উহা এখন কালের স্রোতে বিলীন হইয়া গালকাটা চান্দু নাম ধারণ করিয়াছে। গালখানা কিভাবে কাটিলো তাহা চান্দুর মনে নাই। এতো জায়গায় হাত চালাইবার ফল বোধহয়। কোনো একখানে ছুরি বা বটির ঘায়ে এ অবস্থা হইতে পারে বলিয়া চান্দুর বিশ্বাস।
চান্দুর কয়েকদিন ধরিয়াই ঘুম নাই। শাস্ত্রের মোটা মোটা কথা শুনিয়া উহার মনে মৃত্যুর পরের জীবন নিয়া মাথাব্যথা শুরু হইয়াছে। ভালো কাজ এবং প্রায়শ্চিত্ত করিবার মতো অবস্থা চান্দুর নাই। রবীদার মুরগিখানা চুরি করিয়া কতকাল আগে ভোজন করিয়াছে। এখন কি ভাবে প্রায়শ্চিত্ত করিবে শুনি? পেট হইতে মুরগী বাহির করিবে? ছিঃ ছিঃ সে কেমন কথা !
চান্দু ছোটকাল হইতেই শর্টকাটে বিশ্বাস করিয়াছে। একখানা ছুরি ধরিয়া যদি সোনাদানা পাওয়া যায় তবে বহি পড়িয়া কি লাভ! বাপে ইশকুলে ভর্তি করাইলে সে ইশকুলে না গিয়া লম্বুদার সাথে মিশিত। এই লম্বুদার কল্যাণেই তাহার চুরিবিদ্যায় হাতেখড়ি। অতঃপর বাড়ি হতে পলায়ন এবং যাবতীয় কুকাজে হাত পাকানো।
গাছ যেমন বুড়ো হইয়া যায় তেমনি চান্দুও বর্তমানে বুড়ো হইয়াছে। আর তখনই কিনা শাস্ত্রের ভূত নামিয়া আসিয়া উহার ঘাড়ে চড়িল। এ যেন তেন ভূত নয় যে কবিরাজের চুরি করা মন্ত্র পাঠে চলিয়া যাইবে। ইহা হইলো একেবারে নামজাদা ভূত। ফলে চান্দুকে শর্টকাট খুঁজিতে নামিতে হইলো।
বহু স্থানের চুরি করা বহি পড়িয়া চান্দু জানিতে পারিলো, আকাশলোকে একখানা খাতা রহিয়াছে। উহাতে সকল পাপাচারের ডিটেইলস লেখা থাকে। উহা হাতাইতে পারিলেই শ্রাস্ত্র মতে চান্দুর স্বর্গারোহণ সুনিশ্চিত হইয়া যাইবে। তাই সে ফন্দি আটিতে লাগিলো। বুড়ো বয়সে বুদ্ধিটাও ঠিক স্লো কাজ করে কিনা, তাই একটু বেশিই ভাবিতে হইবে !
চান্দু বহু ভাবিয়া বিশিষ্ট এক সাধুর কাছে গমন করিলো। সাধু চান্দুর সকল কথা শুনিয়া, ১৭টি টাকা লইয়া চান্দুকে আকাশলোকে পাঠাইয়া দিলেন। সংগে দিলেন কয়েক খানা স্বর্ণের কয়েন। ইহা থাকিলে কেহ বুঝিতে পারিবে না, চান্দু মানুষ্য নাকি ভূতুষ্য।
আকাশলোকে আসিয়াই, চান্দু সেখানকার দারোয়ানকে হাত করিল। একখানা কয়েন দিতেই চান্দুকে প্রশাসনিক ভবনটা দেখাইয়া দিলো। সেখানেই রহিয়াছে সেই কর্মের খাতা। ভবনের সদর দরজায় রহিয়াছে আরেক দারোয়ান। চান্দু তাহারেও একখানা কয়েন দিলো। কয়েন দিতেই লোভী দারোয়ান দরজা খুলিয়া দিলো।
ভিতরে প্রবিষ্ট হয়ে চান্দু দেখিলো, একজন বুড়ো একখানা খাতায় কিছু লিখিতেছেন। দেখিতে ভালো ভূতুষ্য বলিয়াই মনে হয় !
চান্দু তাহারে কহিল, "মশাই আমার নাম চান্দু। বহুদূর থেকে আসিয়াছি। ইহাই কি সেই খাতা? "
বুড়ো কহিল, "ইহাই সেই খাতা। যাহাতে সকলের পাপের কথা লিখা হয়। তা তোমার আসিবার কারন? "
চান্দু কহিল, "আসলে আমি খাতাটিকে একবার দেখিতে আসিয়াছি। মরিবার পরে তো নরকেই যাইবো তাই ইহার সাক্ষাৎ লাভ করিতে চাহিয়াছি। আমাকে ইহা একটু ধরিতে দিবেন?"
বুড়ো তাহাকে খাতাখানা দিতেই উহা চান্দুর আনা অপর খাতা দ্বারা রিপ্লেস হইয়া গেল। বুড়ো কিছু টেরই পাইলো না। বয়েস হইলেও চান্দুর হাত সেই পূর্বের মতোই রহিয়াছে। চান্দু কিছুকাল খাতাখানা দেখিবার ভান করিয়া বুড়োকে ফেরত দিলো।
"একেবারে পৃথিবী ধ্বংসের আগে ঐ খাতাখানা খোলা হইবে না ", চান্দু ভাবিলো। ইতোমধ্যে সে ভবন হইতে বাহির হইয়া গেছে। তারপর যখন পৃথিবীতে যাওয়ার ব্যবস্থা করিবে তখনই সে এক ধোঁয়া দেখিতে পাইলো এবং মুহূর্তের মধ্যে উহা কাটিয়াও গেল। "কি হলো ব্যাপারটা! ধোঁয়ার হেতু বা কি হে? ", ভাবিতে ভাবিতে আকাশলোকের দুয়ারে চলিয়া আসিলো।
তখনই দারোয়ান তাহাকে ধরিলো এবং নরকে পাঠাইবার আয়োজন করিতে লাগিল। " ব্যাপারটা কি হে ? তুমি আমার কাছ হইতে কয়েনও লইলা আবার আমাকে ধরিয়াছ কেন? ", চান্দু দারোয়ানকে শুধাইলো। তবে দারোয়ান নিরুত্তর রহিল।
তখনই সে গোলখানা কি বুঝিতে পারিল। তাহার কাছে কয়েনও নাই সাথে খাতাখানাও উধাও। তবে কি আকাশলোকেও চুরি হয় !
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৯ রাত ১০:১৬