মাত্র ৫০ বছর আগে, গ্রাম বাংলায় কলেরা বসন্তের মহামারী দেখা দিলে, গ্রামে মিলাদ হতো, রাতে জিকির হতো; সহজ জ্ঞানের সহজ সমাধান: আল্লাহ রোগ দিয়েছেন, আল্লাহের কাছে প্রার্থনা করলে, আল্লাহ নিরাময় দেবেন। যেহেতু আল্লাহ কখনো রোগ দিতেন না, রোগ শোক দেয়া আল্লাহের কাজ হওয়ার কোন কারণ থাকতে পারে না; আল্লাহ সেসব মিলাদ জিকির নিয়ে মাথা ঘামাননি; গ্রামের পর গ্রাম মানুষ মরে সাফ, বাচ্চা কাচ্চারা এতিম।
আরো ১০০ বছর আগে ইউরোপ সেলাইন আবিস্কার করেছিলো; যা মানুষের শরীরকে ডিহাইড্রশন থেকে রক্ষা করতো; ডাইরিয়া, কলেরা মানুষের শরীরে ভয়ংকর ডিহাইড্রেশন অবস্হার সৃষ্টি করে, যা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়; এখন বাংলার মানুষ সেটার আরো সহজ ফর্মুলা বের করেছে, ফার্মাসিউটিক্যালে তৈরি করার দরকার নেই, ঘরেই তৈরি করা যায়; কলেরা ডাইরিয়ার প্রাথমিক চিকিৎসা ঘর থেকে শুরু হয়; বসন্তের টিকা ও ঔষধ ২টাই তৈরি করেছে মানুষ; এখন মানুষ অকারণে আল্লাহকে দোষারোপ করছে না।
স্যালাইনের ফরমুলা খুবই সহজ, কিন্তু মানুষ হাজার বছর ধরে হিউম্যান ফিজিওলোজীকে সহজে বুঝতে না পারায়, স্যালাইনের মত সহজ ফর্মুলা বের করতে পারেননি দীর্ঘ সময়; মানুষের ফিজিওলোজী অবশ্যই মানুষের জন্য কঠিন বিষয় ছিলো, আজো কঠিন বিষয়! ৩০০০ হাজার বছর মানুষ কিতাবী ধর্মানুসারে সহজ জ্ঞানে আল্লাহকে রোগ শোকের সৃষ্টিকারী হিসেবে অপদোষ দিয়ে এসেছে; কারণ, রোগ সম্পর্কে ধর্ম মানুষকে সহজ জ্ঞান দিয়েছে: সহজ ব্যাখ্যা, সহজ সমাধান, যার ফলাফল ভালো ছিলো না।
ধর্ম শিখা সোজা, ধর্ম জানতে ও পালন করতে অক্ষরজ্ঞানেরও দরকার নেই; শুনে শুনে শেখা যায়; সাড়ে ৩ হাজার বছর আগেও শুনে শুনে শিখেছেন, আজও শুনে শুনে শিখছেন; মানুষের লব্ধজ্ঞানসমুহ শুনে শুনে একটা নিদ্দিষ্ট লেভেল অবধি শেখা সম্ভব; যা শুনে শুনে শেখা যায়, উহা অবশ্যই সহজ বিষয়! কিন্তু লব্ধজ্ঞানকে মানুষ এত উঁচু লেভেলে নিয়ে গেছেন যে, উপরের লেভেলে যেতে হলে, একজন মানুষকে লেখাপড়া জানতে হবে, ও সময়ের সাধারণ জ্ঞানেও পারদর্শী হতে হবে; সাধরাণ জ্ঞানের ভিত্তি হচ্ছে: ভাষা, অংক, সাধরণ বিজ্ঞান, লজিক, ইতিহাস, সমাজ বিজ্ঞান, অর্থনীতি, ফাইন্যান্স, টেকনোলোজী, ফিলোসফি, এনাটমি, ফিজিওলোজী; এই বিষ্যগুলো তেমন সোজা বিষয় নয়।
আমাদের দেশের মানুষ সহজ জ্ঞান আহরণের চেষ্টা করছে, তারা ধর্মীয় জ্ঞান নিয়ে বেশী সময় ব্যয় করছেন, যা আসলে এত সময়ের ব্যাপার নয়। লব্ধজ্ঞানের মাঝে কিছু সহজ ফলিতজ্ঞান আছে, সেগুলো হচ্ছে কমার্সের মত বিষয়, এগুলো মানুষের দক্ষতা বাড়ায় একটা নিদ্দিষ্ট লেভেল অবধি, তারপর একই লেভেলে বৃত্তের মতো ঘুরতে থাকে। লব্ধজ্ঞানের সীমানা নেই, মানব সমাজ নতুন নতুন ভাবনা দিয়ে এই শাখাকে প্রতিদিনই প্রসারিত করে চলেছেন; নতুন করে কিছু ভাবা ও লজিক্যালী ভাবা কঠিন বিষয়। আমাদের দেশে ক্রমেই সায়েন্স গ্রুপের ছাত্র কমছে স্কুলে ও কলেজে, এটাও প্রমাণ করছে যে, লব্ধজ্ঞান কঠিন।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৩৭