মনে হয়, শেখ সাহেবের কারণে: শেখ সাহেবের মৃত্যুর পর, উনার দলের আবদুল মালেক উকিল নিজের নেতা শেখ সাহেবের মৃত্যুকে "ফেরাউনের পতন" হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলো; শেখ হাসিনার বর্তমান ক্ষমতায়নকেও অনেকে "ফেরাউনের" সাথে তুলনা করছেন, এবং বলছেন যে, যেহেতু ফেরাউনেরও পতন হয়েছিল, শেখ হাসিনারও পতন হবে। এদের বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে, প্রাচীন মিশরের এক অত্যাচারী রাজার নাম ছিলো ফেরাউন, এবং ফেরাউন একজন ছিলেন। আসলে, "ফেরাউন" একটা উপাধি, অনেকটা "শাসনকর্তা" ধরণের; এবং ফেরাউনের সংখ্যা অনেক, ৩ হাজার বছরের শাসন আমলে কয়েক'শ রাজার উপাধি ছিল ফেরাউন।
মিশরের রাজারা ফেরাউন উপাধি হিসেবে ব্যবহার করতেন, সবার নিজস্ব নামও ছিলো; সম্ভবত, ১ম ফেরাউন রাজত্ব করেন ঈশা (আ: )'এর জন্মের ৩১৫০ বছর আগে; বিশ্বের সর্বাধিক পরিচিত সমর-নায়ক, গ্রীকের আলেকজান্ডারও এক সময় মিশরের ফেরাউন হয়েছিলেন; সেটা ঘটেছিলো ঈশা (আ: )'এর জন্মের ৩৩১ বছর আগে, তিনি মিশর দখল করে, নিজেই ফেরাউন উপাধি নেন। তবে, শেখ সাহেব ও শেখ হাসিনা সেই সুযোগ পাননি, উনারা মিশর দখল করেননি; হোসনী মোবারককে ফেরাউন বলা যেতে পারে। আসলে, বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী, ক্ষমতাশালী মহিলা ও রাণী, ক্লিওপেট্রাও ফেরাউন ছিলেন।
ফেরাউন, কিংবা ফেরাউনরা বাংলা আক্রমণ করেনি কোনদিন; বাংলা আক্রমণ করেছিলো বখতিয়ার খিলজী ও অন্য অনেকেই, বাংগালীরা এদের ভালোবাসেন; আফগান মাফগানরা বাংলা দখল করে মানুষের ধনসম্পত্তি লুট করেছে, তারা ভালো ছিলো; সুলতান মাহমুদ ১৭বার সোমনাথ মন্দির লুট করেছে, উনি ভালো; খারাপ হচ্ছে, ফেরাউনরা; কারণ, তারা বাংলা আক্রমণ করেনি কোনদিন!
আজ থেকে ৫ হাজার বছর আগে নীলনদের তীরে যেই সভ্যতা গড়ে উঠেছিল, সেটাই বিশ্বের অন্যতম সভ্যতা; তারা অত্যাচারী ছিলো না তেমন; তবে, পিরামিড ও দালান-কোঠা গড়তে গিয়ে তারা সাধরণ মানুষের রক্তকে পানি করেছে অকারণে, এটা নিশ্চিত; যুদ্ধে পরাজিত অন্চলের মানুষকে তারা দাসে পরিণত করেছিলো; তবে, তখনকার দিনের সভ্যতা হিসেবে মানুষ সেই সভ্যতায় মোটামুটি ভালো ছিলো, বলা যায়।
ফেরাাউনরা বাংগালীদের শত্রু হলো কিভাবে? ব্যাপারটা সোজা, তারা মুসা (আ: )'কে নবী বলে স্বীকার করেনি; ফেরাউনদের বেশীর ভাগই নিজেদের সুর্যের সন্তান মনে করতো; সুর্য ছিলো তাদের খোদা, খোদার ছেলে খোদা; অবশ্য ধর্ম নিয়ে তাদের ভেতরে যুদ্ধ টুদ্ধও হয়েছে কয়েকবার; কোন কোন ফেরাউন সুর্যের বাহিরে অন্য খোদাকেও মানতো! তবে, তাদেরই একজন মুসার (আ: )'এর মতো মানুষকে দাম দিতে চাহেনি।
ফেরাউনরা মুসা (আ: )'কে নবী বলে স্বীকার না করাতে তারা বাংগালীদের শত্রু হয়ে গেছে; এখন নবী মুসা (আ: )'এর লোকেরা প্যালেষ্টাইন দখল করে নিয়েছে, এই কারণে মুসা (আ: )'এর উন্মতেরাও বাংলার শত্রুতে পরিণত হয়েছে; যাক, নবী মুসা (আ: ) এখনও বাংগালীদের কাছে নবী হিসেবে আছেন, এটা কমপক্ষে ভালো।
ফেরাউনরা লেখাপড়া জানতেন, সবদিক বিবেচনা করলে তারা ভালো রাজা ছিলেন; তাদের বর্ণমালা বাংলার মত ছিলো না, তখনো ২১ শে ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি; তবে, তাদের ইতিহাস, তাদের শিলালিপি থেকে বুঝা যায় যে, তারা ততকালীন সময়ে শিক্ষার বিস্তার করেছিলেন; মনে হয়, সবাই লেখাপড়া করতেন। ২১ শে ফেব্রুয়ারীর দেশের শতকরা ৪০ ভাগ লোকেরা এখনো নাম লিখতে পারেন না, কিন্তু ফেরাউনদের বিপক্ষে দোয়া খায়ের করেন সব সময়।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:১৭