বাংলাদেশের ১ম প্রজন্ম নিজদের বাংগালী হিসেবে গর্ববোধ করতেন; এবং মুসলমান হিসবে বিশ্বের অন্য মুসলমানদের চেয়ে সরলপ্রাণ ছিলেন; বর্তামান প্রজন্মের সদস্যদের কিছু অংশ, কিছুটা নিরীহ পাকিস্তানীদের মতো; এখন যারা কলেজে আছে, তাদের একাংশ মোটামুটি পাকিস্তানীদের লেভেলে চলে যাবে; এরা বাংগালী হিসেবে পরিচয় দেয়ার থেকে বৃহত্তর মুসলিম জাতি হিসেবে পরিচয় দেবে; এটা একটা ট্রেন্ড।
প্রবাসে পাকিস্তান, আরব, ইরান, উজবেক ও ইন্দোচীনের মুসলমানেরা বাংগালীদের মত সরল ও নিরীহ নয়; ওরা পশ্চিমের যেই দেশে বসবাস করে, সেই দেশের সংস্কৃতিকে কথায় কথায় আক্রমণ করে; মসজিদে হোষ্ট দেশের সংস্কৃতির বিপক্ষে খোলাখুলি আলোচনা হয়, দোয়ায় হোস্টদের সংস্কৃতিকে 'অপসংস্কৃতি" হিসেবে উল্লেখ করে, তা থেকে নিজদের মুক্ত থাকার জন্য খোদার সাহায্য চাওয়া হয়; এই ধরণের বক্তব্য ও দোয়া মুসলমানিত্ব বজায় রাখার জন্য হয়তো দরকার আছে; কিন্তু তাদের "হোষ্ট" দেশের লোকদের জন্য ইহা কি ধরণের আঘাত? এবং এই ধরণের মানসিকতার কথা হোষ্ট দেশের লোকেরা জানে কিনা? হ্যাঁ, জানে।
আজকে ব্লগে যারা, বাংগালী মুসলিম মেয়েদের বোরখা ইত্যাদি পরার কথা বলছে, তাদের একাংশ পশ্চিমে বাস করছে; প্রবাসে, তারা নিজ দেশের মেয়েদের বোরখা ইত্যাদি পরার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে! তাদের সামনে যখন ৫ বোরখাধারী আসছে, একই সময়ে ৯৯৫ জন পশ্চিমা পোশাকপরা পশ্চিমের মেয়ে আসছে। যারা বাংলাদেশে বলছে যে, মেয়েরা পর্দা না করায়, পুরুষেরা আকৃষ্ট হচ্ছে, তারা কি পশ্চিমের মেয়েদের সেকথা বলতে পারবে? পারবে না, পারছে না; কিন্তু কোথায় তারা কিভাবে পশ্চিমের মেয়েদের সমালোচনা করছে? মসজিদে করছে! এগুলো সেখানকার মানুষের কানে কি যাচ্ছে? অবশ্যই যাচ্ছে।
একজন আমেরিকান মেয়ে যখন যেই দেশে যায়, দরকার হলে, সব সময় ঐ দেশের সংস্কৃতি অনুসারে কাপড় পরে; আজকে বাংলাদেশে নিয়ম করুক বিদেশী মেয়েরা ঢাকায় শাড়ী পরতে হবে, তারা সাথে সাথে পরবে। কিন্তু মুসলমান পরিবারের মেয়েরা "হোষ্ট" দেশের সংস্কৃতি অনুসারে কাপড় পরতে পারবে? না, বেশীর ভাগই পরিবার, কিংবা মুসলিম সংগঠন থেকে চাপের সন্মুখীন হয় তারা; একথা "হোষ্ট" দেশের লোকেরা জানে। আমেরিকা ও ইউরোপের শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষই প্রবাসীদের কাপড় ইত্যাদির ব্যাপারে উদার; কিন্তু শতকরা ৫ ভাগ উদার নয়।
যেই ৫ ভাগ উদার নয়, তারা আজকে সক্রিয় হচ্ছে; এরা মুসলিম ইমিগ্রেশনের বিরোধিতা শুরু করেছে; শতকরা ৫ ভাগ, ৫ বছরের ২৫/৩০ হয়ে যেতে পারে। এসব দেশে অবস্হানরত মুসলমানদের বিপক্ষে ব্যবস্হা নেয়ার পক্ষে সহসা কেহ মত দেবে না; তবে, নতুন করে মুসলমানেরা যাতে না আসতে সেই ব্যাপারে পদক্ষেপ নে্যার পক্ষে চলে যাবে বড় সংখ্যক শীঘ্রই।
প্রবাসে পাকিস্তান, আরব ও ইরান, উজবেক ও ইন্দোচীনের মুসলমানেরা নিজদের প্রবাসী হিসেবে ভাবে না; তারা বরং "হোষ্ট" দেশের লোকদের আল্লাহের অভিশাপ-প্রাপ্ত ( না'লত-প্রাপ্ত) বলে মনে করে; এরা হোষ্ট দেশের সংস্কৃতিকে বাতিল হিসেবে গণ্য করে; ইহা বড় ধরণের সমস্যার সৃষ্টি করবে সহসা।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৯ সকাল ৯:০৬