somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শতাব্দী রায়কে দেয়া আমার প্রতিশ্রুতিটা

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শতাব্দী রায় মাত্র ১০ মিনিটের পরিচিত একটি তরুণী; শতাব্দী রায়কে দেয়া আমার প্রতিশ্রুতিটা আমি রাখতে পারিনি, কথাটা মনে এলে আমার কষ্ট লাগে। আমাদের গ্রাম থেকে ৪ মাইল উত্তর পশ্চিমে একটি গ্রামে, এক দুপুরে, ২০ বছরের একটি মেয়ের সাথে আমার ১০ মিনিটের আলাপ হয়েছিলো, নাম শতাব্দী রায়; শতাব্দী এসএসসি'তে ফেল করেছিলো; আমি কথায় কথায় তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে, আমি তাকে পড়িয়ে এসএসসি পাস করতে সাহায্য করবো। শতাব্দী রায়কে দেয়া আমার প্রতিশ্রুতিতা আমি রাখতে পারিনি, শতাব্দীর কথাটা অনেক বছর আমার মনে পড়েনি, সম্প্রতি মনে পড়েছে, আমার খুবই খারাপ লাগছে; ভাবছি, সে কেমন আছে।

২০১২ সালের কথা, আমি তখনো প্রবাসে চাকুরী করতাম; পরেদিনই আমি বিদেশে চলে যাবো; মেঝো ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ীতে দুপুরে খাওয়ার নিমন্ত্রণ ছিল, এলাকাটা আমার খুব একটা জানাশোনা ছিলো না; সব সময় মুল রাস্তা হয়ে গিয়েছি, চলে এসেছি। সেদিন দুপুরে খাবারের পর, আমি পায়ে হেঁটে বাড়ী রওয়ানা দিলাম, মুল রাস্তা ছেড়ে, গ্রামের মাঝখান দিয়ে একটা সরু রাস্তা হয়ে, পূর্বদিকে যাচ্ছিলাম; একটা ছোট পুকুরের পূর্ব-পাড় হয়ে রাস্তা গিয়েছে; পুকুর পাড়ে, রাস্তার পাশে একটা ছোট কুল গাছ, অনেক কুল ধরে আছে, কুল পাকার শুরু করেছে। আমি হাত বাড়িয়ে ৩/৪টা কুল নিলাম। পুকুরের পশ্চিম পাড়ের ঘাঁটে ঘোমটা পরা একজন নারী হাঁড়ি পাতিল পরিস্কার করছিলেন, লম্বা ঘোমটার জন্য মুখ দেখা যাচ্ছিলো না, এবং আমি অত দুরে পরিস্কার দেখিও না।

নারী দাঁড়ি্যে আমাকে বললেন,
-এই যে ভদ্ররলোক, পরের গাছের কুল নিতে অনুমতি নিতে হয়, সেটা কি জানা নেই?
-আমি তো পরের গাছ ভাবিনি, নিজের মানুষদের গাছ ভেবেছি!
-তাই নাকি? নিজের মানুষকে চিনতে পারছি না কেন?
-দুরে থাকলে কি করে চিনবেন, কাছে আসেন।
-আসছি।

তিনি হাঁড়িপাতিল রেখে, হাত ধুয়ে কাছে এলেন; ২০/২১ বছরের হালকা পাতলা গঠনের সুশ্রী শ্যামলা তরুণী; হাসি হাসি মুখ। আমি সালাম দিলাম, উত্তরে তিনি সালাম জানানোর পর, নমস্কারও করলেন; হিন্দু তরুণী; নাম, শতাব্দী রায়; অসম্ভব সুন্দর নাম। আমার নাম ঠিকানা জামানাম।

-আপনাকে এই এলাকায় কোনদিন দেখিনি, শতাব্দী বললেন।
-আমি কাজ উপলক্ষে বিদেশে আছি বেশ কিছু সময়। আপনি কি করেন?
-এই যে দেখছেন, সংসার করছি!
-সংসারে কে কে আছেন?
-মা আর আমি। এক ভাই আছেন, বড় ভাই, ঢাকায় থাকেন, কিসব রাজনীতি করেন! বাড়ী আসেন না।
-ঢাকা থেকেই বাড়ী আসেন না?
-চাকুরী বাকুরী নেই, মনে হয়, সেজন্য আসেন না।
-আপনি পড়ালেখা করেছেন, বা করছেন।
-আমি এসএসসি ফেল করেছি, ৪ বছর হয়ে গেছে!
-কয়বার পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
-একবার মাত্র।
-কিসে কিসে ফেল করেছেন?
-মনে হয়, সবকিছুতে; আমি ইংরেজী, অংক, বিজ্ঞান পারি না!
-তাই? সমস্যা নেই, আমি আপনাকে এগুলো সবগুলো পড়াবো; পাশ করা কোন সমস্যাই না, আপনি শুধু পাশ করা নয়, তার থেকে অনেক ভালো করবেন!
-আপনি আমাকে পড়াবেন?
-অবশ্যই পড়াবো।

খুশীতে শতাব্দীর চোখগুলো চিকিচিক করে উঠলো; ওর জন্য মনটা বেদনায় ভরে গেলো। সন্ধ্যার বাসে আমার ঢাকায় যাবার কথা, পরেরদিন আমার ফ্লাইট; আমি কথা বাড়ালাম না, বিদায় নিয়ে চলে এলাম। আমি প্রায় শ'খানেক গজ সামনে আসার পর, পেছনে ফিরে দেখলাম, শতাব্দী সেখানে দাঁড়ায়ে আমার চলে যাওয়া দেখছে।



সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:১৬
৪৬টি মন্তব্য ৪৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×