somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছিঁচকাঁদুনেদের নালিশের শেষ নেই

২৯ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৩:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



**** কমেন্ট ব্যানে আছি, আপনাদের পোষ্টে মতামত জানাতে পারছি না।

কৈশোর থেকে ছিঁচকাঁদুনেদের নিয়ে সমস্যায় আছি, এদের নালিশের শেষ নেই; একবার, একদিনে ২ ছিঁচকাঁদুনের পাল্লায় পড়তে হয়েছিলো, এটা সেই কাহিনী।

তৃতীয় শ্রেণী শেষ করেছি, ভাবী উনার বাপের বাড়ীতে যাচ্ছেন, সাথে গেছি আমি; এই বাড়ীতে বেড়াতে এলে আমি ২/১ রাত থাকি; উনাদের বাড়ীর পেছনে সমুদ্রের বেড়িবাঁধ; বাঁধের সাথে লাগানো মাছানের উপর উনাদের ভেঁড়ার খামার; জোয়ার এলে খামারের নীচে কোমর সমান পানি আসে, মাছানের উপর বসে দেখতে খুবই ভালো লাগে। সেদিন দুপুরের খাবার খেয়ে, উনাদের কাছারী ঘরের সামনে দল বেঁধে ফুটবল খেলছি।

খেলার আনন্দটা মাটি করে দিচ্ছিল আমার ছোট খালুর বড় ছেলেটা, বকুল; উহা বয়সে আমার থেকে বছর খানেকের বড়, থাকে চিটাগং শহরে, বাবা রেলওয়েতে চাকুরী করেন; শহরে থাকার ফলে, চেহারাটা একটু ফ্যাকাসে, মেজাজটা খিটখিটে; আমার বিপরিতে খেলছে ; আমাদের পক্ষ গোল করার সাথে সাথেই ফিফা মিফার কোন অজানা রুল খাটায়ে গোলটিকে 'বেঠিক' ঘোষনা দেয়। ২য় গোল বাদ দেয়ায় আমি প্রতিবাদ করলাম, প্রতিবাদের উত্তরে সোজাসুজি নাক বরাবর ঘুষি মেরে দিলো। আমি বললাম,
-শোন, এভাবে ঘুষি টুষি মারলে, ঘাঁড়টা মটকায়ে দেবো!
-কি বললে, তুমি আমার ঘাঁড় মটকাবে?

সে বলটাকে হাতে নিয়ে কান্নার সুরে নিজের মাকে ডাকতে ডাকতে বাড়ীর ভেতরে চলে গেলো; একটু পরে খালাম্মা ( উহার মা), উনার বোনটোন মিলে কয়েকজন এসে উপস্হিত; আমার ভাবীও এসেছেন। খালা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-ওমা, এই কি মেহমান! বুকলকে নাকি ঘাঁড় মটকানোর কথা বলেছে মেহমান?
-হ্যাঁ বলেছি।
-বকুল, ঘরে যাও, এসব খেলা আর মারাারির দরকার নেই, এগুলো গ্রামের ছেলে, এরা নিয়ম কানুন বুঝে না; উনি রায় দিলেন।

আমার ভাবীর মুখখানা কালো হয়ে গেলো; আমি পুকুরঘাটে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে শার্টটা পরে, ভাবীকে বললাম,
-আমি বাড়ী যাচ্ছি, আপনি থাকেন, আমি এসে নিয়ে যাবো।
-এভাবে যেতে হয় না; বাড়ীর লোকজন কি বলবে?

ভাবী আমাকে জানতেন। আমি বাসে করে বাড়ী রওয়ান হলাম। উনাদের বাড়ী থেকে ফেরার পথে, আমাদের এলাকা থেকে ৪/৫ মাইল দক্ষিণে বিশাল এক মাঠ দেখা যায়, মাঠের পশ্চিম পারের গ্রামটা দুর থেকে কেমন রহস্যময় লাগতো; আজকে সেই গ্রাম বরাবর বাস থেকে নেমে গেলাম, গ্রামটি দেখে যাবো। গ্রমাের মাঝ দিয়ে হাঁটলাম, আসলে দরিদ্র গ্রাম; গ্রামের পশ্চিম পাশে আরেকটি মাঠ, উহা ধরে উত্তর দিকে ( আমাদের দিকে) যাচ্ছি; অনেক জমিতে টমেটো, কপি, ঢেড়স, ইত্যাদি করেছে; হঠাৎ দেখি একটি ছোট জমিতে পতেংগার তরমুজ করেছে। আমরা কখনো পতেংগার তরমুজ চাষ করিনি, আমরা অনেকটা কালছে ও গোল ধরণের এক জাতের তরমুজের চাষ করি। পতেংগার তরমুজ লম্বা, দেখতে বেশ সুন্দর। আমি জমিনে ঢুকে লতাগুলো ও তরমুজ দেখছি কাছের থেকে; এমন সময়, জমির পুর্বপাশের বাড়ী থেকে লাঠি হাতে চীৎকার দিতে দিতে এক মেয়ে বেরিয়ে এলো; বয়সে আমার থেকে একটু বড়সড় হতে পারে; কাছে এসে আমাকে বলে,
-জমি থেকে বের হও, তরমুজ চুরি করতে এসেছ, বের হও, পিটায়ে লম্বা করে দেবো!
-তরমুজ দেখছি, আমি বললাম।
-জমি থেকে বের হও, চোর!

সে আমার সামনে এসে লাঠি নাড়ছে; আমি একটানে লাঠিটা নিয়ে নিলাম। উহা হঠাৎ হাউমাউ করে, চীৎকার দিয়ে বাড়ীর দিকে ছুটলো; ভাবলাম, কি কান্ড, আজকের দিনটা ভালো নয়। আমি লাঠিটা ফেলে দিয়ে আমার পথে চললাম; ৪০০/৫০০ গজ না যেতেই পেছন থেকে চীৎকার শুনছি-
-এই ছেলে দাঁড়া, এই ছেলে দাঁড়া।
দেখি, খালি গায়ে লুংগি পরা এক লোক দৌড়াতে দৌঁড়াতে আসছে; পেছনে ঐ মেয়েটা, মেয়ের হাতে আবারো লাঠি; উহাদের পেছনে এক মহিলাও আসছেন। আমি দাঁড়ালাম, পরে ওদের দিকে রওয়ানা হলাম; লোকটা কাছে কাছে এসে বললো,
-আমাদের জমিতে কি করছিলা?
-আপনাদের পতেংগার তরমুজ দেখছিলাম!
-চুরি করতে চাইছিলা?
-না, আমরাও তরমুজ চাষ করি।
আমার কাপড়চোপড় দেখে মনে হয়, চোর মনে করেনি; কিন্তু লোকটিকে বেশ রাগান্বিত মনে হলো।
-তোমাকে আর যেন জমিতে না দেখি।

মহিলাটা কাছে এসে, আমাকে দেখে লোকটাকে বাড়ী ফিরতে বলে, নিজে চলে গেলেন বাড়ীর দিকে। আমি আমার পথ ধরলাম, মেয়েটা লোকটার পেছনে হেঁটে যারার সময় পেছনে তাকালো, আমি হাত নেড়ে দিলাম; মেয়ে আমাকে লাঠি দেখালো; এই জল্লাদ মেয়ে যার ভাগে পড়বে, উহার কর্মশেষ!


সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:৫১
২৭টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইরান ইসরাইলের আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ আর আমাদের সুন্নী-শিয়া মুমিন, অ-মুমিন কড়চা।

লিখেছেন আফলাতুন হায়দার চৌধুরী, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩০

(ছবি: © আল জাযীরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক)

শ্রদ্ধেয় ব্লগার সামিউল ইসলাম বাবু'র স্বাগতম ইরান পোষ্টটিতে কয়েকটি কমেন্ট দেখে এই পোষ্ট টি লিখতে বাধ্য হলাম।
আমি গরীব মানুষ, লেখতে পারিনা। তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৯




আমরা পৃথিবীর একমাত্র জাতী যারা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য, নিজস্ব ভাষায় কথা বলার জন্য প্রাণ দিয়েছি। এখানে মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান চাকমা মারমা তথা উপজাতীরা সুখে শান্তিতে বসবাস করে। উপমহাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্যা লাস্ট ডিফেন্ডারস অফ পলিগ্যামি

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০


পুরুষদের ক্ষেত্রে পলিগ্যামি স্বাভাবিক এবং পুরুষরা একাধিক যৌনসঙ্গী ডিজার্ভ করে, এই মতবাদের পক্ষে ইদানিং বেশ শোর উঠেছে। খুবই ভালো একটা প্রস্তাব। পুরুষের না কি ৫০ এও ভরা যৌবন থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×