গরমের ছুটির সময়, আমেরিকান বাচ্চারা ঘরে সামনে লেমোনেইড বিক্রয় করে; তারা নিজেরা বানায়, নিজেরা বিক্রয় করে, মানুষের সাথে কথা বলে। আমি লেমোনেইড কেনার সময় ২ বাচ্ছার সাথে কিছুক্ষণ ক্যাচাল করে দেখলাম।
দুপুরবেলায় বাসায় ফিরছি, অনেক গরম, রাস্তায় গাছপালা তেমন নেই; একটি ইহুদী বাড়ীর সামনে রাস্তার পাশে, ছোট একটা গাছের তলায়, খুবই ছোট একটা টেবিলে ২ জার লেমোনেইড, গ্লাস, নেপকিন সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিক্রয়ের জন্য। বাড়ীটা রাস্তা থেকে বেশ উঁচুতে, আমি দরজার দিকে তাকালাম; ঘরের দরজা খোলা, দরজার পাশে ২ জন ছোট মেয়ে চুপ করে বসেছিল; ১জন ৮/৯ বছরের, অন্য জনের বয়স হয়তো ৭ বছরের মতো হবে; একই চেহারার, নিশ্চিত ২ বোন। আমার চোখে চোখ পড়তেই ছোটটি বললো,
-লেমোনেইড?
-ঠিক আছে। আমি লেমোনেড কেনার আগ্রহ দেখালাম।
২ জন নেমে আসলো; বড় বোনটি গোলাপী রংএর লেমোনেইড গ্লাসে ঢালতে যাচ্ছিল; আমি বললাম,
-দাম কত?
-এক গ্লাস মাত্র ১ ডলার, সে উত্তর করলো!
-আমার মনে হয়, তুমি আমাকে ডিসকাউন্ট দামে, ১ ডলারে দুই গ্লাস দিলে ভালো হবে।
-তাতে আমাদের ক্ষতি হবে, মেয়েটি উত্তর করলো।
-লেমোনেড তৈরি করতে তোমাদের কত খরচ হয়েছে?
-আমি জানি না, আমি কিছু কিনিনি, মা কিনেছেন সবকিছু!
-তা'হলে, তুমি কিভাবে লাভক্ষতির হিসেব করছো?
ইতিমধ্যে ১ জন মহিলা দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়েছেন; দেখলেই বুঝা যায় এদের মা; আাদের আলাপ শুনে হাসছেন। লাভক্ষতির হিসেবের কথা শুনে বড় মেয়েটি কনফিুজড হয়ে গেছে; ছোট মেয়েটি বললো:
-তুমি খেয়ে দেখ, এগুলো খুবই ভালো লেমোনেইড, ফলের থেকে তৈরি। সে অন্য জার থেকে ঢালতে যাচ্ছিল, বড়বোন তাকে সাহেয্য করলো; ব্লুবেরী থেকে থেকে তৈরি, খুবই সুস্বাদু; খাওয়া শেষে আমি তাকে ১ ডলার দিলাম, সে খুশী।
-এবার আমার লেমোনেইড খেয়ে দেখো, বড়বোন বললো।
-তুমি তো আমাকে ডিসকাউন্ট দাওনি।
-ঠিক আছে, তুমি ২ ডলারে ২ গ্লাস কেনো, ৩য় গ্লাস ফ্রি!
-তুমি কি আমাকে উট ভেবেছো যে, আমি আরো ৩ গ্লাস লেমোনড খেতে পারবো? উটও ৪ গ্লাস লেমোনেইড খেতে পারবে না।
-অবশ্যই উট ৪ গ্লাস লেমোনেইড খেতে পারবে, বড়বোন বললো।
-তুমি বেট ধরতে চাও, উট কখনো ৪ গ্লাস লেমোনেইড খেতে পারবে না, আমি জোর দিয়ে বললাম।
-ঠিক আছে, বেট ১ ডলার।
-উটের কাছে কি টাকা আছে যে, উট লেমোনেইড খাবে! ছোট বোনটি মন্তব্য করলো।
-উটকে আমি কিনে দেবো, আমি বললাম।
-তুমি বেটে হেরে গেছ, একটা উট ১ বারেই ১০/১২ গ্যালন পানি খেতে পারে; আমাকে ১ ডলার দাও, বললো বড় মেয়ে।
-তুমি বেটে হেরে গেছ; তুমি বলেছ যে, উট পানি খায়; উট নিশচয় লেমোনেইড খায় না, আমরা পানি নিয়ে বেট ধরিনি, আমি বেটে জিতেছি, তুমি ১ ডলার দাও।
-তুমি কি কখনো উটকে লেমোনেইড দিয়ে দেখেছ, তুমি কিভাবে বলছ, উট লেমনেইড খায় না?
-আমি উট পাবো কো্থায়, উট থাকে মরুভুমিতে; মরুভুিতে লেমোলেইড কোথায় পাবে উট?
-তুমি হেরে গেছ, কারণ, মরুভুমিতে প্রাণিরা সব ধরণের পানীয় পান করার কথা, ওখানে পানীয় সহজে পাওয়া যায় না; সুতরাং সে ৪ গ্লাস লেমোনেইড পেলে অবশ্যই খাবে।
মেয়েগুলোর মা আমাদের এসব আজগুবি কথা শুনে হেসে অস্হির; তিনি বড় মেয়েকে বললেন,
-মাহালা, তুমি জেন্টেলম্যানকে লেমোনেইড ঢেলে দাও, পরে বেটে জিততে পারবে।
আমি বড় মেয়ের দেয়া লেমোনেইড খেলাম; ডলার বের করে দিলাম। মেয়ে আরেক গ্লাস ঢালতে যাচ্ছিল, আমি বললাম
-আমি আর খেতে পারবো না।
-এই গ্লাস ফ্রি।
- ফ্রি হলেও আজ আমি আর খেতে পারবো না; আমি কালকে আসবো, তোমাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
-ঠিক আছে, কালকে এসো; যদি পার একটা উট নিয়ে আসিও; ভালো থেকো।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০২১ সকাল ১১:৫১