somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন যেখানে নীরব

২৮ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি তখন হাইস্কুল শুরু করেছি; বাবার মৃত্যুর পর, চাষবাস আমি দেখছি; এটি তখনকার ছোট একটি ব্যাপার:

আমাদের গরু ছাগল দেখার জন্য যে ছেলেটি ছিলো, সে রাতে খামারে থাকতো না ভয়ে; আমাকেই থাকতে হতো সেখানে। মাঠের একপ্রান্তে অবস্হিত খামারের রাতগুলোকে মায়াময় মনে হতো। একরাতে শিয়ালের ডাকে ঘুম ভাংগলো, মাঝরাত হবে, মনে হচ্ছে; নিঝুম রাতে শিয়ালের চীৎকার অদ্ভুতভাবে ভালো লাগছিলো; মিনিট খানেক পরে শিয়ালগুলো শান্ত হলো, চারিদিকে গভীর রাতের অদ্ভুত প্রশান্তি; জানালায় ফাগুনের হালকা বাতাস; কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ অনেকটুকু উঠেছে, হালকা মিস্টি আলো, আকাশভরা তারকারাজি; পুর্ব পাশের মাঠে চার পাঁচটা শিয়াল দৌঁড়াচ্ছে: শামুক, কাঁকড়া, কিংবা ইঁদুর ধরার চেস্টা করছে। খামারে ঘুম ভাংলে প্রথম কাজ গরুগুলোকে একবার দেখা; গরু ঘরের সামনে যেতে লাল বলদটি উঠে দাঁড়ালো; বুঝলাম, পানি খাবে। বালতি হাতে টর্চ নিয়ে পুকুরের দিকে চললাম, হালকা আলোকেও টর্চ দরকার, রাতের এই হালকা আলোকে সাপের বাচ্চাগুলোকে দেখা যায় না। দুর থেকেই দেখছি, ঘাটে একজন লোক বসে আছেন; এত রাতে এদিকে কেহ আসার কথা নয়; আমি কাছে যেতে লোকটি উঠে দাঁড়ালেন, বয়স্ক।

-আপনাকে তো চিনলাম না, আমি বললাম।
-বাবা, আমি সোনাগাজীর লোক, কাজের খোঁজে এসেছিলাম, আজ ২ দিন কিছু পাইনি; আজ বিকেলে সাধুর হাঁটে গিয়েছিলাম, কেহ নিলো না; এই খামারে আমি কাজ করেছিলাম কয়েক বছর আগে, সেই আশায় এসেছি; রাতের বেলায়, মালিকের বাড়ীটা মাঠের কোন পাশে ছিলো ঠিক বুঝতে পারছি না।
-আসেন, ঘরে আসেন। রাতে খেয়েছেন?
-না বাবা, কিছু খাইনি।

উনাকে বসায়ে আমি বাড়ী গেলাম, ১০ মিনিটের পথ, সবাই ঘুমাচ্ছে; ভাতে পানি দিয়ে দিয়েছে; যাক, এটাই দিতে হবে। লোকটার বয়স পন্চাশের কাছাকাছি হবে, বয়সের তুলনায় দুর্বল। সকালে উনি আমার আগেই উঠে গেছেন।

-চলেন, বাড়ী থেকে খেয়ে আসি। বাড়ীর কাছে যেতেই তিনি বাড়ী চিনলেন।
-আপনি কি মালিকের ছেলে? উনার চেহারার সথে মিল আছে!
-হ্যাঁ উনার ছেলে; উনি নেই, উনার মৃত্যু হয়েছে।

কাছারী ঘরে বসে দুইজনে খেলাম।
-আপনার ছেলেমেয়ে কয়জন? আমি জানতে চাইলাম।
-দুই মেয়ে, এক ছেলে!
-ওদের ব্যবস্হা আছে বাড়ীতে?
-না, বাবা; আমি আসার সময় ঘরে কিছু ছিলো না; আমিও খালি হাতে বের হয়েছি।
-মিয়াজান ঘাট হয়ে মুহুরী নদী পার হলে, কত মাইলের মধ্যে আপনার বাড়ী?
-কাছেই বাবা, ৩/৪ মাইল হবে।
-আপনি আমাদের কাজ করবেন, আমি আপনাকে ২ সপ্তাহের বেতন দেবো এখন, আপনি বাড়ী গিয়ে টাকাগুলো দিয়ে চলে আসেন।

লোকটার চোখে পানি; উনি ২ দিন পর ফেরত আসলেন। আমাদের কাজ করেছিলেন ৬ বছর। তিনি আমাকে মাঝে মাঝে প্রশ্ন করতেন,
-আপনি কিভাবে আমাকে বিশ্বাস করে, ২ সপ্তাহের অগ্রিম বেতন দিয়েছিলেন?
আমি সব সময় বলতাম, "আমার মনে হয়েছিলো, ইহার দরকার ছিলো"।



সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৮:১৯
১৭টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×