১ম পর্বের পর
সেই নাম্বার। সোয়েবের ক্ষোভ আবার ফিরে এলো। তার আজকের সারাদিন নষ্ট করেছে এই মেয়েটা, তাও আবার অকারণে। এখন কি আবার খোঁচা দেয়ার জন্যে ফোন করেছে ? তাছাড়া আর কি ই বা হতে পারে?
-“হ্যালো” ফোন রিসিভ করে বললো সোয়েব।
-“হ্যালো” উত্তর আসলো অপরপ্রান্ত থেকে। “সরি ভাইয়া, আমি আসলে বুঝতে পারিনি।”
- কি বুঝতে পারেননি?
-আমি ভেবেছিলাম মিসকলটা ইচ্ছা করে দেয়া হয়েছে।
-না, ঠিক আছে। প্রথম ভুলতো আমারই হয়েছে। আপনি তো আর আমার ফোনের ত্রুটি জানেন না।
- ভাইয়া একটা অনুরোধ করি?
-করেন।
-আমার নাম্বারটা মূছে দিয়েন। তাহলে আর এরকম ফোন যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
একথা শুনে সোয়েব আর না হেসে পারলো না। আসলে সে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। একেবারে খাঁটি বাঙ্গালী হাসি, “হো হো হো হো।” তার এই হঠাৎ হাসির দমকে পাশের রূমে থাকা সোয়েবের ভাই সোহেল চেচিয়ে উঠলো, “ভাইয়া, মাঝরাতে একা একা এভাবে হাসিস না। মানুষ বিনা পয়সায় পাবনা নিয়ে যাবে।”
এদিকে মেয়েটা জিজ্ঞাসা করলো, “হাসছেন কেনো?”
সোহেলের স্ক্রু পরে টাইট দেয়া যাবে। তাই সোয়েব নিজের মনযোগ ফোনের দিকে ফিরিয়ে আনলো। “আপনার কথা শুনে হাসছি। আপনি এখনো ভাবছেন আমি ইচ্ছা করে মিসকল দিয়েছি” উত্তরে বললো সে।
“আপনার তাই ধারণা?” এবার বোধহয় মেয়েটা রেগে গেছে।
-সরি আপু।সরি। আমি বুঝিনি আপনি রেগে যাবেন। আমার আজকে সারাদিন আপনার উপর ভীষণ রাগ হচ্ছিলো। চিনি না জানি না এমন একটা মেয়ে আমাকে sms এ কথা শুনিয়ে দিলো, এটা আমি কিছুতেই মানতে পারছিলাম না। কিন্তু এখন আপনার সাথে কথা বলে মনে হচ্ছে আমি আপনার প্রতি বিরূপ ধারনা পোষণ করেছিলাম।
- তাই?
- হুম।
- ওকে ভাইয়া, ফোন রাখতে হচ্ছে।
- ঠিক আছে। ভালো থাকবেন। goodbye
-bye
এটা সোয়েব একটা কাজ করলো? আবার ফোন দেবে কিনা জিজ্ঞাসা করলো না তো!!! তাহলে কি এখানেই শেষ?
নাহ, সোয়েবের মনের অবস্থা দেখে তা মনে হচ্ছে না। সোয়েব এখন হেঁটে চলেছে সোহেলের রুমের দিকে। কিন্তু সে সবসময় যেভাবে হাঁটে, ঠিক সেভাবে নয়। কেমন যেনো একটু দুলকি চালে। মুখে যেটা লেগে আছে, সেটাকে হাসি বলা যায় না বটে, কিন্তু হাসির ভূত বলা যায়।
সোহেলের রুমের দরজা দিয়ে ঢুকে সোয়েব দেখতে পেলো ছেলেটা টেবিল-চেয়ারে বসে মনযোগ দিয়ে হোমওয়ার্ক তৈরী করছে। ঘুরে যখন চলে আসছে, তখনই সোহেল বলে উঠলো, “আমি তো এই ঘরে, তাহলে তোকে কাতুকুতু কে দিলো?”
সোহেল ছেলেটা বরাবরই ভালো অভিনেতা। ও ঠিকই টের পেয়েছে সোয়েব ওর পিছনে দাঁড়ানো। সোহেলের দোষ দিয়ে কি লাভ? সোয়েব ও তো ওর বাবাকে এভাবে ধোঁকা দিয়ে পড়ার বইয়ের নিচে গল্পের বই রেখে পড়েছে।
সোয়েব উত্তর দিলো, “আমার কাতুকুতু নেই তুই জানিস না?”
-তাহলে এতো জোরে হাসলি কেনো? কাপড়ের মধ্যে তেলাপোকা ঢুকেছে?
- না, বিড়াল ঢুকেছে।
- তোকে এতো খুশি খুশি লাগছে কেনো? বিড়াল বের হয়নি এখনো?
সোয়েবকে একের পর এক গোল দিয়ে যাচ্ছে সোহেল। কি আর করা, সে এবার একটা কৃত্রিম ধমক দিয়ে বললো, “আগে হোম ওয়ার্ক শেষ কর, পরে কথা। আমি টিভি দেখবো"।
- লাভ নেই, আম্মু সিরিয়াল দেখছে। স্টার জলসা।
- আর বাবা?
- সে ও। আমি কি শুধু শুধু ইংলিশ লীগের খেলা দেখা বাদ দিয়ে পড়তে বসেছি?
- ওহহহহহহহহ, দেশে শান্তি নেই কোনখানে।
- তুই জানিস না, শান্তির জন্মের আগেই তার বাবা-মা দেশের জন্যে জীবন দিয়েছে? এই জন্যেই দেশে শান্তি নেই।
- হে হে। তুই পড়, আমি গেলাম আমার রুমে।
- কি করবি?
- কি আর, আমিও পড়ব। গল্পের বই।
সোয়েব চলে এলো নিজের ঘরে। বাড়িতে সময় খুব ভালো এবং বেশ দ্রুত কেটে যায়। শুধু সমস্যা হয় রাত আটটার পর থেকে। কারন এই সময় থেকে ওর বাবা-মা ইন্ডিয়ান বাংলা সিরিয়াল দেখা শুরু করেন। সোয়েব মাঝে মাঝে বোঝার চেষ্টা করে যে, কি এমন আকর্ষণ আছে এই সিরিয়াল গুলোতে। কিন্তু ভেবে ভেবে শুধু ভাবনার সাগরে হারিয়েছে, কোন সদুত্তর পায়নি।
কি করবে এখন? এতো তাড়াতাড়ি তো ওর ঘুম আসবে না। সবে মাত্র এগারোটা চল্লিশ। ফিওদর-দস্তয়েভস্কি ই একমাত্র ভরসা।
রুমে ফিরে এসে আবার বসলো বইটা নিয়ে। আজ ওর একটা কথা মনে হচ্ছে। নাতাশা ফিরে এসেছিলো ফিওদর এর কাছে। বইয়ের ভূমিকাটা ও অনেকবার পড়েছে। সেখানে পরিস্কারভাবে লেখা আছে, নাতাশা-ই পরবর্তিতে লেখকের স্ত্রী হয়েছিলো। কিন্তু কিভাবে, তা আর ফিওদর লিখে রাখেননি। বইয়ের শেষে নাতাশা দুঃখ প্রকাশ করেছে লেখকের ভালোবাসার প্রতি তার এই অবমাননার জন্যে। স্বীকার করেছে, “নিজের ভালোবাসার মানুষকে নয়, যে আমাকে ভালোবাসে, তাকে গ্রহন করলেই জীবনে সুখি হতে পারতাম। তোমাকেও সুখি করতে পারতাম”।
তারপরও লেখকের আকুতি উপেক্ষা করে ফিরে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। যদিও তখন নাতাশার কোন পিছুটান আর অবশিষ্ট নেই, ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে তার ভালোবাসার মানুষের সাথে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফিরে তাকে আসতেই হয়েছিলো। কি এমন ঘটনা যা নাতাশার মনকে ঘুরিয়ে দিয়েছিলো, তা বিশ্ববাসীকে না জানিয়ে ভীষণ অন্যায় করেছেন ফিওদর।
‘বঞ্চিত-লাঞ্চিত’ আবারো সমাপ্ত হয়ে গেলো। রাত আড়াইটা বাজে তখন। বইটা নামিয়ে রেখে সোয়েব চিন্তা করতে লাগলো তার এই সদ্য গত হওয়া দিনের কথা। মেয়েটা ভুল স্বীকার করেছে। তাতেই প্রমান হয়, সোয়েব যেমন ভেবেছিলো, মেয়েটা তেমন নয়। এখন সোয়েবের মনে একটা নতুন প্রশ্নের উদয় হয়েছে। দুপুরে যখন মেয়েটা ফিরতি sms এ সদুপদেশ (!) দিয়েছিলো, তখন সোয়েবের মাথা গরম হয়ে গিয়েছিলো। তাই তখন প্রশ্নটা মাথায় আসেনি। প্রশ্ন হলো, মেয়েটা কি সোয়েবকে অযৌক্তিক কোন কথা বলেছে? আজ যদি সোয়েবের ফোনে এভাবে কোন মেয়ের কল চলে আসত, সে কি মেয়েটার গল্প বিশ্বাস করত? কিংবা ফিরতি sms এ সে কি মেয়েটা যা লিখেছে তার থেকে কম কিছু লিখত?
উত্তর হচ্ছে ‘না', কিন্তু তারপরও মেয়েটা তার ভুল স্বীকার করেছে।
অর্থাৎ মেয়েটা সোয়েবকে হারিয়ে দিয়েছে।
এবং হারিয়ে দিয়ে হারিয়ে গেছে।
ভাবনার এই পর্যায়ে এসে সোয়েব আবিস্কার করলো, সে একটা টান অনুভব করছে। কেমন টান? টান অবশ্যই মেয়েটার প্রতি। তার মেয়েটার সম্পর্কে জানতে ইচ্ছা করছে। হতে পারে নিজের মনে পছন্দের মানুষের যে ছবি সে সংরক্ষণ করেছে এতোদিন, আজকের একটা ভুল সেই ছবিতে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, এই তো সে।
আবার, ছবির উপর জমে থাকা কুয়াশা সোয়েবের মনে এক ভীষণ দ্বিধা সৃষ্টি করেছে। দ্বিধা এই কারনেই যে, কুয়াশার অন্তরালে থাকাতে যাকে চিরচেনা মনে হচ্ছে, কুয়াশা সরে গেলে যদি তাকে অচেনা লাগে? এই দ্বিধা আর টানের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব সোয়েবের মনকে অস্থির করে তুলেছে। তবে টান অনেক শক্তিশালী। সে এই কুয়াশা সরাতে বদ্ধপরিকর।
শেষ পর্যন্ত কৌতুহল-ই জয়ী হলো। সোয়েব সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো, তাকে মেয়েটার সম্পর্কে জানতে হবে। হতে পারে সে ই সোয়েবের কল্পনার শিউলি। না ও হতে পারে, কিন্তু নিশ্চিত হতে গেলে তো আগে জানতে হবে।
কিন্তু কিভাবে? আবার ফোন দিলে কি মনে করবে মেয়েটা? হয়ত খারাপভাবে নেবে না। কিন্তু সোয়েব কি বলবে ফোন দিয়ে? সরাসরি বলবে নিজের ভালোলাগার কথা? তা কিভাবে হয়? যাকে চেনে না, জানে না, শুধু ফোনে কথা শুনে তো তাকে ভালোলাগার কথা বলা যায় না। এতে মেয়েটাও সোয়েবকে আবার সন্দেহ করবে না? আর একেবারে কিছু না জেনে একটা মেয়েকে ভালো লেগে যাওয়াটা সোয়েবের কাছে দূর্বল চিত্তের লক্ষণ বলে মনে হচ্ছে।
এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো কখন সে জানে না। কতক্ষণ ঘুমিয়েছে তা ও জানে না। ঘুম ভাংলো সকালে ওর মায়ের ডাকে।
- সোয়েব, এই সোয়েব, ওঠে নাস্তা কর। সকাল আটটা বাজে। আর কত ঘুমাবি?
- উফফ, মা, রাত্রে ৩ টার পর ঘুমিয়েছি, এখন ডাকছো কেনো?
- আমি কি তোকে বলেছি তিনটায় ঘুমাতে? কি করিস এতো রাত পর্যন্ত?
- ওহহহ হো, শান্তি নেই।
সোয়েবকে উঠে পড়তেই হলো। মা ডাকা শুরু করেছে, আর না উঠে উপায় নেই। ঘুম কম হওয়াতে মাথার মাঝে এক শূন্যতা ভর করে আছে। তার মাঝে গতকালের ঘটনাগুলো অর্ধ-বিস্মৃত স্বপ্নের মত ইতঃস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছে। গতকালের দিনটাও এভাবেই শুরু হয়েছিলো। প্রতিটা দিনই এভাবে শুরু হয়। কিন্তু সব দিন গতকালকের দিনটার মত হয় না।
ইতিমধ্যে আজকের দিনের কাজের একটা প্লান করে ফেলেছে সোয়েব। তাকে রাসেলের কাছে যেতে হবে। এই অবস্থায় একমাত্র রাসেলকেই সব কথা বলা চলে।
বিকালের আগে কোনভাবেই রাসেলের বাসায় যাওয়ার সময় বের করতে পারল না সোয়েব। সোয়েবকে দেখেই খুব জোরে হেসে উঠলো রাসেল।
- হো হো হো হো। তা কি খবর নয়া প্রেমিক?
- কে বলেছে আমি নয়া প্রেমিক?
- কেনো, আমি বললাম। তুমি নিশ্চয় ঐ মেয়াটার বিষয়ে কথা বলতে আসছো?
- তুই কিভাবে বুঝলি?
- এখন বিকাল চারটা বাজে। আর কিছুক্ষণ পরেই তোমার সাথে আমার মাঠে দেখা হওয়ার কথা। কিন্তু তোমার এতোটুকু দেরীও সহ্য হলো না। তাতেই বুঝলাম।
- তারমানে তোর বাসায় আসা আমার ভুল হয়েছে।
- দোস্ত, মাইন্ড খাইস না। একটু বস, আমি মাঠে যাওয়ার পথে তোর সব কথা শুনব।
সব কথা শুনে রাসেলকে কিছুটা বিরক্ত মনে হলো। এবং তার কথাতেও সেটা অপ্রকাশিত থাকলো না,
- এটা একেবারে পাগলামী। এভাবে না দেখে প্রেমে পড়ে যাওয়া কোন সুস্থ মানুষের লক্ষণ?
- কে বলেছে, আমি প্রেমে পড়েছি? কিন্তু প্রেমে না পড়লেও আমার তার বিষয়ে জানতে ইচ্ছা করছে।
- বেশতো, জানবি। কথা চালায়ে যা।
- কিন্তু সে যদি না এগিয়ে আসে?
- আগে দেখ না কি হয়। মনটা নিজের কাছে রেখে কথা চালায়ে যা।
- কিন্তু কি বলবো ফোন করে?
- এতো টেনশন করার কি আছে? স্বাভাবিক কথা-বার্তা বলবি।
- আমি ভাব জমানোর চেষ্টা করছি মনে করে যদি কথা বলতে না চায়?
- সেটা মনে করাই স্বাভাবিক। তবে তোর আচরন স্বাভাবিক থাকলে আর সমস্যা হবার কথা না। খেয়াল রাখিস যেন গলা কাঁপাকাঁপি শুরু না হয়। আত্মবিশ্বাসই আসল। শেক্সপীয়ারের ঐ ডায়লগটা মনে রাখিস, “একটা ছেলে একটা মেয়েকে পছন্দ করতে সময় নেয় কয়েক মুহূর্ত, কিন্তু ঘৃনা করতে সময় নেয় অনেক বেশী। আর একটা মেয়ে একটা ছেলেকে পছন্দ করতে সময় নেয় অনেক বেশী, কিন্তু তাকে ঘৃনা করতে সময় নেয় অনেক কম।”
শেষ উক্তি শুনে সোয়েবের মুখে হালকা লাজুক হালকা আনন্দের একটা হাসি ফুঁটে উঠলো। তাদের বন্ধুত্বের এই দীর্ঘ সময়কালে, আজকেই প্রথম রাসেল বই থেকে কোন একটা কথা তুলে আনছে আর সোয়েব বুঝতেই পারছে না এটা কোন বইয়ের কোথায় লেখা আছে। রাসেলতো এতো মনযোগ দিয়ে গল্প পড়ার মানুষ নয়। নিশ্চয় ফেসবুকের কোন পেজ থেকে মেরে দিয়েছে। হায়রে ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড………।
ঠিক এই মুহুর্ত থেকেই সোয়েবের মনে এক অস্বাভাবিক আনন্দ ভর করেছিলো। কেনো, তা সে জানে না। কতোখানি আনন্দ? সেটার ব্যখ্যা জীবনানন্দের সকল প্রেমের কবিতা একসাথ করেও দেয়া সম্ভব নয়। অন্তত সোয়েবের তাই ধারনা। সে শুধু বুঝতে পারছে, যখন সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এই মেয়েটাকে সে এমনি এমনি হারিয়ে যেতে দেবে না, তখন থেকেই এই আনন্দের সূচনা।
এটাই চুড়ান্ত সিদ্দান্ত। প্রথম যার বিষয়ে আগ্রহ জেগেছে, তাকে এমনি এমনি হারাতে দেয়া চলবে না। কিভাবে এই আগ্রহ মেটানো সম্ভব, সে বিষয়ে সোয়েবের কোন ধারনা নেই। সম্ভাব্য বিভিন্ন পন্থা মনে মনে চিন্তা করে সে সময় পার করতে লাগলো।
এবারও উদ্ধার করতে এগিয়ে এলো রাসেল। রাত সাড়ে এগারোটায় রাসেলের ফোনকল আসলো সোয়েবের ফোনে।
সোয়েব ফোন ধরে সম্পূর্ণ ‘হ্যালো’ বলেও শেষ করতে পারেনি, রাসেল চেচিয়ে উঠলো,
- ঐসব হ্যালো ট্যালো রাখ। মেয়েটারে ফেবুতে এড কর।
- কিভাবে? আমি তো নাম জানি না।
- নাম লাগবে না। ফোন নাম্বার থাকলেই হবে। Facebook for all mobile এপ্লিকেশনটা ইন্সটল কর তোর মোবাইলে। কপাল ভালো হইলে, ‘ফাইন্ড ফ্রেন্ডস ফ্রম মাই এড্রেসবুক’ অপশনটা কাজে লাগতেও পারে।
- বন্ধু, তুই তো জিনিয়াস
- ঐটা আমি জানি। দেখ কাজ হয় কিনা। পরে জানাস কি হইলো। খোদা হাফেজ
সোয়েবের উত্তরের অপেক্ষা না করেই ফোন কেটে দিয়েছে রাসেল। সেসব নিয়ে অবশ্য সোয়েবের পরে ভাবলেও চলে। আগের কাজ আগে। সে শতভাগ নিশ্চিত যে কাজ হবে। কারন একাউন্ট হ্যাক হবার ভয়ে বেশিরভাগ মানুষই এখন মোবাইল ফোন নাম্বার দিয়ে একাউন্ট ভেরিফাই করে।
সার্চ শেষ। অনেকগুলো নাম উঠেছে স্ক্রিনে। এরমধ্যে মেয়েটার নাম খুঁজে বের করতে হবে। আচ্ছা, মেয়েটার নাম কোন অক্ষর দিয়ে শুরু হবে? ‘S’ নাকি ‘N’ ? ‘T’ ও তো হতে পারে, কিংবা ‘A’ ?
হাত কাঁপছে সোয়েবের। পর পর নামগুলো দেখে যেতে থাকলো সে,
A চলে গেলো
B ও গেলো
C, D, E, F, একের পর এক চলে যাচ্ছে নামগুলো। কিন্তু অপরিচিত কোন মেয়ের নাম বা ছবি তো সে পাচ্ছে না।
J, K, L, M…
ইউরেকাআআ।
যথারীতি পাশের রুম থেকে সোহেলের প্রতিউত্তর, “প্রতিদিন রাতে তোর উপর কিসের ভর হয়?”
সোহেলের এসব রসিকতা কানে নেবার মত অবস্থায় তখন নেই সোয়েব। সে পেয়ে গেছে তার বহু আকাঙ্খিত ‘একাউন্ট নেইম’। আনন্দের অতিশয্যেই এই চিৎকার
‘মেঘবালিকা মোহনা’
দেরী না করে ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট পাঠিয়ে দিলো সে। তারপর তার মনে হলো, নিশ্চিত হতে হবে তো এটাই সেই একাউন্ট কিনা, যাকে খুঁজছে সোয়েব। সেটা করার জন্যে প্রথমে নাম্বারটা মুখস্থ করে নিলো সে। যদিও এটা সতর্কতামূলক, কেননা নাম্বার তার অনেক আগে থেকেই মুখস্থ হয়ে গিয়েছে। তারপর নাম্বার ডিলিট করে আবার সার্চ দিলো।
দুরু দুরু কাঁপছে বুক। সে জানে, এবার সে নামটা দেখতে পাবে না। তারপরও ভয়, যদি দেখতে পায়? তাহলে তো …..
Mamun আর Mehedi এর মাঝে আর কোন নাম নেই।
কোন সন্দেহ নেই, মেঘবালিকা ই সেই মেয়েটি।
কিন্তু কোন প্রোফাইল পিকচার নেই। কাভার ফটোতে এক নদীর তীরে সূর্যাস্তের ছবি।
এতো কষ্ট করে শেষে এই? প্রোফাইল ইনফরমেশন ও সব গোপন করা। কিছু আর করার নেই। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহন করার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এরপর থেকে সোয়েবকে কেনো জানি ফেসবুকে অনেক বেশী সময় ধরে অনলাইনে দেখা যাচ্ছে। একদিনতো সে বিকালে খেলতেই গেলো না।
ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট পাঠানোর পর ৪ দিন পার হয়ে গেছে। সোয়েব সারাদিন ফেসবুকে বসে থাকলেও সেই কাঙ্খিত Notification আসেনি। সোয়েবের সেই প্রাথমিক উচ্ছাসে ভাটা পড়েছে অনেকখানি। রাসেল এসেছে সোয়েবের কাছে। খোঁজ নিতে এসেছ, সোয়েব কেনো এই বিকেলবেলা খেলতে না গিয়ে ঘরে বসে আছে। সোয়েবের ঘরে ঢুকেই দেখলো, ছেলেটা কম্পিউটারের সামনে বসে আছে।
“কোন মেয়ের সাথে চ্যাট করিস?” জিজ্ঞাসা করলো রাসেল।
“কারো সাথে না। এমনি বসে আছি।“ সোয়েবের উত্তর।
“এমনি বসে থাকার পাবলিক তুমি না”, বলতে বলতে রাসেল বসে পড়ল সোয়েবের পাশে। “ঐ মেয়ের একাউন্ট পেয়ে গেছিস নাকি?”
ঠিক এই সময়েই স্ক্রিনের বামপাশে Notification icon এর উপর ‘1’ ভেসে উঠলো। ইদানিং notification দেখলেই সোয়েবের হার্টবিট মিস হতে থাকে। কাঁপা কঁপা হাতটা সে মাউসের উপর রাখার আগেই রাসেল মাউস কে নিয়ে গেছে কাঙ্খিত অবস্থানে, ক্লিক করে দিয়েছে আইকনের উপর……
সবথেক উপরের লাইন দু’টো,
পরিস্কারভাবে লেখা আছে,
‘মেঘবালিকা মোহনা’ Accepted your friend request. Write on her Timeline
চলছে, চলবে...........
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১১:৩৮