somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘ভালো’ ছবি

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ৪ নভেম্বর (২০১৩) দৈনিক প্রথম আলো তার পঞ্চদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘ঘটনাবহুল একটি বছর’ শিরোনামে একটি ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। তাতে ৪ নভেম্বর ২০১২ থেকে ৪ নভেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘটে যাওয়া কিছু নির্বাচিত ঘটনা কিছু নির্বাচিত ছবিসহ প্রকাশিত হয়েছে। ১২ পৃষ্ঠার ক্রোড়পত্রের ৮ নং পৃষ্ঠার আয়োজন ছিল ৫ মে’র ঘটনা নিয়ে, যে তারিখে সংঘটিত হয়েছিল আল্লাহর রাসূলের চরম অবমাননায় ক্ষুব্ধ, অপমানিত ও মর্মাহত জনতার এক স্বতঃস্ফূর্ত মহাসমাবেশ, মতিঝিলের ইতিহাসে স্মরণকালের বৃহত্তম গণসমাবেশ। আর রাতে সব আলো নিভিয়ে দিয়ে ঘটানো হয়েছিল এক ন্যক্কারজনক হত্যাযজ্ঞ। রাসূলপ্রেমিক নিরস্ত্র জনতার হৃদয় ও দেহের রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল মতিঝিল শাপলা চত্বরের চারদিকের রাস্তা।

ঐ ক্রোড়পত্রের এ পৃষ্ঠার আয়োজনে দুটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এক. রাতের বেলা পুলিশের কাঁদানে গ্যাস থেকে বাঁচার জন্য জ্বালানো আগুন এবং পুলিশ ও সরকার-দলীয় ক্যাডারদের সম্মিলিত আক্রমণের (রাইফেল ও

পিস্তলের গুলির) মুখে (যা ঐ ছবিতে নেই) কিছু মানুষের ঢিল ছোড়ার ছবি।

এ ছবিটির নিচে লেখা ‘৫ মে দিনভর তান্ডব’।

সম্প্রতি ‘তান্ডব’ শব্দটির বেশ ‘কুশলী’ ব্যবহার লক্ষ করা যাচ্ছে। নিরস্ত্র জনতার উপর পুলিশের নির্বিচার গুলি আর পুলিশের ছত্র-ছায়ায় ক্যামেরার সামনে পিস্তল উঁচিয়ে ক্যাডার বাহিনীর গুলি কিছুই তাদের কাছে ‘তান্ডব’ নয়। ‘তান্ডব’ হল পুলিশের কাঁদানে গ্যাস থেকে বাঁচার জন্য আগুন জ্বালানো। আর পুলিশ-ক্যাডারের গুলির মুখে কিছু মানুষের ঢিল ছোড়া।

যারা ঐ দিনের গণজোয়ার দেখেছেন তারা জানেন, শাপলা চত্বর ও তার আশপাশে সমবেত লক্ষ লক্ষ জনতা যদি সেদিন শুধু ঢিলও ছুড়তেন তাহলেও চারপাশের কোনো কিছুই অক্ষত থাকত না। কিন্তু ঐ সমাবেশ ছিল ঈমানদার রাসূলপ্রেমিক জনতার শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, যাঁরা চরম অপমান ও ক্ষুব্ধতার চাপা কান্না হৃদয়ে ধারণ করে কিছু শুকনো খাবার সাথে নিয়ে সেখানে সমবেত হয়েছিলেন।

দুই. রাতভর নানামূখী আক্রমণ-অভিযানের মুখে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে থাকা ভীত-সন্ত্রস্ত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের একাংশের শাপলা চত্বর ত্যাগ করার ছবি।

এবার আসা যাক ‘ভালো ছবি’ প্রসঙ্গে। এ ক্রোড়পত্রের ৫ই মে’র আয়োজনে দুটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছে। এর মধ্যে ‘ঠান্ডা ঘরে গরম খবর’ শিরোনামে প্রধান বার্তা সম্পাদক লাজ্জাত এনাব মহছি- লেখা নিবন্ধের একপর্যায়ে আছে- ‘‘জিয়া ইসলামের নেতৃত্বে আমাদের ফটোগ্রাফি টিম দিনরাত ঝুঁকি নিয়ে অন্তত ৫০০ ছবি তুলেছে। ... দুই বার্তা সম্পাদক শওকত হোসেন ও শাহেদ মুহাম্মাদ আলী, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক রাজীব হাসান ও তরুণ সহসম্পাদক ইমাম হোসেন সাঈদ মিলে আমরা ছবিগুলো বাছাই করে একটা মেকআপ দাঁড় করাই। রাত সাড়ে নয়টায় সম্পাদক আবার এলেন। সন্তুষ্ট হলেন না। ‘হলো না, ভালো ছবি কই, জিয়া কই।’ আবার ছবি ঘাঁটাঘাঁটি। সম্পাদক নিজেই সব ছবি দেখলেন, এরপর ছবি-মেকআপ ঠিক হল।’’

৬মের পত্রিকায় তাঁর এই ‘সুচিন্তিত’ ও ‘সুনির্বাচিত’ ছবিতে অবধারিতভাবেই ছিল না সেই রাতের নিহতদের ছবি বা আগের দিনের পুলিশ ও ক্যাডার বাহিনীর গুলিতে নিহতদের (তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ২২ জনের) কোনো ছবি। কিংবা পুলিশের ছত্র-ছায়ায় পিস্তলসহ ক্যাডারদের ছবি। সেদিনের পত্রিকায় প্রথম পাতার ছবি ছিল দিনের বেলায় পুলিশের কাঁদানে গ্যাস থেকে বাঁচার জন্য রাস্তায় জ্বালানো আগুন ও পুলিশের ছবি। তার উপর বড় করে শিরোনাম ছিল- ‘অবরুদ্ধ ঢাকায় ব্যাপক সহিংসতা’। যেন একমাস আগে ৬ এপ্রিল যাঁরা লাখ লাখ জনতার নজীরবিহীন শান্তিপূর্ণ সমাবেশ উপহার দিয়েছিলেন তাঁরাই আজ খামোখা জ্বালাও পোড়াও ভাংচুরেই মেতে উঠেছেন। আর এ সবকিছুই হয়েছে একতরফা। কেউ তাদের গায়ে ফুলও ছুড়ে মারেনি।

প্রথম পাতায় আরো ছিল শেষরাতে হাত উঁচু করে শাপলা চত্বর ত্যাগ করার ছবি। আর ২,৩,ও ২০নং পৃষ্ঠায়ও বেশ কিছু ছবি ছিল, কিন্তু সেদিনের কোনো নিহতের ছবি তাঁরা ছাপেননি। এমন কি স্টেজের পাশে রাখা চার ‘মরদেহে’র ছবি (যার কথা তাঁরা স্বীকার করেছেন এই ক্রোড়পত্রেও) সে ছবি ছাপানোরও পেশাগত দায় বা সৎ সাহস তাঁদের হয়নি। বিভিন্ন হাসপাতালে রাখা ‘মরদেহে’র কথা না হয় বাদই দিলাম। তাঁদের দক্ষ ফটোসাংবাদিকগণ হয়ত সে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি বা তাঁদের সংগৃহিত ৫০০ ছবির (পরে আরো তোলা ছবির) মধ্যে হয়ত সেদিনের কোনো নিহতের ছবি ছিল না। (অথচ এর চেয়ে সাধারণ বিষয়েও তাঁরা লাশের ছবি, সাথে নিহতের স্বজনের বিলাপের ছবি প্রায়ই ছেপে থাকেন।)

তাঁদের ফটোগ্রাফি টিম যে ‘দিনরাত ঝুঁকি নিয়ে’ ছবি তুলল, নিঃসন্দেহে তাতে ছিল ছোপ ছোপ রক্তের ছবি! রক্তমাখা নিথর দেহের ছবি। কিন্তু এগুলো ‘ভালো’ ছবি নয়, সুতরাং তা প্রকাশ করা যাবে না।

তা তারা প্রকাশ না করুন এতে আমাদের কোনো ক্ষোভ নেই। এ কথাগুলো লিখছি শুধু তাঁদের ‘সাংবাদিকতা’ ও ‘সম্পাদকীয় নীতি’ তাদেরই স্বীকারোক্তি থেকে জাতির সামনে তুলে ধরার জন্য । এতে সহজ-সরল মুসলিম জনতার সামনে ‘‘যা কিছু ভালো তার সঙ্গে...!’’ শ্লোগানটির প্রকৃত অর্থও পরিষ্কার হয়ে যাবে।

এ দেশের ইসলামপ্রিয়, নবীপ্রেমিক জনতা, বিশেষত নিরীহ, নীতিবান আলিমশ্রেণী যে একটি চরম বিদ্বেষী, ধর্মদ্রোহী ও সংকীর্ণ সাংবাদিকতার দ্বারা আক্রান্ত এ ‘ভালো ছবি’ তার সামান্য নযীর মাত্র।

ঐ দৈনিকে ছাপা আরেকটি ‘ভালো ছবি’র কথা না বললেই নয়। ই-প্রথম আলো আর্কাইভ (১৬-০৮-১৩) থেকে লেখার সময় ছবিটি আবার দেখলাম। ছবিটি ছিল ১৬ আগস্ট ২০১৩ শুক্রবারের প্রথম পাতার ছবি। এর একদিন আগে বর্বরতম গণহত্যা হয়েছিল মিসরের কায়রোতে, বৃহস্পতিবারেও ঘটেছে নির্মম হত্যাযজ্ঞ। পত্রিকাটি হাতে নিতেই চোখে পড়ল বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘নিহতের সংখ্যা ৫৫০ ছাড়িয়েছে’। কিন্তু উপরের ছবিতে নেই সেই ৫৫০ জনের কেউ! আছে কিছু পোড়া গাড়ি!

বুদ্ধিমান পাঠক নিশ্চয়ই এ ছবির তাৎপর্যটুকু বুঝতে পেরেছেন। সুতরাং ঐ ৫৫০ নিহতের প্রতি কিছুমাত্র বেদনাও অনুভব করবেন না। কারণ সামরিক শাসকের বুলেটের আঘাতে নিহত হলেও ওরা ‘জঙ্গি’। চরম রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হলেও ওরাই ‘সন্ত্রাসী’। ওরাই দেশে ‘তান্ডব’ চালায়।

‘ভালো’ ছবি নির্বাচনের এই যে সাংবাদিকতা একে কী বলা যায়? ‘ভালো’ সাংবাদিকতা?

হে আল্লাহ! সকল অনুযোগ শুধু তোমার দরবারে। আমরা অসহায়। তুমিই মুমিনের একমাত্র সহায়।

* পুনশ্চ : এই লেখাটি প্রেসে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে (০১-০১-১৪ তারিখে) একই দৈনিকে ‘স্বাগত ২০১৪ বিশেষ সংখ্যা’ নামে আরেকটি ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়। এতে ‘আলোকচিত্রে ২০১৩’ শিরোনামের অধীনে ছাপা একটি ‘ভালো ছবি’ পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ছবিটি ছিল হুবহু ৪ নভেম্বরের ক্রোড়পত্রে ছাপা দু’টি ছবির একটি। সেখানে ছবির নিচে লেখা ছিল ‘৫ মে দিনভর তান্ডব’, এখানে লেখা ‘হেফাজতে ইসলামের তান্ডব’। সেখানে বিশেষ প্রতিনিধি কামরুল হাসানের নিবন্ধে লেখা হয়েছে-‘ওই দিন মোট ২২ জন নিহত হন।’ আর এখানে ছবির নিচে লেখা হয়েছে, ‘সংঘর্ষে ১০ জনের মৃত্যু ঘটে, আহত হয় দুই শতাধিক।’

আগের পরের সংবাদ দু’টির মিল অমিলের রহস্য পাঠকই বিবেচনা করুন।

copied from here
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×