সাংবাদিক দম্পতি গোলাম মোস্তফা সরওয়ার ও মেহেরুন নাহার রুনি নির্মমভাবে খুন হওয়ার পর থেকেই জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন মিডিয়াগুলোর প্রতি বিশেষভাবে নজর দিচ্ছি।
আশা করেছিলাম এবিষয়ে অন্তত সংবাদপত্রগুলো সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিবে। কিন্তু দায়িত্বশীল আচরণ তো দূরের কথা, বেশীরভাগ পত্রিকাগুলোর কার্যক্রম রীতিমতো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। অবস্থাদৃষ্টে এমন মনে হয়েছে, একেক পত্রিকা ৮০০/১৪০০ শব্দের গল্প লিখে জাতীয় গল্প প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। তারা এতটাই সৃজনশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন যে, তাদের গল্প আষাঢ়ে গল্পকেও হার মানাচ্ছে।
মূল কথায় আসি, সাংবাদিক দম্পতি নিহত হওয়ার পর পরই পত্রিকাগুলো সংবাদের উৎসে বিভিন্ন সূত্র উল্লেখ করেছেন। তারা সূত্র ধরেই সাংবাদিক দম্পতিকে নানা নামে আখ্যায়িত করছেন। তারা খুনের ঘটনায় সবচেয়ে বেশী দায়ী করছেন রুনীকে। এক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন অজুহাত দাড় করিয়েছেন। তারা লিখছেন রুনীর পরকীয়া, অনৈতিক সম্পর্ক সহ আরো অনেক বাজে উপমা।
পত্রিকাগুলোর সংবাদ পড়ে এমন মনে হয়েছে যে, খুনের ঘটনায় রুনীই দায়ী, খুনীরা নয়।
আমার প্রশ্ন হলো, যে ঘটনাটি এখনো পুলিশের তদন্তাধীন এবং পুলিশ, র্যাব ও সিআইডি এটাকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সহিত পর্যবেক্ষণ করছে, সেখানে এঘটনার ভিকটিমদেরকে নানা নামে আখ্যায়িত করা কি সাংবাদিকতার পর্যায়ে পড়ে ?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দিয়ে একজন ব্যাক্তির কুরুচিপূর্ণ মতামত প্রকাশ করাকে কি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বলে ?
বেশীরভাগ পত্রিকা পড়ে আমার মনে হয়েছে, তাদের পরিবেশিত সংবাদগুলো তদন্তের কাজে বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারে। এমনকি খুনীরাও এটাকে কাজে লাগিয়ে পাড় পেয়ে যেতে পারে।
এখন আসি নাগরিক সাংবাদিকতায়। সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকান্ডের পর পরই ব্লগ গুলোতে নানা লেখা এসেছে, আসছে। এসব ব্লগ গুলোর অধিকাংশ পোস্ট সাগর-রুনীকে নিয়ে হলেও লেখা এতটাই কুরুচিপূর্ণ যে তা আঠোরো প্লাসে পৌছেছে। অতএব সহজেই অনুমেয় এসব ব্লগগুলোতে মডারেশনের দিকটাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে একেবারেই কম। যা খুবই দু:খজনক।
পরিশেষে বলতে চাই, যারা সস্তা জনপ্রিয়তায় বিশ্বাসী তারা অতীতেও এমনটি করেছে, এখন কেন করবেনা ? তবে একথা সত্য, এর পরিণতি মন্দের দিকেই ধাবিত হয়েছে। তাই সাংবাদিক ভাইয়া-আপুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই আসুন মিথ্যার বেসাতি ছেড়ে সত্য উদঘাটনে নিয়োজিত হই। এতে সংবাদপত্রের প্রতি মানুষের বিশ্বাস বাড়বে এবং আস্থা রাখবে সাংবাদিকের প্রতি।