৯০ সালের শেষ আর ২০ সালের শুরুর দিনগুলো ছিল খুবই সাদামাটা। বিদ্যুৎ ছিল না ঘরে ঘরে। আলোর জন্য সবার ঘরে শোভা পেতো হেরিকেন আর মেটে লম্প বা কুপি।
মা শীতের সকালে আর সন্ধ্যায় রান্না ঘরের বাইরে মাটির চুলায় রান্না করতো। সন্ধ্যায় রান্না করলে চুলার পাশে লম্প বা কুফি জালিয়ে রাখতো। চারদিকে বিদ্যুৎ এর কৃত্তিম আলো নেই তার বদলে কেরোসিন ল্যাম্পের আলো এক মোহময় পরিবেশ সৃষ্টি করতো।
তখন ভাত রান্না হতো মাটির হাঁড়িতে। একটা শরা বা ঢাকনা দিয়ে হাড়ি ঢেকে দিয়ে চুলায় আগুন দেয়া হতো। আগুনের জন্য চুলায় দেয়া হতো নাড়া, গবরের লাকড়ি আর তুষ। আগুনের তাপে ভাতের হাঁড়ি থেকে জল বাস্প আর ফ্যানা হয়ে বুঁদ বুঁদ আকারে বের হতো। মা তখন সরা টা উল্টিয়ে কাঁত করে দিতো হাড়ির মুখে। ভাতের ফ্যান বুঁদ বুঁদ আকারে সরাতে জমা হতো, আর মা সেটা মাঝে মাঝে গামলায় সংগ্রহ করতো। আমি চুলার পাশে বসে দেখতাম সে দৃশ্য। কত সুন্দর ছিল সে দৃশ্য বলে বোঝানো যাবে না। ফ্যান তেরী হচ্ছে তো হচ্ছেই, একটার সাথে আর একটা বুঁদ বুঁদ মিশামিশি করে তেরী হয়ে কাত করা শরাতে এসে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মা মাঝে মাঝে সংগ্রহ করা ফ্যানে লবন দিয়ে বলতো এই নে ফ্যান খেয়ে দেখ। আমি কোনো রকম কিছু না ভেবে খেয়ে ফেলতাম। বড়ই মধুর ছিল সে দিনগুলো।
আজ বাসায় কারেন্ট ছিল না৷ রাতে হাঁড়িতে ভাত তুলে দিয়ে বসে আছি। একটু পর ভাতের হাঁরিতে ফেনা তৈরী হয়ে বুঁদ বুঁদ হয়ে বের হচ্ছে। আমি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি বুঁদ বুঁদ হয়ে তৈরী হওয়া ফেনার দিকে। চোখের সামনে ভেসে উঠলো সেই সময়কার স্মৃতি। তখনকার দিনগুলো ছিল সত্যি মধুর। আধুনিকতা ছিল না তখন ছিল সরলতা। মানুষের ব্যবহারে কৃত্তিমতা ছিল না, ছিল মমতামাখা।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০২৩ দুপুর ১:৪৯