somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন একটু দেখি সঙ্গীত ও কাব্য সম্পর্কে ইসলামের মতামত কি? (২৫- ১০-২০১০)

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পবিত্র কুরআনে সূরা আশ-শেয়ারা(কবিগন) বলা আছে ;
এবং কবিদের সম্পর্কে বলা যায়, বিভ্রান্ত লোকেরাই তাদের অনুসরণ করে। তুমি কি দেখতে পাও না , তারা উপত্যকায় উপত্যকায় উদভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ায়, তদপুরি তারা মুখে যা বলে কাজে তা করে না। তবে যারা ইমান এনেছে , সৎকাজ করেছে এবং আল্লাহর স্বরনে অতি মাত্রায় তৎপর হয়েছে এবং অত্যাচারিত হলে নিজেদের আত্মরক্ষায় সচেস্ট হয়েছে তাদের সম্পর্কে ও কথা প্রযোয্য নয় । জুলম্বাজরা সত্ত্বরই জানতে পারবে , তাদেরকে কি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে।"
ইসলামের দৃষ্টিতে যে কবিতা হালাল তা এই আয়াত গুলোতে প্রমানিত। তার পর ও যারা বলবেন কবিতা হারাম তারা কি তা তারা বুঝে নিবেন আমি আর বলার প্রইয়োজন বোধ করি না।
আচ্ছা আপ্নারা কি জানেন কুরান ই আরব বিশ্বে তথা আরবী সাহিত্যের প্রথম গদ্যে রচিত বই। এর আগে যা ছিলো তা ছিলো কবিতা। আর আরবে কবিতাকে সুরে সুরে গানের মতো করে পড়া হতো। তাই গান না যায়েজ না।
১) কোন কোন কবিতায় রয়েছে প্রকৃষ্ট জ্ঞানের কথা।
২)কবিতা কথার মতোই। ভালো কথা যেমন সুন্দর ভালো কবিতাও তেমন সুন্দর এবং মন্দ কবিতা মন্দ কথার মতোই মন্দ।
৩)কবিতা সুসমঞ্জস কথামালা, যে-কবিতা সত্যনিষ্ঠ সে কবিতাই সুন্দর। আর যে কবিতায় সত্যের অপলাপ হয়েছে সে কবিতায় মঙ্গল নেই।
উপরের কথা গুলো আমাদের পথ প্রদর্শক মহানবী(সা) এর । মানে হাদিসের।
ইসলাম কখনো শ্রী সৌন্দর্য পরিচ্ছন্নতা বিরোধী নয়। বরং পক্ষপাতী। স্বয়ং রাসুল তার পক্ষ নেবেন তাই স্বাভাবিক। আর কবিতা ও সঙ্গীত তো সহোদর।
মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ(১৮৬৮-১৯৬৮) তাঁর সঙ্গীত সমস্যা নামক লেখায় লিখেছিলেনঃ
“আমরা দাবী করিয়া বলিতেছি – ত্রিশ পারা কুরানের মধ্যে এরুপ একটি আয়াতও খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না, যাহাতে সঙ্গীতকে নিষিদ্ধ বলিয়া ব্যাবস্থা দেয়া হইয়াছে। পক্ষান্তরে হযরত রাসুল করীম সঙ্গীত মাত্রকেই নিষিদ্ধ বা নাজায়েজ বলিয়া আদেশ প্রদান করিয়াছেন – এমন একটি ছহি হাদিছ আজ পর্যন্ত খুজিয়া পাওয়া যায় নাই।”
তিনি আরো বলেনঃ
“আমরা অকট্যরুপে প্রমান করিয়া দেখাইবো যে - ১) হযরত রাসুলে কারীম স্বয়ং সঙ্গীত শ্রবন করিয়াছেন ও তাহার অনুমতি এমনকি আদেশ প্রদান করিয়াছেন। ২)হযরতের বহু সাহাবী সঙ্গীত চর্চা করিতেন। ৩) এমাম আবু হানিফা, এমাম মালেক, এমাম শাফেয়ী, এমাম আহম্মদ বিন হাম্বল প্রভৃতি এমামগন সংগীতকে জায়েজ বলিয়া মনে করিতেন এবং নিজেরাও সঙ্গীত শ্রবন করিতেন। এমাম মালেক তো নিজেই একজন সঙ্গীত – শাস্ত্রবিশারদ পন্ডিত ছিলেন।”
আর যারা এই উধৃতি সম্পর্কে ফালাফালি করতে চান আমি তাদের বলবো মাওলানা সাহেব কি ছিলেন তা একটু পরে এসে ফালাফালি করো । নাইলে পিছলাইয়া হাড্ডি ভাঙ্গার সম্ভবনা আছে।
অনেক সাক্ষ্য পাওয়া যায় যে রাসুল (সা) দফ বাজিয়ে গান শুনতে ভালোবাসতেন। কুরানের ভাষ্য মতে রাসুল কবি ছিলেন না “আমরা তাঁকে (রাসুলকে) কবিতা রচনা শিক্ষা দিইনি এবং এরূপ কাজ তাঁর পক্ষে শোভনও নয়।” কিন্তু নবী (সাঃ) কখনো কখনো কবিতা থেকে উদ্ধৃতি দিতেন । খান্দকের বা পরিখার যুদ্ধের সময় এই কবিতাটি পাঠ করেছিলেনঃ

“আল্লাহর নামে শুরু করি এই কাজ
যাঁর অসিলায় পেলাম পথের দিশা
করি যদি কেঊ অন্যের ইবাদত
দুর্ভ্যগ্যের ভাগী হবো নিশ্চয়।
প্রভু আমাদের কত যে মহামহিম
আমাদের দ্বীন কতো উত্তম দীন।”

আমাদের চার খালিফার মধ্যে তিন জনই হজরত আবু বকর, হজরত উমর, হজরত উসমান কিছু কবিতা লিখেছেন। আল্লামা শিবলী নোমানীর মতে হজরত উমর ছিলেন তৎকালিন আরবী কবিতার শ্রেষ্ঠ সমলোচক। হজরত আলীর “দিওয়ান - ই - আলী” তো বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। রাসুলের কনিষ্ঠ কন্যা হজরত ফাতেমা নিজেও কিছু কবিত রচনা করেন। নাবী(সাঃ) ওফতের পর তিনি একটি শোক গাথা লিখেছিলেন যাতে তিনি বলেনঃ

“বৃষ্টি ব্যাতিত মাটির যে অবস্থা হয়,
তোমাকে হারিয়ে আমারও সেই অবস্থা হয়েছে।”

কবি লোবিদ এর একটি কবিতার প্রশংসা করেছিলেন রাসুল (সাঃ)। রাসুলের প্রামান্য জীবন চরিত “সিরাতে ইবনে হিশাম” এ দেখা যায় অনেকে রসূল কে কবিতা পেশ করেছেন ।
নাবী(সা।) প্রায়ই আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা এর কবিতা আবৃত্তি করতেন। এবং কবি স্বয়ং মাঝে মাঝে নবীকে কবিতা শুনিয়ে যেতেন। কা’ব ইবনে যুয়াহার নবীকে কবিতা শুনাতেন এবং নবী (সাঃ) ইসলাম গ্রহনের সময় তার কবিতা শুনে নবী তাঁকে তার পবিত্র চাদর উপহার দিয়েছিলেন।
হাসসান ইবনে সাবিত(রাঃ) নবীজীর এতো ঘনিষ্ঠ ছিলেন যে তাকে ‘সাইরুন নবী’বা ‘নবীজীর কবি’ বলা হতো।
নবীজীর ওফাতের সময় তিনি নবীকে নিয়ে একটি এলজি বা শোকগাথা রচনা করেছিলেন।

তার পর ও যদি কারো সন্দেহ থাকে ইসলামে গান কবিতা নিষিদ্ধ তা হলে আমার কিছু বলার নাই। আর বাদ্য সম্পর্কে বল্বো আরবের প্রায় পুরোটাই মরু। সেইখানে বাশ হয় না বেটারা বাশি বানাইবো ক্যমনে তার পর ও যা পাইছে তা দিয়াই তো দফ বানাইছে।

অশ্লীল ও কুরান বিরুদ্ধ না হলে ইসলামে না জায়েজ বলে সেইরকম কঠোর কিছু নাই।

আর শেষ করবো যখন হাজরত আলী বিভিন্ন রাজ্যের জন্য গভর্নর নিয়োগ করতেন তখন তিনি তাদের উপদেশ দিতেন যদি ওই স্থানের স্থানীয় সংস্কৃতি শিরকি না হয় তা হলে তোমরা তা বন্ধ করো না। আর ইসলাম তো মানবের জন্য প্রেরিত ধর্ম। যে ধর্মে কোন জাত প্রথা নাই। কোন বিবেধ নাই। এই ইসলামী সংস্কৃতি হতো আম্নুষের সংস্কৃতি। আর স্থানীয় সংস্কৃতিই হচ্ছে ইসলামের সংস্কৃতি। তবে তা যেন শিরকি আর অশ্লীল না হয়।
তবে সেই ধর্ম কে ক্যন আমরা কঠিন বানাচ্ছি। এতো প্যাচ গোছা লাগাচ্ছি? শুধু কি ব্যাক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য না কি মৌদুদিকে নবীর সমমর্যাদা(নাওযুবিল্লাহ) দেয়ার জন্য ?? উত্তর আপনাদের বিবেকের কাছেই রইলো।
আল্লহ আমাদের হেদায়েত দান করুন। আমি ইসলামি চিন্তাবিদ নই। আমি মৌলভি ও নই । আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের পরিধি থেকে আমি লিখেছি । ভুলত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন।
ধন্যবাদ
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×